রাঙ্গুনিয়া(চট্টগ্রাম)প্রতিনিধি >>> ট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৃথক ঘটনায় তিনদিনে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং দুই ব্যক্তির পরিত্যক্ত ও ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে চিকিৎসার কোনো ডিগ্রী অর্জন না করে নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন এমন প্রতারণার অভিযোগে এক ভূয়া ডিগ্রিধারী চিকিৎসকে লাখ টাকা জরিমানা করে চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদাল।
গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে মিনহাজুর রহমান রিয়াদ (২৩) ও শহীদুল ইসলাম (২২) দুই বন্ধু একসাথে মোটরসাইকেল যোগে গিয়েছিলেন মাইজভান্ডার দরবারে মাজার জেয়ারতে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে জেয়ারত শেষে ফেরার পথে রাউজানের গহিরা এলাকায় তাদের মোটরসাইকেলটিকে সামনে থেকে ধাক্কা দেয় একটি বেপরোয়া গতির ট্রাক৷ এতে রিয়াদের মৃত্যু হয়, অন্যদিকে শহীদুল ইসলাম আশংকাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শুক্রবার বিকালে রিয়াদের দাফন সম্পন্ন হলে রাতে খবর আসে এই দুর্ঘটনায় আহত শহীদুল ইসলামের মৃত্যুর খবর। একসাথে দুই তরুণের মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। রিয়াদ রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মধ্য ঘাগড়া সাতঘরিয়া পাড়া এলাকার মৃত মফিজ চৌধুরীর ছেলে। শহিদ ইসলামপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড পাহাড়তলী ঘোনার মুহাম্মদ খোরশেদ আলমের ছেলে।
একই তারিখে উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের গুচ্ছ গ্রাম ৩০নাম্বার বাড়ি থেকে সাইফুদ্দিন(৩২) নামের এক দিনমজুরের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত সাইফুদ্দিন একি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মুক্তিযোদ্ধা ইউছুপ নবীর বাড়ির পাশে শায়ের আহমদের পুত্র। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে জানা যায়। অন্যদিকে চিকিৎসার কোনো ডিগ্রী অর্জন না করে নিয়মিত দিচ্ছেন চিকিৎসাসেবা। এমন প্রতারণার অভিযোগে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা দোভাষী বাজার এলাকায় মোরশেদ আলম নামে এক ব্যক্তিকে এক লাখ টাকার অর্থদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। এসময় তার চেম্বারটিও বন্ধ করে দেয়া হয়।এদিন সকালে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারজান হোসাইন অভিযান চালিয়ে এই অর্থদন্ড দেন। অভিযানে সহযোগিতা করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল আলম রুবেল , চিকিৎসক ইসমাইল হোসেনসহ রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ। ভ্রাম্যমান আদালত সূত্রে জানা যায়, সরকারি নিয়ম-নীতি ছাড়া চিকিৎসার প্র্যাকট্রিস করছে, প্রতারণা করছে এমন অভিযোগে এই অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযুক্ত মোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে বেশ কয়েক বছর আগেও এই ধরণের অভিযোগ উঠলে তার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিলো উপজেলা প্রশাসন। এসময় তাকে অর্থদন্ড দেয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এমন কাজ থেকে বিরত থাকবেন মর্মে অঙ্গিকার নেয়া হয়েছিলো। এরপর কিছুদিন চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রেখে ফের একইভাবে চিকিৎসা চালিয়ে গেছেন তিনি। তবে এবার এসব কাজ থেকে বিরত থাকবেন মর্মে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে জানিয়েছেন।
নির্মাণাধীন একটি ভবনে কাজ করতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে মহিউদ্দিন(৪৫)নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নিহত মহিউদ্দিন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়মনগর ইউনিয়নের নজরেরটিলা কাজীবাড়ি এলাকার মরহুম আজিজুল ইসলামের ছেলে। নিহতের ভাই নিজাম উদ্দিন জানান, তার ভাই নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। শুক্রবার বাড়ির পাশের একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিলেন। কাজ করার একপর্যায়ে দুর্ঘটনাবশত ছাদ থেকে নিচে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন মহিউদ্দিন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালে নেয়া হলে দু’দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। সংসারে তাঁর স্ত্রী ও চার বছর বয়সের একটা কন্যা সন্তান রয়েছে।
গত রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর)একটি মুরগির খামার থেকে হাতে ছুরি ধরে থাকা অবস্থায় এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর নাম মো. দেলোয়ার হোসেন (৩৫)।
উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের খণ্ডলিয়াপাড়া গ্রামে নিহত দেলোয়ারের বাড়ি। সকাল সাড়ে আটটার দিকে একই এলাকার স্থানীয় মো. আজিম নামের এক ব্যক্তির মুরগির ফার্ম থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার ভোরে স্থানীয় লোকজন দেখতে পান, মুরগির খামারের চারপাশে দেওয়া তারের কাছে এক যুবকের লাশ পড়ে আছে। পরে তারা পুলিশকে খবর দিলে তারা লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।পুলিশ ও স্থানীয়দের ধারণা, চুরি ঠেকাতে মুরগির ফার্মের চারপাশে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত দেলোয়ার কী কারণে ওই খামারে ঢুকেছিলেন, তা জানা যায়নি। জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়া থানার উপপরিদর্শক উত্তম কুমার বলেন, ধারণা করা হচ্ছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন। লাশে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হবে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।
মন্তব্য