অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান থেকে অনবরত বোমা হামলার প্রেক্ষাপটে দ্রুত বদলে যেতে শুরু করেছে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি। একদিকে ইসরায়েলের পক্ষে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তাদের ওপর হামলা হওয়া মাত্রই বদলা নেওয়া শুরু হবে। অন্যদিকে ইরান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, তারা খোদ ইসরায়েলের হাইফা শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে দ্বিধা করবে না।
উত্তেজনার এই পরিস্থিতিতে ভুলবশত ইসরায়েলি ট্যাংক মিসরীয় সীমান্তে হামলাও চালিয়ে বসেছে এবং এতে অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। এদিকে হিজবুল্লাহর পাল্টা আক্রমণের ভয়ে ইসরায়েল তার লেবানন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সব নাগরিককে সরিয়ে নিয়েছে। সূত্র : রয়টার্স, আল জাজিরা, পার্স টুডে।
গতকাল সকালে গাজা থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৪ শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
বিমানগুলো রাতভর ঘনবসতিপূর্ণ জাবালিয়া শরণার্থী শিবির এবং গাজার আল-শিফা ও আল-কুদস হাসপাতালের কাছাকাছি অবস্থানসহ আবাসিক এলাকাগুলোতে বোমাবর্ষণ করেছে।
একটি খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েল রবিবার দিনগত সারা রাত দক্ষিণ লেবাননে এবং গতকাল প্রথম প্রহর থেকে গাজার মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে তীব্র বোমা হামলা চালিয়েছে। গাজার উত্তরের জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের কাছে একটি বাড়িতে বোমা হামলায় বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৪ হাজার ৬৫১ ফিলিস্তিনির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আরেক খবরে বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাদের একটি স্থল হামলা প্রতিহত করেছে ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। হামাসের সামরিক বাহিনী আল-কাসসাম ব্রিগেডস তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে এক সংক্ষিপ্ত ঘোষণায় বলেছে, তারা গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি সেনাদের একটি অগ্রবর্তী দলকে পিছু হটে যেতে বাধ্য করেছে। গাজার খান ইউনিস থেকে একজন গণমাধ্যমকর্মী বলেছেন, সীমান্ত এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী ছোটখাটো স্থল হামলা শুরু করেছে এবং এ অবস্থায় হামাসের পাল্টা হামলা প্রমাণ করছে, তারাও ইসরায়েলি আগ্রাসন প্রতিহত করার যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছে।
এদিকে হিজবুল্লাহর ভয়ে লেবানন সীমান্তের আরও ১৪টি গ্রাম খালি করছে ইসরায়েল। খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনারা যখন অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন তারা হিজবুল্লাহর হামলা থেকে বাঁচাতে ইসরায়েলের উত্তরে লেবানন সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে নতুন করে এরই মধ্যে বহু বেসামরিক নাগরিককে সরিয়ে নিয়েছে।
এরপর তারা লেবানন সীমান্তবর্তী আরও ১৪টি গ্রাম খালি করার কাজ শুরু করেছে। এর আগে গত সপ্তাহে লেবানন সীমান্তবর্তী ২৮টি গ্রামের সব মানুষকে দক্ষিণের দিকে সরিয়ে নেয় তেল আবিব।
এর আগেও গাজা সীমান্তবর্তী আশকেলন ও সাদেরুতসহ বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে ইসরায়েল সরকার। এর ফলে প্রায় ১ লাখ ইসরায়েলি অভ্যন্তরীণভাবে শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে। আরেক খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গত রবিবার লেবানন সীমান্তে মোতায়েন সেনা অবস্থান পরিদর্শনে গিয়ে বলেছেন, ‘আমরা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে এত শক্ত আঘাত হানব যে, তা তারা কল্পনাও করতে পারবে না। ’ অন্যদিকে হিজবুল্লাহও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, ‘ইসরায়েলি বাহিনী অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নির্বিচার হামলা বন্ধ না করলে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে হামলা আরও শক্তিশালী করা হবে। ’
গণমাধ্যমগুলো বলছে, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এখন পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে সেখানে ‘টার্মিনাল হাই অ্যালটিটিউড এরিয়া ডিফেন্স’ বা থার্ড প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন। এ ছাড়াও পারস্য উপসাগর অঞ্চলে অতিরিক্ত ‘প্যাট্রিয়ট’ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও মোতায়েন করা হবে বলে পেন্টাগন জানিয়েছে। ওই অঞ্চলে মার্কিন সেনাদের ওপর সাম্প্রতিক হামলার জবাবে এসব মোতায়েন করা হচ্ছে। গণমাধ্যমগুলোর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে ৷
মন্তব্য