আনোয়ার হোসেন কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী) প্রতিনিধি:>>>>
আগেরকার দিনে গ্রাম-বাংলার কৃষিতে হরেক ফসল বপন,পাতলা করণ,বীজতলা তৈরি,আগাছা নিড়ানির কাজের অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্র ছিল ব্যাদা।যা কৃষির গোড়াপত্তন থেকে পূর্বপুরুষরা চিন্তা চেতনার ফসল হিসেবে আবিষ্কার করেছিল এ যন্ত্র।বর্তমান আধুনিক যন্ত্র সভ্যতার যুগে বীজতলা থেকে শুরু করে রোপণ-বপন,কর্তন সব কিছুই করা হচ্ছে যান্ত্রিকরণে।আগাছা পরিষ্কারে ব্যবহার করা হচ্ছে কীটনাশক নামের বিষফোঁড়।এতে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে আদি লোকজ ঐতিহ্যর ব্যাদা হারিয়ে যাচ্ছে।ব্যাদা কাঠ-বাঁশের তৈরি দাঁতওয়ালা আঁছড়া যন্ত্র বিশেষ। ৪ হাত লম্বা মোটা শাল,কাঁঠাল গাছের জমাট বাধা গোলাকার কাঠ নিয়মিত দূরত্বে ১০/১২টি ছিদ্র করে সেখানে আধা ফুট লম্বা বাঁশের (ফলা) সুঁচালো টুকরা অংশ অগ্রভাগে ঢুকিয়ে প্যানা বা খোজ দিয়ে শক্ত করে আটকানো হয়।এরপর মাঝ বরাবর আর একটি ছিদ্র করে লাঙ্গলের ন্যায় ইশ ও মুটিয়া সংযুক্ত করে তৈরি করা যন্ত্রের নাম ব্যাদা।যা আঞ্চলিক ভাষায় এ নামে পরিচিত।কৃষক ব্যাদার ইশ গরুর হালের জোয়ালে বেঁধে বিভিন্ন বপনকৃত শস্য ছিটিয়ে পরিমানমত বীজ মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ার কাজে ব্যবহার করত। পূর্ব পুরুষের বিনামূল্যের এ উদ্ভাবন কৃষিকাজের জন্য ছিল সামঞ্জস্যপূর্ণ।কিন্তু কালের বিবর্তনে পরিবেশ বান্ধব এ সনাতন চাষ পদ্ধতি আর চোখে পড়ে না। কালেভদ্রে এ সনাতনি কৃষি যান্ত্রিকরণের দেখা মেলে রনচন্ডি ইউপির চতুর পাড়া গ্রামের প্রবীণ কৃষক আজিজার রহমান বীজতলার জমিতে।এ সময় দেখা যায়.হালের গরু দিয়ে ব্যাদার সাহায্য বপনকৃত আগাম আমন ধানের বীজতলা প্রস্তুত করছেন।এর ব্যবহার আজও ধরে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিবলেন,বীজতলা ,পাট ,সরিষা,কাউন,বোনা ধান এসব বীজ হালচাষ কিংবা ট্রাক্টর দিয়ে চাষাবাদ করলে মাটির গভীরে গিয়ে পচে নষ্ট হয়।সমান ভাবে চারাও গজায়না।চারা গজিয়ে উঠতে সময়ও লাগে বেশি দিন।তাই সঠিক সময়ে সমানভাবে হুষ্টপুষ্ট ফসল চাষে এটি অতুলনীয় কৃষিযন্ত্র।পাশাপাশি এসব ফসল ঘন থেকে পাতলা করণসহ আগাছা পরিষ্কারে এর জুড়ি নেই।এতে শ্রমিক সাশ্রয় হয়। যা এর গুরুত্ব বুঝে হালের গরু ও এর ব্যবহার আজও ধরে আছি।এখন মানুষ ট্রাক্টর পাওয়ারটিলার দিয়ে এসব ফসল চাষাবাদ করছে।আগাছা দমনে বাজারে এসেছে নানা হার্বিসাইড।এতে এর ব্যবহার প্রায় সবাই ভূলেই গেছে।বিকল্প হিসেবে কৃষক আগাছানাশক বিষ নামের দস্তা প্রয়োগ,জমিতে স্প্রে করাসহ সারের সঙ্গে মিশিয়ে ছিটিয়ে দিয়ে আগাছা দমন করছেন।এসব সুবিধার কারণে মানুষ বিষ ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে।এতে আমরা প্রকৃতির উপকারি বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদ হারিয়েছি।বিশেষ করে ফসলের পোকা খাওয়া পাখি,কেঁচো,সাপ,ব্যাঙ,শামুক,নানা জলজ পোকা,দেশীয় ছোট মাছ বিলুপ্তির পথে।এখন আমরা আমাদের মাটির যে ক্ষতি করছি,তা স্বাভাবিক অবস্থায় আদৌ কোন দিন ফিরবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। আদিকাল থেকে এ যন্ত্রের সাথে কৃষকের নিবিড় সম্পর্ক।কিন্তু এর শেষ ব্যাবহার টুকু হারিয়ে যাচ্ছে। বাহাগিলী ইউপির উঃ দুরাকুটি পশ্চিম পাড়া গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি জরিয়াল হোসেন বলেন,এক সময়ে হালের গরু,লাঙ্গল, জোয়াল,মই,ব্যাদা ছিল কৃষি কাজের একমাত্র উপজীব্য।কিন্তু কৃষিতে পরিবর্তন আসায় বাপদাদার রেখে যাওয়া ঐতিহ্য আজ বিলিন।আধুনিক যন্ত্রসভ্যতা আমাদের জন্য আশীর্বাদ।কিন্তু গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক আমাদের পূর্বপুরুষের তৈরি কৃষি যন্ত্রপাতি সভ্য সমাজ ও ভবিষ্যৎ জাতিকে চেনার জন্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
মন্তব্য