লেখকঃ মোঃ সাদেকুল ইসলাম।
রনচন্ডী-৫৩২০,কিশোরগঞ্জ,নীলফামারীর।
১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে এদেশের ভূখণ্ডে স্বাধীন পতাকার উন্মেষ ঘটে। বাঙালিরা অর্জন করে লাল সবুজের একটি দেশ তথা আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীন সার্বভৌম এদেশ আমাদের মায়ের মতো। দেশের সার্বিক কল্যাণে সদা জীবন দিতেও প্রস্তুত লাখো-কোটি জনতা। কারণ, আমাদের অন্তরে রয়েছে দেশপ্রেম, রয়েছে বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সাঃ) এর আদর্শ।
একটি দেশের সরকার যখন নাগরিকদের ন্যায্য অধিকার প্রদানে ব্যার্থ, যখন নাগরিকরা তাদের মৌলিক অধিকার গুলো সঠিক ভাবে পায়না, তখন বিভিন্ন ভাবে আন্দোলন, মিটিং, মিছিল করে তাদের অধিকার গুলো আদায় ও বাস্তবায়ন করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর অর্থাৎ ২০২৪ সালে ঘটে যায় কলঙ্কিত একটি ঘটনা। যার বর্ণনা করতে গেলেও শিউরে ওঠে শরীরের প্রতিটি লোম। খুবেই হৃদয়বিদারক ও ট্রাজেডি মূলক কর্মকাণ্ড ঘটে যায় বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে। তারেই কিছু বাস্তবচিত্রের বর্ণনা নিচে তুলে ধরা হলো-
২০২৪ সাল। ক্ষমতায় তখন আওয়ামী লীগ সরকার, প্রধানমন্ত্রী তখন শেখ হাসিনা। দেশ অনিয়ম আর দুর্নীতিতে ভড়া। মেধাবী শিক্ষার্থীরা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরি পাচ্ছেনা। লাখ-লাখ অনার্স, মাস্টার্স পাশ করা ছেলে মেয়ে বেকার হয়ে আছে। চাকরিতে ঢুকতে গেলে প্রয়োজন ঘুষের উপড়ি অর্থ, তার উপরে আবার কোটা বৈষম্য। ঠিক যেমন বৈষম্য ছিলো তৎকালীন সময়ে পূর্বপাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে। মুক্তিযুদ্ধের নাতী-নাতনীদের কোটার কাছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেন বাড়তি বোঝা। তাই দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে দাফতরিক আবেদন করতে থাকে যাতে সরকারি চাকুরিতে নিয়োগের জন্য কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হয়। কিন্তু সরকার সেটিকে আমলে নেয়নি।
১লা জুলাই, ২০২৪ থেকে ক্রমান্বয়ে যখন অস্থিরতা শুরু হয় তখন ছাত্র এবং তরুণসমাজের সামনে বিগত সরকারের দুর্নীতি এবং ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনী জালিয়াতির মতো বড় সমস্যাগুলো সামনে আসে। মন্ত্রী-আমলারা কীভাবে দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে জড়িত ছিল তার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ পেতে থাকে এবং ব্যাপক অভিযোগ মিডিয়াতে আসায় সকলে বুঝতে পারে যে নির্দিষ্ট কিছু দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য নির্বাচনে কারচুপি করা হয়েছিল। যুবসমাজের ভোটাধিকার এভাবে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে দেখে ক্ষোভ ক্রমাগত অগ্নিস্ফুলিঙ্গে পরিণত হয়।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে কোটা পদ্ধতি বাতিল করার জন্য শুরু করে আন্দোলন। যা পরবর্তীতে আস্তে আস্তে বিক্ষোভে রুপ নেয়। আন্দোলনে বিক্ষোভের অন্যতম দিক ছিল অহিংসার প্রতি শিক্ষার্থীদের অঙ্গীকার। নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ এবং তাদের আন্দোলনকে দমন করার প্রচেষ্টা সহ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও, তারা শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া বজায় রেখেছিল। এই অহিংস অবস্থান শুধুমাত্র আন্দোলনের গতিকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করেনি বরং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সহানুভূতি ও সমর্থনও অর্জন করেছে।
শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের প্রতিক্রিয়া লক্ষণীয় হয়ে উঠে। বিশেষত মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন এবং তাদের সংস্কারের আহ্বান তুলে ধরা হয়। এই বৈশ্বিক মনোযোগ বাংলাদেশ সরকারকে বিক্ষোভকারীদের দাবি আরও গুরুত্ব সহকারে মোকাবেলার জন্য চাপ দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
আন্তর্জাতিক ভাবে চাপে থাকা স্বত্ত্বেও ১৪ই জুলাই রবিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বিবৃতিতে বলেন, ❝মুক্তিযোদ্ধাদের উপর এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে❞?
মন্তব্য