সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি>>> রাজধানীর বংশালের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের মিরনজিল্লা হরিজন কলোনিবাসীকে উচ্ছেদের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সুনামগঞ্জের উত্তম লাল কলোনিবাসী হরিজন সম্প্রদায় মানববন্ধন করেছে।রবিবার(১৬ জুন) বিকেল ৩ ঘটিকায় সুনামগঞ্জ উত্তম লাল কলোনির সামনে এই মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।মানবন্ধনে স্থানীয় উত্তম লাল কলোনির হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন বলেছেন,তাদের পূর্বপুরুষদের এই অঞ্চলে পরিচ্ছন্নতা কাজের জন্য আনা হয়।”তার পর থেকেই আমরা এই কলোনিতে বসবাস করছি, এখন আমাদের পরিবারের লোক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু আমাদের জন্য জায়গা বরাদ্দ বাড়ে নি।বসবাসের জায়গা নেই আমাদের! একেইভাবে মিরনজিল্লায় আমাদের সম্প্রদায়ের প্রায় সাত শতাধিক পরিবার গাদাগাদি করে বসবাস করছে।তাদের মধ্যে পাঁচ শতাধিক পরিবারের সদস্য সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত।বাদবাকি দুই শতাধিক পরিবারের সদস্যের সবাই কোনো না কোনো সময়ে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত ছিলেন।তারা স্বেচ্ছায় এসে ঢাকা শহরে গেঁড়ে বসেননি।এমন বাস্তবতায় অবৈধ বলে সিটি করপোরেশনে কর্মরতদের বাইরে অন্যদের উচ্ছেদ করলে পথে নামতে হবে।”সূত্র বলছে,হরিজন সম্প্রদায়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ২ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর মিরনজিল্লা হরিজন সিটি কলোনিভুক্ত জায়গায় বসবাসকারীদের জন্য আবাসিক ভবন ছাড়া কোনো বাণিজ্যিক ভবন কিংবা মার্কেট না করার অনুরোধ জানানো হয়।তথ্যসূত্র থেকে জানা যায়,ঢাকা (দক্ষিণ) সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মিরনজিল্লা কলোনিতে ৩ ও ৪ জুন উচ্ছেদ অভিযান চালাতে চার প্লাটুন পুলিশ চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছিল। নির্ধারিত দিনে কিছু না করলেও গত ৯ জুন ওই এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।এ সময় হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন বাধা দেন।কর্তৃপক্ষ একটি বাউন্ডারি দেয়াল ও কয়েকটি স্থাপনা ভেঙে ওই দিনের মতো ফিরে আসে।এর আগে ৬ জুন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মিরনজিল্লা হরিজন পল্লী উচ্ছেদের প্রতিবাদে ‘বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ’ মানববন্ধন করে।যদিও বস্তি উচ্ছেদ মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে পুনর্বাসন ছাড়া কোন বস্তি বা কলোনি উচ্ছেদ করা যাবে না।কারণ সংবিধানে জনগণের বাসস্থানের অধিকার রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত।গত বৃহস্পতিবার উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার ওপর ৩০ দিনের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন উচ্চ আদালত।এ সংক্রান্ত একটি রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।উত্তম লাল কলোনির বাসিন্দারা বলছেন ২০১৯ সালের ৫ জুলাই সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এক চিঠিতে সাবেক দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে কলোনিতে বসবাসকারীদের চাকরি ও আবাসন সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানান।২০২২ সালের ১৬ মে হরিজন সেবক সমিতির পক্ষ থেকে মেয়র বরাবর দেওয়া চিঠিতে কলোনির আবাসন সংকট সমাধানে পাঁচটি ১০ তলা ভবন নির্মাণের আবেদন করা হয়।একই বছরের ১৬ মে দক্ষিণ সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আওয়াল হোসেন মেয়র বরাবর দেওয়া চিঠিতে মিরনজিল্লা হরিজন সুইপার কলোনিতে ১০তলা বিশিষ্ট পাঁচটি ভবন নির্মাণের অনুরোধ জানান।কিন্তু বর্তমানে কাঁচাবাজার করার নামে হরিজনদের কলোনির একাংশ গুঁড়িয়ে দেয়া শুধু অমানবিক নয়,তা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।বক্তারা এই সময়,সারাদেশে তাঁদের আবাসন ও চাকুরি সমস্যা সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেন।মানববন্ধনে হরিজন সম্প্রদায়ের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সংগঠক বাম নেতা আলতাফুর রহমান।মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন,মাসুম লাল,বিজয় লাল,রঞ্জু লাল,বিজয় লাল বেগী,মাসুম লাল,সাজু লাল,শিবরাজ বাল্মিকী,স্বপন লাল,আজমল লাল,রনজু লাল,খোকন লাল প্রমুখ।
কুলেন্দু শেখর দাস
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
১৬.০৬.২৪
মন্তব্য