আনোয়ার হোসেন-কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ>>>
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে গ্রামবাংলার আদি লোকজ ঐতিহ্যর হরেক গুটি খেলা দেখা মেলে কালেভদ্রে।খেলার জগতে জটিল সমীকরণের মধ্য অন্যতম ছিল তিন পাইতা,বাঘ-বকরি,চকরচাল বা ১৬,৩২ ও ৬৮গুটির খেলা।একসময় অজপাড়া গাঁয়ের অশিক্ষিত,অর্ধশিক্ষিত মানুষ তাদের লোকায়েত জ্ঞানে এসব খেলার জন্ম দেন।গত ২০-২৫ বছর আগেও উপজেলার গ্রামীণ জনপদে অলস,অবসরে জমে উঠত খেলাগুলো।যা ছিল সব বয়সি পুরুষের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও মজার খেলা।আর প্রতিযোগীরা বুদ্ধি,ধৈর্য,কৌশল,মনোযোগী ও সতর্কতার সাথে খেলতো এ খেলা৷খেলার সমীকরণ ও চালবাজি ছিল অনেকটাই যুদ্ধ কৌশলের মত।তাই এ অঞ্চলের মানুষের কাছে এ রকম নামকরণ।বর্ষা কিংবা গরমে অলস দুপুরে রাস্তার মোড়ে,ছায়া নীবিড় গাছ তলায় কয়েক দলে বিভক্ত হয়ে খেলার আসর বসত।সেখানে উৎসুক পাড়াপড়শিরাও ভীড় জমাত।মূলত এ খেলায় আনন্দ বিনোদনের মাঝে বুদ্ধিমত্তার বহিঃপ্রকাশ পেত বেশি।কিন্তু আধুনিক যুগে সবার হাতে স্মাট ফোন।অলস,অবসরে তারা এখন মোবাইল ফোনে বুঁদ হয়ে সময় কাটাচ্ছে।এতে আদি লোকজ ঐতিহ্যর গ্রামীণ গুটি খেলা হারিয়ে যাচ্ছে।কালে ভদ্রে ৬৮গুটি খেলার দৃশ্য দেখা মেলে বাহাগিলী ইউপির উত্তর দুরাকুটি হাড়িবেচা পাড়া গ্রামে।এসময় দেখা যায়,দোকানের বারান্দায় ২প্রতিযোগী খেলায় মেতে উঠেছে।প্রতিযোগী বাচ্চু মিয়া বলেন,বর্ষা কিংবা অলস দুপুরে সময় কাটানোর একটি মজার ও বুদ্ধিমান খেলা হচ্ছে ৬৮গুটির খেলা।খেলার উপকরণ অতিসহজলভ্য।এর গুটি নিমের বিচি,ইট-পাথরের টুকরা,শুকনো ভাঙ্গা ডাল।গুটি দিয়ে ২জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে খেলা চলে।একে অপরের গুটির বর্ণ আলাদা হয়। যা উভয় খেলোয়াড় ৩৪টি করে মোট ৬৮টি গুটি থাকে।সাধারণত মাটিতে দাগ কেটে ৬৮গুটির ঘর বানানো হয়।চর্তুরভূজ আকৃতির ঘরের চারদিক জুড়ে থাকে ত্রিভূজ আকৃতির ৮টি ঘর।দান চালার জন্য ঘরের মাঝখানের দাগটি খালি রাখতে হয়।৪ কোনসহ এর বাইরে ত্রিভূজ ঘরে কেহ গুটি বসাতে পারবেনা।তবে চালের ব্যাপারে ভিতরে ঢুকতে পারবে।শুধু সারা ঘর জুড়ে চালাচালি অবস্থায় লম্বা বা কোনাকুনি দাগের একঘর থেকে আর একঘর ফাঁকা পেলে ডিঙ্গিয়ে গুটি খেতে পারে বা কাটা পড়ে।খেলায় একে অপরকে বন্ধ করার জন্য গুটি চালাচালি নিয়ে চলে চুল বিশ্লেষণ ও শ্বাসরুদ্ধকর প্রতিযোগীতা।চালের গরমিল হলে একের অধিক গুটি কাটা পড়ে।এভাবে প্রতিপক্ষের গুটির সংখ্যা কমিয়ে শূন্য করে ফেলতে পারলেই খেলা শেষ হয়ে যায়।আগে যুবক থেকে শুরু করে প্রবীণরাও এ খেলতো।বর্তমান প্রজন্মের কাছে অচেনা।ঐতিহ্যের মাঝে কাজের ফাঁকে এ খেলায় কিছুটা হলেও স্বস্তির ছোঁয়া খুঁজে পাই।কিশোরগঞ্জ বহুমূখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীর চর্চা শিক্ষক সোহেল রানা বলেন,দাবা খেলার গ্রাম্য সংস্করণ হল ৬৮গুটির খেলা।এটি জটিল সমিকরণের খেলা। যা ছিল গ্রামীণ বিনোদনের মাধ্যম।এগুলোর মধ্যে পল্লিজীবনের সৃজনশীল মনের ছাপ খুঁজে পাওয়া গেলেও বর্তমানে তেমন প্রচলন না থাকায় বিস্মৃতির অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে বসেছে।
মন্তব্য