মোঃ সজিব উদ্দিন,জেলা প্রতিনিধি চুয়াডাঙ্গা >>>
১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে চুয়াডাঙ্গার আট বীর মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি যুদ্ধে শহীদ হন। দেশ স্বাধীনের পর আট শহীদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে ৫ আগস্ট স্থানীয় শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এ দিনটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অত্যন্ত মর্মান্তিক ও স্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে এদিনে জেলার আটজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান জামান, সাইফুদ্দিন তারেক, রওশন আলম, আলাউল ইসলাম খোকন, আবুল কাশেম, রবিউল ইসলাম, কিয়ামুদ্দিন ও আফাজ উদ্দীন সম্মুখ সমরে শহীদ হন।প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও দিবসটি পালনের লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন, জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করেছে।শনিবার (৫ আগস্ট) সকালে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় ৮ শহীদের গণকবর স্মৃতিসৌধে ফুলের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। এসময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড.কিসিঞ্জার চাকমা, পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা, দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর কবীর, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।এদিনে সম্মুখ সমরে বেঁচে ফেরা মুক্তিযোদ্ধা আসগর আলী ফটিক জানান, ৫ আগস্ট সকালে পাকিস্তানী দালাল কুবাদ খানের দুজন লোক চাতুরতার আশ্রয় নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে এসে খবর দেয়, রাজাকাররা তাদের ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের এ কথা বিশ্বাস করে মুক্তিযোদ্ধা হাসান জামানের নেতৃত্বে আমরা একদল মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্র নিয়ে বাগোয়ান গ্রামের মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিমে দু দলে বিভক্ত হয়ে অগ্রসর হতে থাকেন। নাটুদহ ক্যাম্পের পাকসেনারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠের আখ ক্ষেতে অ্যাম্বুস অবস্থায় লুকিয়ে থাকে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের অ্যাম্বুশের মধ্যে পড়ে যায়। এখানে পাকসেনাদের সাথে আমাদের প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ সময় আমরা মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের কৌশলে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে শত্রুকে আক্রমণ করতে থাকি। এ অবস্থায় যেকোনো একজনকে কাভারিং ফায়ার দিয়ে নিজ দলকে বাঁচাতে হয়। মুক্তিযোদ্ধা হাসান জামান সেই ফায়ারের দায়িত্ব নিয়ে শহীদ হন। এ সময় অন্য সাথীদের বাঁচাতে সক্ষম হলেও সম্মুখ সমরে শহীদ হন আটজন বীর। ওই সম্মুখ যুদ্ধে পাকবাহিনীর অনেক সদস্য হতাহত হয়। পরে জগন্নাথপুর গ্রামের মুক্তিকামী মানুষ রাস্তার পাশে দুটি কবরে চারজন করে আটজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মৃতদেহ দাফন করেন। কালক্রমে এই আটজন মুক্তিযোদ্ধার কবরকে ঘিরেই এ স্থানটির নামকরণ হয়েছে আটকবর।
মন্তব্য