মোঃ জয়নাল আবেদীন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধিঃ
লোকসানের কারণে দীর্ঘ ২১ বছর বন্ধ থাকার পর বেসরকারি উদ্যোগে চালু করা হয়েছে ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা। বৃহস্পতিবার (৩ আগষ্ট) সকালে এ রেশম কারখানার উদ্বোধন করেন ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন।ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, একসময় ঠাকুরগাঁওয়ের রেশম শিল্পের বেশ চাহিদা ছিল দেশ ও বিদেশে। কারখানাটি চালুর মাধ্যমে রেশমের সুদিন আবারও ফিরে আসবে বলে আশা করছেন তিনি।রেশম বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস ১৯৭৫-৭৬ সালে ঠাকুরগাঁওয়ের গোবিন্দনগর এলাকায় ৩ দশমিক ৩৪ একর জমির ওপর এই রেশম কারখানাটি স্থাপন করেন। লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ১৯৮১ সালের ৩০ জুন রেশম বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয় কারখানাটি। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার নতুন যন্ত্রপাতি কিনে কারখানাটির আধুনিকায়ন করেন। লোকসান থাকলেও তখন ভালোই চলছিল কোম্পানিটি। কিন্তু মূলধন না থাকার কথা বলে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর সরকার কারখানাটি বন্ধ করে দেন ।ঠাকুরগাঁও রেশম বোর্ডের পরিচালক বলেন, বর্তমানে কারখানাটির ২০টি রিলিং মেশিন, ১৬টি হ্যান্ডলুম, ২০টি পাওয়ার লুমসহ প্রায় সব যন্ত্রাংশ সচল রয়েছে।ওই সময় কারখানায় কর্মরত ১৩৪ জন স্থায়ী শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। পাশাপাশি বিপাকে পড়েন আরও প্রায় ৫ হাজার পলুচাষি (যাঁরা তুঁতগাছ চাষ করতেন)। সে সময় ঠাকুরগাঁওবাসী আন্দোলন করেও কারখানাটি চালু করতে পারেনি। বাজার না পেয়ে এ অঞ্চলের পলুচাষিদের অনেকেই চাষ কমিয়ে দিতে বাধ্য হন। এরপর বিভিন্নভাবে উদ্যোগ নেওয়া হলেও কারখানাটি আর চালু হয়নি।২০১৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোঃ আবদুল আওয়াল কারখানাটি চালুর যৌক্তিকতা দেখিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ১১ সদস্যের একটি দল কারখানাটি পরিদর্শন করেন। তারা কারখানার যন্ত্রপাতি পরিদর্শন করে কারখানা চালুর উপযোগী কি না, তা পর্যবেক্ষণ করেন। পরবর্তী জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিমও মন্ত্রণালয়ে কারখানা চালুর যৌক্তিকতা তুলে ধরে চিঠি দেন। ২০১৯ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে তিনি বিষয়টি উপস্থাপন করেন তিনি। পাশাপাশি সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে কারখানাটি চালু করার ব্যাপারে প্রদক্ষেপ নেন।রেশম কারখানাটি চালু করার বিষয়ে ২০২১ সালের ২২ মার্চ জেলা প্রশাসকের সভা কক্ষে এক মতবিনিময় সভা হয়। সেখানে রেশম বোর্ডের তৎকালীন মহাপরিচালক মুহাম্মদ আবদুল হাকিম বলেন, বোর্ডের জনবল সংকট রয়েছে। যত দিন জনবল নিয়োগ না হবে, তত দিন কারখানটি চালাতে পারবেন না। এ জন্য তাঁরা মাসিক বা বার্ষিক ফি নিয়ে ব্যক্তি খাতে দিতে চান কারখানাটি। এই আলোচনার পর স্থানীয়ভাবে কয়েকজন কারখানাটি পরিচালনার আগ্রহ দেখান। কিন্তু পরে সেই উদ্যোগ সেখানে থেমে যায়। অবশেষে করাখানাটি বেসরকারি পর্যায়ে বরাদ্দের জন্য দরপত্র আহ্বান করেন রেশম বোর্ড। অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য ৫ বছর মেয়াদে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে কারখানা পরিচালনার সুযোগ পায় ঠাকুরগাঁওয়ের সুপ্রিয় গ্রুপ নামে এক প্রতিষ্ঠান।সুপ্রিয় গ্রুপের চেয়ারম্যান বাবলুর রহমান বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের রেশন কারখানার সুনাম ছিল সারাদেশে। সেই সুনামকে ফিরে আনতে কাজ করার চেষ্টা করছেন তার প্রতিষ্ঠান।বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রেশম কারখানাটি উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন ছাড়াও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান, পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী, সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়, আঞ্চলিক রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপপরিচালক মাহবুব উল হক, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অরুণাংশু দত্ত প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মন্তব্য