সোহেল রানা,তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধি >>> রাজশাহীর তানোরে আলুর দাম কম হওয়ায় চাষিরা ছুটছেন হিমাগারে পড়েছেন সিন্ডিকেটের খপ্পরে। তানোরে হঠাৎ করে দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন আলুচাষিরা। উপজেলার হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন তারা। তবে হিমাগার কর্তৃপক্ষের দাবি ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আলু উৎপাদন হওয়ায় তারা চাহিদা অনুযায়ী আলু নিতে পারছে না। এদিকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের জন্য হিমাগারে সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে এবং সুবিধাভোগীরা চাষিদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ আদায় করছে ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, বস্তা প্রতি এক থেকে দেড়শ’ টাকা করে আর্থিক সুবিধা নিয়ে রাঁতের আঁধারে গোপনে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের আলু হিমাগারে নেয়া হচ্ছে। এতে বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত আলু চাষি কৃষকেরা।এদিকে তানোরে হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘ লাইন ধরে যানবাহন দাঁড়িয়ে রয়েছে। রাস্তার পাশে এবং হিমাগারের সামনে খোলা আকাশের নিচে শত শত বস্তা আলু রেখে চাষিরা কয়েক দিন ধরে অপেক্ষা করছেন। একদিকে আলুর ভালো দাম না পেয়ে হতাশ কৃষকরা, অন্যদিকে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ নিয়েও নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাদের। মধ্যস্বত্ত্বভোগী ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে হিমাগার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আলু চাষি বলেন, বিগত ফ্যাসিট আওয়ানী সরকারের নিল নকশা (কৃষকদের আলু চাষে নিরুৎ সাহিত) বাস্তবায়ন করতে এসব করা হচ্ছে।কৃষকদের অভিযোগ এখন অধিকাংশ হিমাগারে আলু রাখছেন ব্যবসায়ীরা। আলু সংরক্ষণের কার্ড (অনুমতিপত্র) চাহিদামতো পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ কৃষকদের। আবার অধিকাংশক্ষেত্রে কার্ড পাওয়ার পরও হিমাগার গেটে আলু নিয়ে কৃষকদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে দিনের পর দিন। অথচ ব্যবসায়ীদের ট্রাক ট্রাক আলু ঢোকানো হচ্ছে হিমাগারগুলোতে।স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রান্তিক কৃষকের আলু কম মুল্যে কিনতে একশ্রেণীর হিমাগার মালিকের যোগ-সাজশে মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা সিন্ডিকেট করেছে। যেকারণে হিমাগারে জায়গা থাকার পরেও তারা জায়গা নাই বলে প্রান্তিক কৃষকের আলু নিচ্ছেন না। এটা কিছু না কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আর হিমাগার মালিক আলুর দাম কমানোর জন্য সিন্ডিকেট করছে। এতে প্রান্তিক কৃষকেরা আলু নিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করে হিমাগারে রাখতে না পেরে পানির দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তানোর চলতি মৌসুমে আলু চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ১১৫ হেক্টর। কিন্তু চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন।স্থানীয় আলু চাষিদের ভাষ্য, তানোরে ৭টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা প্রায় ২৮ লাখ ব্যাগ।একেকটি হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা ৪ থেকে ৮ লাখ ব্যাগ। অথচ ৩ লাখ ব্যাগ আলু উৎপাদনে প্রায় এ হাজার বিঘা জমির প্রয়োজন। তানোরে যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়েছে, তার সঙ্গে এই হিসেব যোগ বিয়োগ করলে হিমাগারে আরো জায়গা থাকার কথা। কিনত্ত প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে বলা হচ্ছে হিমাগারে কোনো জায়গা নাই। অথচ সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী ৬০ শতাংশ কৃষক এবং ৪০ শতাংশ ব্যবসায়ীদের আলু হিমাগারে সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্ত্ত সিংহভাগ কৃষক তাদের উৎপাদিত আলু এখানো হিমাগারে রাখতে পারেনি। তাহলে কার আলুতে হিমাগার ভরা হলো তা নিয়ে জনমনে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কৃষকেরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি করেছেন বিষয়টি অধিকতর তদন্তের।এবিষয়ে রাজশাহী হিমাগার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, হিমাগারের ভাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে বাড়ানো হয়েছে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, হিমাগারে বুকিং শুরু হয় আবাদ শুরুর অনেক আগে। অনেক ক্ষেত্রে এক বছর আগেই বুকিং হয়ে যায়। এখানে সিন্ডিকেটের কিছু নেই।
মন্তব্য