এইচ এম রোকন>(খুলনা)>>> দীর্ঘ ২৪ বছর নিয়মিত পাঠদান করেও কোন বেতন না পাওয়ার কারণে মানবতার জীবন যাপন করছেন খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার বামন ডাংগা এলাকার মো মোহসিন মিনা নামে একজন সহকারী শিক্ষক।দুই যুগের বেশি সময় ধরে আলোকিত সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন তিনি।অর্থনৈতিক অভাবে দুর্বিষহ জীবন যাপন করলেও তবুও তিনি দিয়ে যাচ্ছেন জ্ঞানের আলো।এপর্যন্ত তিনি শতশত দূর্বল মেধা সম্পন্ন শিক্ষার্থীকে দিয়েছেন পথের দিশা।তবে তিনি তার নিজের সপ্নের পথের দিশা এখনো খুজে পায়নি।তার জীবনে নীরব দুর্ভিক্ষ, পারিবারিক অসচ্ছলতা থাকলেও আত্মমর্যাদা বোধ প্রগাঢ়ভাবে বাঁধা দিয়েছে।তাই পারছেন না কারও কাছে হাত পাতততে।তবুও থেমে নেই তার জ্ঞান ছড়ানোর ব্রত।তার হতে শিক্ষার আলো নেয়া অনেকেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত,অথচ বেশ কষ্টেসৃষ্টে পরিবারকে নিয়ে দিনপাত করতে হয় তাকে।শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে নিজের বা সংসারের কথা চিন্তা করেননি একটি সপ্নের আশায়।ঘরে ঘরে যে আলো জ্বালিয়ে ফেরে, অথচ নিজের ঘরেই নেই যার আলো জ্বালাবার সামর্থ্য!বলছি রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা বামন ডাংগা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের কথা।দেশের বেশিরভাগ মাধ্যমিক স্কুলগুলোতেই চলছে ম্যানেজিং কমিটির একচ্ছত্র আধিপত্য।প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির চাহিদা অনুযায়ী চলতে পারলে অনেক পরে নিয়োগ হলে ও নাম ওঠে তার এমপিও শিটে।আর না চলতে পারলে অনেক আগে নিয়োগ হলেও এমপিও শিটে নাম ওঠেনা।এগুলো এখন অহরহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে এ উপজেলার বামন ডাংগা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।এক বছর নয়,দু বছর নয় পুরো ২৪ বছর নিয়মিত পাঠদান করেও এ বিদ্যালয়ের এক দরিদ্র শিক্ষক মোহাসিন মিনা তার নামটি ওঠাতে পারেননি এমপিও তালিকায়।অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে,মোঃ মোহাসিন মিনা ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে সহকারি শিক্ষক পদে নিয়োগপত্র পান।আর এ বিদ্যালয়টি তার কিছুদিন পর ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে এমপিও ভুক্ত হয়।নিয়োগ বিধি মোতাবেক সেই অব্ধি কর্মরত আছেন মোঃ মহোসিন মিনা।২৪ বছরে বিদ্যালয়টির সকল শিক্ষক পদে নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত চূড়ান্ত হলেও শুধু মাত্র এই একজনের কোন অগ্রগতি আজও হয়নি।কোন অজানা রহস্য কেন এ পর্যন্ত তাঁর নাম ওঠেনি এমপিও শিটে তা সঠিকভাবে কেউ বলতে পারেনি আজও।এপর্যন্ত তিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও দেখেননি আলোর মুখ।এদিকে মোহাসিন মিনা নিয়মিত পাঠ দান করে বেতন না পেয়ে মানবেতার জীবনযাপন করছেন।তথ্যনুযায়ী এ বিদ্যালয়টি ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।বর্তমান ২২০ জন ছাত্র- ছাত্রী ও ১৮ জন শিক্ষক কর্মচারী নিয়ে সুনামের সহিত শিক্ষা ব্যবস্থা করে আসলে ও পুরো ২৪ বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না এই শিক্ষক।শিক্ষকতা করেও অর্থনৈতিক অভাবে পরিবার ও স্ত্রী সন্তান নিয়ে পার করছেন দুর্বিষহ জীবন।রুপকথার গল্পের মত মনে হলেও আসলে এটাই সত্য।খোজ নিয়ে যানা যায়, এই মোহসিন মিনা ছাত্র জীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন।দরিদ্র বাবার স্বপ্ন পুরনের জন্য অন্যের বাড়িতে লজিং থেকে লেখাপড়া করতেন।অনেক কষ্টে অনার্স পাস করে চোখে-মুখে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে ভেবেছিলেন দরিদ্র বাবা-মায়ের কষ্ট দূর করবেন।যদিও বিভিন্ন চাকুরির সুযোগ পেলেও তিনি এ গ্রামের ছেলে মেয়েদের শিক্ষিত করে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে নামেন শিক্ষকতায়।এবিদ্যালয় টি প্রতিষ্ঠালগ্নে অবৈতনিক ভাবে শিক্ষকরা কাজে যোগ দিয়ে শিক্ষা দিয়ে আসছিলেন।পরে১৯৯৭ ইং সালে বিদ্যালয়টিকে এমপিও ভুক্ত করা হয়।তখন হতে সকল শিক্ষক- কর্মচারী কে পর্যায়ে ক্রমে এমপিও ভুক্ত করা হলেও শিক্ষক মোহাসিন মিনার নামটি আজও অন্তর্ভুক্ত হয়নি।সকল শিক্ষকরা বেতন-বোনাস পেলে তার কপালে জোটে নিরাশার বাণী।কে জানে এর সমাধান কোথায়? এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মধুসূদন দত্ত কে ফোন করলে তিনি তার স্ত্রীকে দিয়ে ফোন রিসিভ করান।তখন ফোনের অপর প্রান্ত হতে সোনা যায় তার স্ত্রী বলছেন তোমাকে ফোন করছে কথা বলার জন্য।কিন্তু কোন অজানা কারণে পরমুহূর্তেই তিনি আবার জানান তার স্বামী বাড়িতে নাই। যদিও একটি বিশ্বস্ত সূত্র ওই প্রধান শিক্ষকের সাথে সাক্ষাৎকালীন সময়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, সাবজেক্ট জটিলতার কারণে তার বেতন এখন পর্যন্ত চালু হয়নি। এব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আবেদন করা হয়েছে কবে নাগাদ এটা অনুমোদন দিবে সে বিষয় সঠিক ভাবে বলতে পারছেন না তিনি।২৪ বছরের মধ্য সাবজেক্ট সমস্যার সমাধান কেন করা সম্ভাব হয়নি।এ প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারেননি তিনি।এব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আইরিন পারভীনের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি বলেন,আমি বিষয়টি আগেও শুনেছি।ওই শিক্ষকের সাবজেক্ট জটিলতা ও কাগজপত্রে কিছুটা ত্রুটি ছিল।এমপিওর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য ওই শিক্ষকের কাগজপত্র প্রধান শিক্ষককে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছি।এ ব্যাপারে রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনূর জাহানকে অবগত করলে তিনি এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন। খোঁজখবর নিয়ে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে যাতে অতিদ্রুত এর সমাধান করা যায় বলে তিনি অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।
মন্তব্য