মোঃ আতিকুল ইসলাম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া >>> বিলুপ্তির পথে নিরাপত্তার কাজে ব্যবহৃত দেশের নামকরা সরাইলের গ্রে- হাউন্ড কুকুর। বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের হাতেগোনা কয়েকটি বাড়ি’তে দেখা মিলে এ কুকুরের। নানা সময়ে গণমাধ্যমে এ কুকুর সংরক্ষণের বিষয়ে লেখালেখি হলে বরাবরই প্রশাসন থেকে দেওয়া হয় সংরক্ষণের আশ্বাস। তবে কার্যত কোনো পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হয়নি।সরাইলের বিখ্যাত এই কুকুরের উৎপত্তি নিয়ে নানা জনশ্রুতি থাকলেও একটি প্রচলিত কাহিনি ও উইকিপিডিয়া’র তথ্যমতে, প্রায় ২০০ বছর আগে সরাইলের জমিদার দেওয়ান মোস্তফা আলী এক ইংরেজ নাগরিকের কাছ থেকে একটি হাতির বিনিময়ে গ্রে-হাউন্ড কুকুর আনেন। পরবর্তীতে তিনি কুকুরটি সঙ্গে নিয়ে জঙ্গলে শিকার করতে কুকুরটি হারিয়ে যায় এবং ৬ মাস পর গর্ভবতী অবস্থায় ফিরে আসে। প্রসবের পর দেখা যায়, ছানাগুলো অন্য কুকুরের চেয়ে আলাদা, অনেকটা বাঘের মতো দেখতে। ধারণা করা হয়, জঙ্গলে বাঘের সঙ্গে মিলনের ফলে এই বিশেষ জাতের কুকুরের উৎপত্তি। তবে প্রকৃত ইতিহাস এখনো স্পষ্ট নয়।তবে মহান মুক্তিযুদ্ধে এ কুকুর পালন করেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীর সরাইল গ্রে হাউন্ড “ফিল্ড মার্শাল” একবার তার মনিবের জীবন রক্ষা করেছিল। সে সময় এটি দুজন পাকিস্তানি কমান্ডো সদস্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের প্রতিহত করেছিল। আহত অবস্থায় অন্যত্র পাঠানো হলেও, এটি তার মনিবকে খুঁজে বের করতে পালিয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত চার বছর পর তাকে খুঁজে পায়।আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিপ্রাপ্ত এ গ্রে-হাউন্ড পুরুষ কুকুরের উচ্চতা হয় ২৫-২৮ ইঞ্চি এবং ওজন ২৩-৩৩ কেজি এবং নারী কুকুরের উচ্চতা হয় ২৩-২৬ ইঞ্চি এবং ওজন হয় ১৮-২৮ কেজি। প্রতি ঘণ্টায় এই কুকুর প্রায় ৫৫ কিলোমিটার পর্যন্ত দৌড়াতে পারে। এছাড়াও তাদের গড় আয়ু থাকে ৮-১৪ বছর।শিকারের অবিশ্বাস্য দক্ষতা থাকার কারণে এই কুকুর গার্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয় সেনাবাহিনী এবং পুলিশে। দীর্ঘ কয়েক বছর আগে স্থান পেয়েছে র্যাব ডগ স্কোয়াডে।বিশেষজ্ঞ ও সচেতন মহলের মতে, বিশেষ জাতের এই কুকুর সংরক্ষণে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। তবেই টিকে থাকবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সরাইল গ্রে-হাউন্ড।
মন্তব্য