রুবেল হোসাইন,কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার – কিশোরগঞ্জ >>> কিশোরগঞ্জ ঘিরে রয়েছে নানা ইতিহাস ঐতিহ্য। প্রাচীন ও আধুনিক স্থাপত্যের বিখ্যাত নানা দর্শনীয় স্থান রয়েছে এ জেলায়। প্রায় আড়াইশ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যের নাম কিশোরগঞ্জ পাগলা মসজিদ। পাগলা মসজিদের ইমরাত খুবই সুন্দর এবং নির্মাণশৈলীও বেশ চমৎকার। আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত পাগলা মসজিদটি ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনা হিসেবে পরিচিত।পাগলা মসজিদ শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীর কাছেই নয়, সকল ধর্মাবলম্বীর কাছে অত্যন্ত পবিত্র ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত। অনেকের বদ্ধমূল বিশ্বাস যে, কেউ সহি নিয়তে এ মসজিদে দান খয়রাত করলে তার ইচ্ছা পূর্ণ হয়।পাগলা মসজিদ বাংলাদেশের একটি প্রাচীন মসজিদ যা কিশোরগঞ্জ সদরের নরসুন্দা নদীর তীরে তিন তলা বিশিষ্ট একটি সুউচ্চ মিনার নিয়ে দাড়িয়ে আছে । মসজিদ কমপ্লেক্সটি ৩ একর ৮৮ শতাংশ জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত। ১৯৭৯ সালের ১০ মে থেকে ওয়াকফ্ স্টেট মসজিদটি পরিচালনা করছে।পাগলা মসজিদটি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার হারুয়া নামক স্থানে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত। জনশ্রুতি অনুসারে, কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক হয়বতনগর জমিদার বাড়ির ঈশা খানের বংশধর দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিল কদর পাগলা সাহেব নামক একজন আধ্যাতিক ব্যক্তি নরসুন্দা নদীর তীরে বসে নামাজ পড়তেন। পরবর্তীতে স্থানটিতে টিনের মসজিদ নির্মত হয়। জিল কদর পাগলার নামানুসারে মসজিদটি নামকরণ করা হয় পাগলা মসজিদ। অপর জনশ্রুতি অনুসারে, তৎকালীন কিশোরগঞ্জের হয়বতনগর জমিদার পরিবারের ‘পাগলা বিবি’র নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করা হয় ।পাগলা মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতসহ জটিল রোগীদের চিকিৎসায় এর অর্থ ব্যয় করা হয়। প্রাপ্ত দানের টাকা দিয়ে পাগলা মসজিদ এবং এর অন্তর্ভুক্ত মাদ্রাসা, এতিমখানা ও গোরস্থানের ব্যয় নির্বাহ করা হয় । জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, গরিব ছাত্র ও দুস্থদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। মসজিদটিতে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নামকরণ হবে পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স। প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। মসজিদে ৬০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন মসজিদ কৃর্তপক্ষ ।কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের অ্যাকাউন্টে জমা রয়েছে মোট ৮০ কোটি ৭৫ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭৬ টাকা। ব্যাংকে রাখা টাকার লভ্যাংশ থেকে ২০২৪ সালে ক্যানসার, ব্রেইন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি রোগ, প্যারালাইসিসসহ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ৫২৯ জন দরিদ্র ও দুস্থ ব্যক্তিকে চিকিৎসার অনুদান দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান ।পাগলা মসজিদটিতে রয়েছে ১১ টি লোহার দানসিন্দুক । প্রতি তিন থেকে চার মাস পর পর এই সিন্দুক খোলা হয়। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে এই মসজিদে দান করছেন। যারা দান করতে আসেন তারা বলে থাকেন, এখানে দান করায় নাকি তাদের মনের আশা পূরণ হয়। ফলে দিন দিন বাড়ছে দানের পরিমাণ।কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে শুধু টাকা নয়, টাকার পাশাপাশি সোনা-রুপা, বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়াও অনেক ধরনের চিঠি পাওয়া যায়। যা আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে পাগলা মসজিদের দান বাক্সে ফেলে রাখেন মানুষ।দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে ২০১৬ সালে পাগলা মসজিদ ইসলামি কমপ্লেক্সে নামকরণ করা হয়। মসজিদটি পরিচালনার জন্য ওয়াকফ প্রশাসন অনুমোদনকৃত একটি কমিটি রয়েছে। এই কমিটিতে জেলা প্রশাসক সভাপতি এবং কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সদস্য সচিব। এছাড়াও মসজিদের খতিবসহ স্থানীয় প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা এই কমিটিতে মসজিদ পরিচালনার কাজে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মন্তব্য