লেখকঃ সাদেকুল ইসলাম রনচন্ডী-৫৩২০, কিশোরগঞ্জ,নীলফামারী>>> প্রধানমন্ত্রীর এরুপ বক্তব্য শিক্ষার্থীদের কাছে অপমানজনক বলে মনে হয়।একেই তো কোটা পদ্ধতি, তার উপরে আবার সবাইকে রাজাকার বলা! প্রধানমন্ত্রীর সেই বক্তব্যের জের ধরে মধ্য রাতেই বিক্ষোভ করতে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বাবিদ্যালয়, সিলেটের শাহজালাল ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।সবার মুখে একটা স্লোগান, ❝তুমি কে,আমি কে, রাজাকার,রাজাকার❞। ২০১৮ সালে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীতে মুক্তিযোদ্ধা সহ সকল কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করেছিলো সরকার।সম্প্রতি সেই পরিপত্র বাতিল করে উচ্চ আদালতের রায়ের পর থেকেই আন্দোলনে নামেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।১৫ই জুলাই,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে প্লেকার্ড এবং পতাকা নিয়ে বসেছিলো তখন হঠাৎ রড,লাঠি ও রিভোলবার নিয়ে ছাত্রলীগ তাদের আক্রমণ করে।শিক্ষার্থীদের উপর অমানবিক লাঠিচার্জ করে ছাত্রলীগের কুখ্যাত সন্ত্রাস বাহিনীরা।এতে অনেক ভাই-বোন ব্যাপক ভাবে আহত হয়।ছাত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের হামলা সারাদেশে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে মুহুর্তেই ঐক্যবদ্ধ করে তোলে।তারেই ধারাবাহিকতায় রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে ওঠে কোটা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দল।যার প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। ১৫ই জুলাই বেরোবির ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে তাদের যৌক্তিক দাবি গুলো উপাস্থাপন করলে বেরোবির ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা লাটিচার্জ করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পণ্ডশ্রম করার চেষ্টা করে।এতে করে অনেকে আহত হয়। সেদিনের মতো বন্ধ হয় আন্দোলন।কিন্তু থেমে থাকেনি সাধারণ শিক্ষার্থীরা।তারা নতুন কর্মসূচি ডাকে,১৬ই জুলাই, মঙ্গলবার সমম্বয়ক আবু সাঈদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়।এতে অংশ নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের শুরুতে আবু সাঈদ তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ❝আজ যদি আমি শহীদ হই তবে আমার নিথর দেহ টাকে রাজপথেই ফেলে রেখো, কেননা একজন পরাজিত সন্তানের লাশ তার বাবা গ্রহণ করবেনা❞।বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীরা যখন মিছিলে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের কাছ এসে পৌচ্ছায়,তখন পুলিশ অতর্কিত ভাবে টিয়ারশেল গ্যাস নিক্ষেপ ও পাশবিক লাঠিচার্জ করতে থাকে শিক্ষার্থীদের উপর।আবু সাঈদ তখনো সব বাধা কে উপেক্ষা করে নির্ভীক ভাবে হাতে ছোট্ট একটা বাশের টুকরা নিয়ে সবার সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলো,তার হাত দুটো ছিলো উপরে,সিনা টান করে বীরের মতো বুক উচু করে এগিয়ে যাচ্ছিলো আবু সাঈদ।বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের কাছে অবস্থানকৃত পুলিশ সরকারি নির্দেশনায় সরাসরি ইচ্ছাকৃত ভাবে আবু সাঈদের বুকে গুলি চালায়।১ম গুলি লাগে সাঈদের কোমরে,সে বুঝতে পেরেও বুক উচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো ঠিক যেন, কাজী নজরুলে বিদ্রোহী কবিতার চির উন্নত মমশীর। তারপর আরো একটা গুলি এসে লাগে আবু সাঈদের পেটে, পরে যেতে ধরেও নিজেকে সামলিয়ে আবারো বুক টান করে দাঁড়িয়ে যায় আবু সাঈদ।যাতে সঙ্গিরা সাহস না হারায়।কিন্ত পুলিশ আবারো পরপর ২টা গুলি চালায় আবু সাঈদের বুকে। এবার চেষ্টা করেও নিজেকে আর শক্ত রাখতে পারলেন না আবু সাঈদ।মাটিতে ঢলে পরলো তার রক্তমাখা নিথর দেহ। তৎক্ষনাৎ দ্রুত গতিতে তাকে নেয়া হলো রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।কিন্তু ততক্ষণে চিরতরে বিদায় নেন ২০২৪ এর প্রথম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বীর আবু সাঈদ।
মন্তব্য