নজরুল ইসলাম চন্দনাইশ প্রতিনিধি চট্টগ্রাম>>> সাতকানিয়া উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নের এক দিনমজুর,মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অংশগ্রহণ করে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন ৷বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছর পেরিয়ে যাওয়া হলেও এখনো পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি,তিনি বলেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে,পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের বর্ণনা দেন৷আমি অসহায় এবং দিনমজুর হওয়ার কারণে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করার পরেও এখনো পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি,আমি প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আমার একাধিক আবেদন দেওয়া হয়েছে ৷মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ছালাম তার বর্ণনায় বলেন নায়েক আবু তাহের, আবদুল মোনাফ, মৃত আহমদ ছফা, মৃত নুরুল ইসলাম, নুরুন্নবী ও সুবল মুহুরী। যুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন হলে সবাই একসাথে মিলে সাতকানিয়া সদরে গিয়ে জেনারেল এম এ জি ওসমানী স্বাক্ষরীত সনদ গ্রহন করি। আমার এখনো মনে পড়ে সন্দ গ্রহনের সময় আমার পাশে ছিলেন নায়েক আবু তাহের। যুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন করে সনদ হাতে নিজ ঘর ফিরে আসার পর শুরু ছালামের জীবনের কালো অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পরিবারের খবর নিতে না পারায় ক্ষুব্ধ হন সৎ মা। ছালামের উপর চলতে থাকে সৎ মায়ের নির্যাতন। সৎ মায়ের অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অবশেষে ছালাম পিতার বাড়ি চেড়ে চলে যান পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রোয়াংছড়ি এলাকায়। এলাকার লোকজনের অন্তরাগে দিন মজুরের কাজ করে জীবন জীবকা নির্বাহ করা শুরু করেন। ইতোমধ্যে খবর পান তার পিতার ঘর চুরি হয়। ঘরে রক্ষিত ছালামের বক্সাটিও চোর নিয়ে বক্সোর ভেতর রক্ষিত মুক্তিযোদ্ধের সনদসহ বিভিন্ন জরুরী কাগজপত্র। মুক্তিযুদ্ধার তালিকাভুক্ত হলেও তিনি আর অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন নি। সে থেকে আজ পর্যন্ত সম সাময়িক মুক্তিযোদ্ধদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে কোন সুরাহা করতে পারেন নি। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ছালাম মানুষের ঘরে কামলারি কাজ করেন আর তাতে যা পায় তা দিয়ে সংসার চালান। অবশেষে ছালাম সমসাময়িক মুক্তিযোদ্ধের পরামর্শে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়খ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। যোগাযোগ করা হলে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোনাফ বলেন, আবদু ছালাম একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। আমি নিজেই তার স্বাক্ষী। তিনি আমার গ্রুপেই ছিলেন। একসাথে ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। তিনি আরো বলেন কত মুক্তিযোদ্ধা দেশে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। আমার জানামতে এদের অনেকেই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। আমি চাই আবদুল ছালামের মত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধদের সঠিক মূল্যায়ন হোক। দীর্ঘদিন ধরে আবদুল ছালামের সাথে আমাদের কোন যোগাযোগ ছিলনা সে কারনে হয়তো আমাদের পক্ষ থেকে তাকে তালিকাভূক্ত করা সম্ভব হয়নি। আমি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও বিভাগের কাছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ছালাম কে তালিকাভুক্ত করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। আমার মা যখন মারা গিয়ে ছিল আমাকে সেখানে পালক নিয়ে ছিল দক্ষিণ মুরাদাবাদ নাজির আহাম্মদের বাড়ি, যারা আমাকে পালোক নিয়ে ছিল তাদের নাম হলোঃ মল্লিখা খাতুন । জামাই নামঃ খালু মিয়া তাদের অনেকে জায়গা জমি ছিল তখন আমার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে। আমার বাবা ২য় পরিবারে দেখাশোনা করা জন্য আমাকে যেখানে পালক দিয়ে ছিল সেখানে থেকে আবার নিয়ে এসে ছিল। আমাকে যারা পালক নিয়ে ছিল তাদের সন্তান ছিল না। আমাকে নিয়ে আসার কারণ আমি খালু মিয়া সম্পিত্তি থেকে বঞ্চিত হলাম। বেশ কিছু দিন পর যখন আমার বাবা ২য় পরিবারের ছেলে মেয়েরা অথার্থ আমার ভাইবোন বা বড় তখন সৎ মায়ের অত্যাচারে আমি পালিয়ে যাই রাঙ্গনিয়া বোগা বিল আবদুল মোতালেব এর বাড়ি তে আগ্রয় নিয়ে ছিলাম এর কিছু দিন পর যুদ্ধ শুরু হয়। তখন দেশে মুক্তি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি।, মুক্তিযোদ্ধ কারণে আমার ভাইবোনেরা আমার শুত্রু হয়ে যায়। আজ আমি আমার পালক খালু মিয়া সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত তারপর আমার নিজ জন্মদাতা বাবা গোলাম আলী সম্পত্তি থেকে ও বঞ্চিত এবং আওয়ামী সরকারে কাছ থেকে ও বঞ্চিত বাংলাদেশ স্বাধীন এর পর আমি প্রথম বিবাহ করি। আমি যখন মুক্তিযোদ্ধ সাটিফিকেট জন্য দৌড়াদৌড়ী করি তখন আমার,আবার অনেকে জীবন যুদ্ধে নেমে জীবিকা নির্বাহ করেছেন অন্যের কামলা হিসেবে। হতাশাগ্রান্ত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধ যারা এখানো নিজেকে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতির খাতায় নাম লেখাতে পারেননি তাদের মধ্যে অনেকেই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কোন চায়ের দোকানে বসে মুক্তিযুদ্ধের শাসরুদ্ধকর ইতিহাস নিয়ে দ্য অ্যানসিয়েন্ট একজন মুক্তিযোদ্ধ ম্যারিনারের আলবাট্রেস পাখির গল্প করেই সময় পার করেছেন। এমনই জীবন জীবিকার তাহিদে সংসারের ঘানি টানতে অবশেষে বেছে নিলেন সাতকানিয়ার আবদুল ছালাম নিয়েছেন দিন মজুরের কাজ। কাজের ফাঁকে সুযোগ হলে মুক্তিযুদ্ধের করুন এবং শাসরুদ্ধকর কাহিনী নিয়ে গল্প জুড়ে দেন। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ছালামের যুদ্ধের লব্ধ অভিজ্ঞতা গল্পতেই সীমাবদ্ধ। অদ্যাবধি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সরকারীভাবে মুক্তিযোদ্ধ বালামে নিজের নাম লেখাতে পারেননি। মুক্তিযোদ্ধদের লাল বার্ত কিংবা নীল বার্তা কোনটি ছালামের কাজে আসেনি। পক্ষন্তরে তার চোখে শুধু অন্ধকারের অমানিশার বাতহি ভেসে উঠেছে। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ছালাম সাতকানিয়া উপজেরার কালিয়াইশ ইউনিয়নের বশির আহমদের বাড়ির মৃত গোলাম আলীল ছেলে । পার্থিব জীবন বুঝে উঠার আগেই ছালামকে ছেড়ে মা পরাপারে পাড়ি জমান। মাতৃহীন শিশু ছালামকে পিতা গোলাম আলী দিশেহারা হয়ে পড়েন। অবশেষে গোলাম আলী শিশু সন্তান আবদুল ছালামকে পটিয়া উপজেলার খরনা এলাকায় এক নিঃসন্তান পরিবারের কাছে দত্তক দিয়ে দ্বিতীয় সংসার পাতেন। আবদুল ছালামা যখন বয়োঃ সন্ধিকাল অতিক্রম করে কিশোরে পা রাখলেন তখন পিতা গোলাম আলী পুনরায় ছেলেকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। তখন থেকে শুরু হয় ছালামের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় দিন মজুরের কাজ করে পিতার দ্বিতীয় সংসারের ঘানি টানা। পিতার দ্বিতীয় সংসারের ঘানি টানা আর ছোট ভাই বোনদের মানুষ করতে গিয়ে নিজেই অমানুষ হয়ে গেলেন। সংসারের বিশাল বোঝা বহন করতে গিয়ে নিজে অক্ষর জ্ঞান পর্যন্ত অর্জনেরও সুযোগ পেলেন না। এরই মধ্যে ১৯৭১ সাল মুক্তিযুদ্ধে ধামামা বেজে উঠল। পাকহানাদার বাহিনীদের অত্যাচার নির্যাতন স্বচক্ষে দেকে আবদুল ছালাম নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে পারলেন না। জীবন বাজি রেখে পাকহানাদার বাহিনী কবর থেকে দেশ রক্ষা করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিলেন। মুক্তিযুদ্ধা যোগ দিয়েই প্রশিক্ষনের জন্য ভারত গমন করেন। মুক্তিযুদ্ধা আবদুল ছালাম জানান, আমাদের চালানদার ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আবু জাহের ও ওস্তাদ রফিক। পাহাড়ের মধ্যদিয়ে গহিন জঙ্গলের ভেতের পায়ে হেঁটে গিয়ে যখন পৌঁছি তখন আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. ফজল করি পরবর্তীতে তিনি কালিয়াইশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে যুদ্ধে অংশ নিই । আমাদের গ্রুপে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মৃত জলিল বকসু মৃত আবু তাহের, মৃত আবুল হোসেন Iকিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সত্য,আমি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে ডাক পোস্টে একাধিক বার চিঠি দেওয়ার পরও কোন সুরাহা মেলেনি আমি জননেত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে তদন্তপূর্বক মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চাই ৷
মন্তব্য