নিজস্ব প্রতিবেদক
সীতাকুণ্ড পৌরসদরে অবস্থিত সীতাকুণ্ড জেনারেল (প্রাইভেট) হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলা অথবা ভুল চিকিৎসার কারণে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটায় সীতাকুণ্ড জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ ও থানায় মামলা দায়েের প্রস্তুুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় প্রসব বেদনা ওঠলে মিরসরাইয়ের ১৪ নং হাইতকান্দি ইউনিয়নের বালিয়াদি গ্রামের শাহনেওয়াজের স্ত্রী ফারিয়া আক্তার বর্ষা (২০) কে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির ১ ঘন্টা পর নরমাল ডেলিভারিতে একটি নবজাতক পুত্র সন্তান প্রসব করেন ফারিয়া। সন্তান প্রসবের পর মা ও নবজাতক দুজনই সুস্থ ছিলেন। বেলা দশটা ৩০ মিনিটের দিকে প্রসব ওয়ার্ড থেকে হাসপাতালের নার্সরা ফারিয়াকে স্যালাইন দেয়ার কথা বলে অন্য কক্ষে নিয়ে যান। স্যালাইন দিয়েই ফারিয়ার শরীরে গাইনী চিকিৎসক একটি ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশন পুশের ৩০ মিনিট পর তার মৃত্যু হয়। এদিকে মৃত্যুর বিষয়টি বুঝতে পেরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে শহরে রেফার করে। এসময় ফারিয়াকে চট্টগ্রামের ইপিকে ভর্তি করা হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ২ ঘন্টা আগে ফারিয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান। বর্তমানে বালিয়াদি গ্রামে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। প্রসূতির মামা মোঃ নুরুল মোস্তফা পলাশ দৈনিক সাঙ্গুকে বলেন, তারা (জেনারেল) আমাদেরকে মৃত্যুর কারণ জানাতে পারেনি। কিন্তুু পরবর্তীতে জানিয়েছেন খিঁচুনী ওঠার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। আমরা শহরে নিয়ে যাওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয় জেনারেল হাসপাতালে। অথচ তারা বিষয়টি আমাদের বলেনি। নরমাল ডেলিভারি ও ডেলিভারির ২ ঘন্টারও বেশি সময় পরে কিভাবে সুস্থ প্রসূতির মৃত্যু হয়? তাদের অবহেলা রয়েছে চিকিৎসায়। তারা সঠিকভাবে রোগীকে চিকিৎসা দেননি। আমরা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ওসিকে পুরো বিষয়টি আমরা জানিয়েছি। আগামীকাল আমরা চিকিৎসক ও হাসপাতালের এমডিকে আসামী করে মামলা দায়ের করব। এদিকে চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করে সীতাকুণ্ড জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মোঃ মাঈনুদ্দিন বলেন, এসব বিষয়ে আপনি ডাক্তারের বক্তব্য নিলে ভালো হবে। কেসটি ডাক্তার মাহবুবা আক্তার বর্ণা ও ডাক্তার সাহেদ সম্পূর্ণ করেছে । রোগীরা ডাক্তারের তত্ত্বাবধানেই থাকে। ফোনে সবকিছু বলা যায় না। আমার বক্তব্য হচ্ছে রোগী ডেলিভারির পর তার অবস্থা ভালোই ছিল। চিকিৎসকরা তাকে সঠিক চিকিৎসা দিয়েছেন। কিন্তুু হঠাৎ করে রোগীর খিঁচুনি ওঠে যাওয়ায় তার পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায়। তখনি আমরা ৫ মিনিটের মধ্যে তাকে রেফার করি। আমাদের হাসপাতালে কেন রোগীর মৃত্যু হবে? রোগীর পরিস্থিতি খারাপ হলে আমাদের হাসপাতালে রাখার কোন সুযোগ নেই। তবে চিকিৎসকের বক্তব্য নেয়ার পরামর্শ দিলেও তিনি চিকিৎসক মাহবুবা আক্তার বর্ণার মুঠোফোন নম্বর প্রতিবেদককে প্রদান করবেন বলে করেননি। এসময় তিনি বিষয়টি নিয়ে নিহত প্রসূতির পরিবারের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে বলেও দাবি করেন এবং এসব কোন সমস্যা হবেনা বলেও উল্ল্যেখ করেন। এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, আমরা লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে চিকিৎসায় অবহেলা বা ভুল করার প্রমাণ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিব।
মন্তব্য