২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
  • প্রচ্ছদ
  • অর্থনীতি >> আন্তর্জাতিক >> জাতীয়
  • ঘুনধুম সীমান্তে মিয়ানমার থেকে আসা মর্টার শেল বিস্ফোরণে নিহত ২
  • ঘুনধুম সীমান্তে মিয়ানমার থেকে আসা মর্টার শেল বিস্ফোরণে নিহত ২

      বাংলাদেশ সংবাদ প্রতিদিন

    মিয়ানমারের রাখাইন থেকে ছোড়া মর্টার শেল বিস্ফোরণে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুনধুম ইউনিয়নে দুজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে হোসনে আরা বেগম বাংলাদেশী। অন্যজন তার বাড়িতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে আসা এক রোহিঙ্গা। গতকাল বেলা পৌনে ৩টার দিকে ঘুনধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মর্টার শেলটি এসে পড়ে।

    রাখাইনে এদিন মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত আরো তীব্র হয়েছে। আরাকান আর্মির সঙ্গে টিকতে না পেরে গত দুদিনে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১০৬ সদস্য। তাদের অস্ত্র ও গুলি বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির হেফাজতে রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, এরই মধ্যে পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে সরকার।

     

    মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে প্রাণহানির ঘটনায় বিজিপির কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবি। গতকাল বিকালে ঘুনধুম সীমান্ত পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেলে দুজন নিহতের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে সংঘাত পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বিজিবি।’ পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের নিরস্ত্রীকরণের মাধ্যমে আশ্রয় দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কয়েকজনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বিজিবি সদর দপ্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করছে।’

     

    বান্দরবানের ঘুনধুমে গতকাল নিহত হোসনে আরা বেগম (৫২) জলপাইতলী গ্রামের বাদশা মিয়ার স্ত্রী। বালুখালী আশ্রয়শিবিরের ৮-ই ব্লকের বাসিন্দা নবী হোসেন (৬৫) ধানখেতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বাদশা মিয়ার বাড়িতে গিয়েছিলেন। বেলা পৌনে ৩টায় নবী হোসেনকে দুপুরের খাবার দিতে রান্নাঘরে যান হোসনে আরা বেগম। তখন মর্টার শেলটি এসে রান্নাঘরের ওপর পড়ে। নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান জানান, দুই পক্ষের গোলাগুলির সময় মর্টার শেল বিস্ফোরিত হলে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হন।

     

    দুজন নিহতের ঘটনায় সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছোটাছুটি শুরু করে। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

    বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে সকাল ১০টার পর থেকে আরাকান আর্মির অবস্থান লক্ষ্য করে হেলিকপ্টার থেকে বোমা হামলা শুরু করে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী। এমন পরিস্থিতিতে ঘুনধুম সীমান্ত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছে চার শতাধিক বার্মিজ চাকমা। পাশাপাশি কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গাও সীমান্তে জড়ো হচ্ছে। তবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে টহল জোরদার করেছে বিজিবি। টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘সীমান্তে আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।’

     

    ঘুনধুম সীমান্তের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রোববার রাত থেকে সীমান্তের ওপারে ঢেঁকিবনিয়া এলাকা থেকে তীব্র গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান তারা। আরাকান আর্মি সেখানে বিজিপির ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে হামলা চালালে সংঘাত আরো ছড়িয়ে পড়ে। লড়াইয়ে উভয় পক্ষই মর্টার শেল, রকেট লঞ্চার, মেশিনগানসহ ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করছে। গতকাল দুপুরে বিজিপির ক্যাম্পটিতে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ঘুনধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শফিক জানান, দুপুরে ওই এলাকায় মিয়ানমারের একটি হেলিকপ্টার উড্ডয়ন করছিল। এর কিছুক্ষণ পরই দেখা যায়, সীমান্তের ওপারে ঢেঁকিবনিয়ার বিজিপি ক্যাম্পটি জ্বলছে।

     

    বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বিজিপির দখলে থাকা সর্বশেষ তিনটি ক্যাম্পের মধ্যে তুমব্রু রাইট ক্যাম্প এরই মধ্যে দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এ ক্যাম্প থেকে মোট ৭১ বিজিপি সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। বাকিদের অনেকেই পালিয়ে বিভিন্ন জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। মাঝেমধ্যেই এক-দুজন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। আরো অনেকে নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তুমব্রু লেফট ক্যাম্প থেকে এ পর্যন্ত ৩৫ জন পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা বিজিপির মোট সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৬। ওই ক্যাম্পের আরো শতাধিক সদস্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী ব্রিজের ওপারে অবস্থান করছেন। পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটলে তারা যেকোনো সময় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাতে পারেন। বিজিপির ঢেঁকিবনিয়া ক্যাম্পটি মূলত একটি ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার পর্যায়ের সামরিক অবস্থান। এর অবস্থান সীমান্তের দুই কিলোমিটার ভেতরে। কিন্তু সীমান্তপথে ব্যাটালিয়ান হেডকোয়ার্টারে কোনো প্রকার লজিস্টিক সাপোর্ট পাঠানোর মতো অবস্থা মিয়ানমার সরকারের নেই। সেখানে সড়কপথে যোগাযোগের সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে আরাকান আর্মি।

     

    এদিকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের ফেরত পাঠাতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান। মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ আছে। ওনাদের ডেপুটি ফরেন মিনিস্টার ও আমাদের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা তাদের বর্ডার গার্ডের যারা আছে ওদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। কোন প্রক্রিয়ায় ফেরানো হবে, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। বাই এয়ার নাকি বাই বোট ফেরানো হবে, এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। এর আগে ভারতেও ঢুকে পড়েছিল। ভারত থেকে তাদের বাই এয়ারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।’

     

    বিজিপি সদস্যদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে কে যোগাযোগ করেছে? এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘তারাও যোগাযোগ করেছে, আমরাও করেছি। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আরো আসছে বা আসার সম্ভাবনা আছে। আমাদের কাছে রেজিস্টার্ড এখন পর্যন্ত ৯৫ জন। কয়েকজন আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’ সীমান্ত সুরক্ষা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সীমান্ত সুরক্ষিত আছে। তারা যেহেতু পালিয়ে এসেছে, ফলে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি।’

    বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর কয়েক মাসে রাখাইন থেকে এসেছে আট লাখ মানুষ। রোহিঙ্গা ঢলের ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। এর আগে দুবার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

    মন্তব্য

    <img class=”alignnone size-full wp-image-29676″ src=”https://bdsangbadpratidin.com/wp-content/uploads/2024/05/IMG_20240503_224849-2.jpg” alt=”” width=”100%” height=”auto” />

    আরও পড়ুন

    You cannot copy content of this page