নিজস্ব প্রতিবেদক
চাকরি স্থায়ীকরণসহ ১০ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) অস্থায়ী কর্মকর্তা কর্মচারীরা ফের আন্দোলনে নেমেছেন। আন্দোলনের এবারের কর্মসূচীতে তারা ২৩ জুলাই রোববার থেকে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ ও ১০ দফা দাবি সম্বলিত লিফলেট বিতরণ শুরু করেছে। প্রথম দিন বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত টাইগারপাস নগর ভবনের প্রধান কার্যালয়ে প্রায় ৪ শতাধিক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে বলে জানা গেছে চসিক অস্থায়ী কর্মকর্তা–কর্মচারী পরিষদ। গণস্বাক্ষর সংগ্রহের মাধ্যমে জনমত সৃষ্ঠির এ কর্মসূচী আগামী বেশ কয়েকদিনও একইভাবে চসিক প্রধান কার্যালয়সহ অন্যান্য কার্যালয়ে চলবে বলে জানা গেছে। গণস্বাক্ষর সংগ্রহের শেষ পর্যায়ে স্বাক্ষরসহ বিভিন্ন দাবি সম্বলিত লিফলেট মেয়রকে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিষদের নেতৃবৃন্দ। এরপরও চসিক কতৃপক্ষ দাবি পূরণে পদক্ষেপ না নিলে দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতিসহ অন্যান্য কঠোর কর্মসূচি ঘোষনা করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।২৩ জুলাই’২৩ ইং রবিবার বিকালে টাইগার পাসস্থ চসিক প্রধান কার্যালয়ে দেখা যায়, চসিকের অস্থায়ী কর্মকর্তা–কর্মচারীরা দলবদ্ধ হয়ে কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন কক্ষে গিয়ে স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন এবং লিফলেট বিতরণ করেন। বিভিন্ন কক্ষের দেয়ালে দেয়ালেও তাদের দাবী সম্মলিত লিফলেট লাগিয়ে দিতে দেখা গেছে। তাদের আন্দোলনে সহমত পোষন করে চসিকের অনেক স্থায়ী কর্মকর্তা কর্মচারীও গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কাগজে স্বাক্ষর করেন বলে জানা গেছে। পরে অস্থায়ী কর্মকর্তা কর্মচারী পরিষদের আহ্বায়ক আবু তাহেরে নেতৃত্বে কয়েক সদস্যের একটি প্রতিনিধি টিম চসিকের প্রধান নির্বাহীর দপ্তরে প্রবেশ করে তাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য সচিব সাজু মহাজন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সচিব জাহিদুল ইসলাম জোমাদ্দার, যুগ্ম আহ্বায়ক লিটন বড়ুয়া, তাপস দাশ ও বোরহানুল আলম।
প্রতিনিধি টিমটি বের হয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, চসিকের নিয়োগবিধি জটিলতার কারণে অস্থায়ী কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়মিত ও স্থায়ীকরন করতে সমস্যা হচ্ছে বলে প্রতিনিধিদলকে জানান সচিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। আন্দোলনরতদের দাবীর মুখে চসিক প্রধান নির্বাহী তাদের চাকরী স্থায়ীকরণে আইনের সংশোধন সহ সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অবহিত করেন এবং কিছুটা সময়ের প্রয়োজন বলেও জানান নির্বাহী কর্মকর্তা।
চসিক অস্থায়ী কর্মকর্তা–কর্মচারী পরিষদের সদস্য সচিব সাজু মহাজন বলেন, ২০–২৫ বছর ধরে চাকরি করছেন এমন অনেকেই এখনো স্থায়ী হতে পারেননি। অনেকের অবসরে যাওয়ার সময় হচ্ছে। স্থায়ী না হলে তারা অনেক সুযোগ–সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি জানান, এর আগেও স্থায়ীকরণের দাবিতে আন্দোলন করা হয়েছিল। মেয়রসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আশ্বাসে তখন আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছিল। এখন বাধ্য হয়ে আবার কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হয়েছি আমরা।১০ দফা দাবির উল্লেখযোগ্য দাবীগুলো হচ্ছে, ১৯৮৮ ও ২০১৯ সালে অনুমোদিত শূন্য পদের বিপরীতে অস্থায়ীভাবে কর্মরত শ্রমিক ও কর্মচারীদের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে চাকরি নিয়মিতকরণ তথা স্থায়ী করা। চসিকের সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে অস্থায়ীভাবে কর্মরত সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিককে ২০১৫ সালের শ্রমিক আইন পাশ হওয়া ও ২০২০ সালে সরকার কর্তৃক পরিপত্র অনুযায়ী বেতন সমন্বয় করে বর্ধিত বেতন প্রদান করা এবং ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া বিশেষ প্রণোদনা ভাতা অস্থায়ী কর্মরতদের প্রদান করা। আউটসোর্সিং পদ্ধতি বাতিল করা। ডোর টু ডোর শ্রমিকদের যোগদানপত্র প্রদান ও মাসের ১ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধসহ সকল ধরনের বোনাস ও উৎসব ভাতা প্রদান করা। অস্থায়ী কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ ও অবসর গ্রহণ করলে ১০ লক্ষ টাকা এক মাসের মধ্যে পরিশোধ করা। স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কিংবা অস্থায়ীভাবে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ রাখা। অবসরোত্তর গ্র্যাচুইটি তিন মাসের মধ্যে পরিশোধ করা। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে চসিকে পেনশন প্রথা চালু করা। সিটি কর্পোরেশনের পরিত্যক্ত জায়গায় অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মতো কর্মচারীদের জন্য আবাসন প্লট বা ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করা এবং শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় সার্বক্ষণিক ভালো–মন্দ দেখভাল করার জন্য (সিবিএ) পুনর্গঠন করা।চসিক সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটিতে অনুমোদিত জনবল কাঠামো অনুযায়ী পদ আছে ৪ হাজার ২২৬টি। কিন্তু কর্মরত আছেন ৮ হাজার ৮০৩ জন। এর মধ্যে স্থায়ী আছেন ২ হাজার ৭৭০ জন। অর্থাৎ অস্থায়ী আছেন ৬ হাজার ৩৩ জন। অনুমোদিত জনবল কাঠামোর বিপরীতে বর্তমানে শূন্য পদ আছে এক হাজার ৪৫৭টি। স্থায়ীকরণের দাবিতে কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রথম আন্দোলন কর্মসুচীতে নামেন ২০২১ সালে।
মন্তব্য