মোঃ সুমন মিয়া লালমনিরহাট প্রতিনিধি >>> স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার করেও দেশের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট আজও উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসেবার দিক দিয়ে মারাত্মকভাবে পিছিয়ে রয়েছে। তিস্তা নদীর বুকে গড়ে ওঠা এই গৌরবদীপ্ত জেলা একদিকে যেমন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য ভূমিকা রেখেছে, তেমনি উন্নয়ন ও আধুনিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে যুগ যুগ ধরে বঞ্চনার শিকার হয়ে এসেছে।বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চলে রংপুর জেলায় রয়েছে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ), এবং আরও তিনটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও অসংখ্য ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অন্যদিকে লালমনিরহাটে মাত্র একটি ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতাল থাকলেও, বাস্তবে সেখানে ১০০ শয্যারও উপযুক্ত চিকিৎসা সুবিধা নেই। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স এবং আধুনিক রোগ নির্ণয় যন্ত্রপাতির চরম অভাব রয়েছে।এমতাবস্থায় চীনের প্রস্তাবিত ১ হাজার শয্যার আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের স্থান হিসেবে লালমনিরহাট জেলাকে নির্বাচন করা সময়োপযোগী এবং যৌক্তিক সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ, চিকিৎসকরা এবং সমাজকর্মীরা।ভৌগোলিক ও যোগাযোগগত সুবিধা:লালমনিরহাট জেলার ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত কৌশলগত ও সুবিধাজনক। তিস্তা নদীর তীরে বিস্তীর্ণ প্রায় ৮৫ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে হাজার হাজার হেক্টর পতিত ও কৃষিজমি, যা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আদর্শ। জেলার সঙ্গে রয়েছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের নিবিড় রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। তদুপরি, জেলার নিজস্ব বিমানবন্দর থাকায় এখান থেকে সহজেই অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব।সীমান্তবর্তী সুবিধা ও বৈদেশিক সম্ভাবনা:লালমনিরহাটের ভৌগোলিক অবস্থান এমন এক সীমান্তবর্তী অঞ্চলে, যা পার্শ্ববর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে সহায়ক হতে পারে। একইসাথে, বুড়িমারী স্থলবন্দর ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানের রোগীরাও এখানে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এতে একদিকে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে, অপরদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।স্বাস্থ্যসেবার বৈষম্য ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা:স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও লালমনিরহাট জেলা এখনও একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি মেডিকেল কলেজ বা সুপরিকল্পিত হাসপাতাল পায়নি। জনগণকে জরুরি স্বাস্থ্যসেবার জন্য রংপুর বা ঢাকার মতো দূরবর্তী জেলায় ছুটতে হয়। ফলে অনেক সময় প্রাণহানি ঘটে যাচ্ছে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অনুপস্থিতির কারণে।চীনের প্রস্তাবিত ১ হাজার শয্যার হাসপাতাল যদি লালমনিরহাটে স্থাপন করা হয়, তবে তা কেবল একটি স্বাস্থ্যসেবার প্রতিষ্ঠান হিসেবেই নয়, বরং এটি হবে সমগ্র উত্তরাঞ্চলের জন্য একটি মাইলফলক। স্থানীয় জনগণের উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান এবং অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এটি ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।চীনের প্রস্তাবিত হাসপাতালটি রংপুরের গঙ্গাচড়া বা অন্য কোথাও স্থাপনের প্রস্তাব থাকলেও, লালমনিরহাট জেলার গুরুত্ব, সম্ভাবনা এবং দীর্ঘদিনের বঞ্চনা বিবেচনায় এটি তিস্তা পাড়ের লালমনিরহাটেই স্থাপন করা উচিত। একটি সমন্বিত ও সমতাভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
মন্তব্য