মোঃ সজিব উদ্দিন,জেলা প্রতিনিধি চুয়াডাঙ্গা >>>
কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা গরু অবিক্রিত থাকায় তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চুয়াডাঙ্গার খামারিরা। কোরবানীর জন্য চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় হাট ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাটে তোলা হয় চুয়াডাঙ্গার লাখো পশু। এর মধ্যে বেশ কিছু গরু অবিক্রিত থেকে যায়। সেসব গরু বিক্রি না করেই ফেরত নিয়ে আসতে বাধ্য হয় খামারিরা। কিন্তু পালন করা এসব গরু নিয়েই বিপাকে রয়েছেন তারা। বর্তমানে গরু লালন-পালন ব্যয়বহুল হওয়ায় আগামী ঈদ পর্যন্ত সেগুলো পালন নিয়ে আরও বিপদে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা খামারিদের।বেশিরভাগ খামারিরা মনে করছেন, গো-খাদ্যের দাম আগামীতে আরো বাড়বে। এতে মাঝারি ধরনের খামারিদের টিকে থাকায় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন। এছাড়া করপোরেট ব্যবসায়ীদের গড়ে তোলা বড় ডেইরি খামারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রান্তিক খামারিদের অবিক্রিত গরু নিয়ে টিকে থাকাও কঠিন চ্যালেঞ্জ।
আবার অনেক খামারিরা বলছেন, যারা গরু বিক্রি করতে পারেননি, উল্টো ঢাকায় গিয়ে বাড়তি কয়েক লাখ টাকা খরচ করে ফেলেছেন, তাদের এখন গরু পালন করতেই হিমশিম খেতে হবে। কারণ আগের ঋণ পরিশোধ না করলে নতুন ঋণও পাবেন না। অন্যদিকে গো-খাদ্যের দাম ব্যাপক চড়া। সব মিলিয়ে তারা এখন চোখেমুখে এখন অন্ধকার দেখছেন।আলমডাঙ্গার খামারি বদর উদ্দীন জানান, ঢাকার গাবতলি গরুর হাটে ১৯টি গরু নিয়ে গিয়েছিলেন। এরমধ্যে ১৭টি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন। বাকী ২টি বড় গরু বিক্রি করতে পারেননি। তিনি জানান, প্রথমে ১১ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছিলো। তখন বিক্রি করেননি। পরে আর কোনো ক্রেতা কোনো দাম বলেনি। বাধ্য হয়েই গরু ২টি ফেরত নিয়ে এসেছেন। বাইরে থেকে কোনো ক্রেতা না আসলে আগামী ঈদ পর্যন্ত ঢাকা থেকে ফেরত আসা এই গরুগুলো পালন করতে হবে। ঈদ উৎসবে লাভের আশায় পালন করা গরু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন বদর উদ্দীনের মতো অনেকে।
আলমডাঙ্গার খাদিমপুর ইউনিয়নের মাজহাদ গ্রামের খামারি হাজ্জাজ বিন তাহাজ জানান, তিনি ১৭টি গরু নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলেন। মাত্র ৭টি গরু বিক্রি হয়েছে। ১০টি গরু ফেরত এনেছেন। তিনি জানান, এ কুরবানিতে তার প্রচুর লোকসান হবে। গরুগুলো গড়ে আড়াই লাখ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মণিরামপুর গ্রামের খামারি মাহফুজ বলেন, আমার খামারে ৬টি বড় গরু ছিলো। যে গরুগুলোর দাম ৪ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা। আশানুরুপ দাম না ওঠায় তিনি গরু গুলো বিক্রি করতে পারেননি। আগামী ঈদ পর্যন্ত পালন করলেও লাভ হবে না।আর এক খামারি মকবুল হোসেন ৩১টি গরু নিয়ে রাজধানীর আফতাবনগর হাটে গিয়েছিলেন। ঈদের আগের দিন মাত্র ৭টি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন। উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় বাকি ২৪টি গরু তিনি বাড়ি ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন।খামারিরা জানান, ১ বস্তা ক্যাটল ফিডের বর্তমান দাম ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, যা গত বছর বিক্রি হতো ১ হাজার ৫০ টাকায়। এখন ১ বস্তা গমের ভূষি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায়, যা পূর্বে বিক্রি হতো ১ হাজার ২শ ৫০টাকায়, ১ বস্তা ভূট্টার গুড়া বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। যা পূর্বে বিক্রি হতো ৮শ থেকে ৯শ টাকায়। ১ বস্তা চালের কুড়া বিক্রি হচ্ছে ৭শ ৫০টাকা থেকে ৮০০ টাকায়, যা আগে পাওয়া যেতো ৫০০ টাকায়। ১ বস্তা খৈল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫শ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকায় যা আগে বিক্রি হতো সাড়ে তিন হাজার টাকায়।সুতরাং গো-খাদ্যের দাম বেশি বলেই দিশেহারা অবস্থা চুয়াডাঙ্গার চাষীদের।
মন্তব্য