আনোয়ার হোসেন,কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী)প্রতিনিধি >>> আবহমান বাংলায় ষড় ঋতুর পরিক্রমায় প্রকৃতিতে এসেছে হেমন্ত। হেমন্তকে বলা হয় শীতের বার্তাবাহক। আর এ নবীন হেমন্তের জয়গানে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে হিম শীতল বাতাস। রবির উষার আকাশে নরম কুয়াশার ঘোমটা সরিয়ে উঁকি দিচ্ছে কমলা রঙের সূর্য।সূর্যের প্রখরতা কমে আঁটোসাটো হয়ে আসছে দিনের আলো। দিন গড়িয়ে সান্ধ আকাশে ধূসর কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে রাতের প্রকৃতি ।ভোরের আকাশে টুপটাপ শব্দে ঝরছে শিশির বিন্দু। এ শিশির বিন্দু দূর্বাঘাসে ডগায় মুক্তার দানার মতো জ্বল জ্বল করছে। এ শিশির বিন্দু যেন প্রকৃতির জমিনে টিপ পরিয়ে দিয়েছে। ধবধবে সাদা মাকড়সার জালেও শিশির বিন্দু জমিয়ে এক মনোমুগ্ধকর শিল্পকর্ম তৈরি করেছে। ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত স্নিগ্ধ-কোমল ও ধুসর কুয়াশার আবহের ঢাকা পড়ছে গ্রামাঞ্চলের পথ-ঘাট ও ফসলি ক্ষেত। কুয়াশা মোড়ানো ভোরে শহর ও গ্রামীন মেটো পথে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন গুলো চলাচল করছে। সাত সকালে নীড় ছাড়া পাখির কলকাকলী আর রবির উদিত সোনা মাখা রোদ যেন বলে দিচ্ছে আগাম শীতের বারতা। হেমন্তের এমন স্নিগ্ধ সকাল যেন প্রকৃতি জুড়ে সৃষ্টি করেছে এক নতুন আবহ। শহর গ্রামাঞ্চলের মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ফুটপাতে,রাস্তার মোড়ে, মোড়ে শীতের পিঠাপুলি তৈরীর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পাশাপাশি ফসল উৎসবের ঋতু হেমন্তের হাত ধরে আসা শীতের মাঠে মাঠে আগাম আলুসহ রকমারী সবজি চাষে ধুম পড়েছে। এমন কর্মযজ্ঞে কৃষাণ কৃষাণীরা বিরামহীনভাবে শীতের আগাম রবিশস্য বুননে ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন। এ ব্যাকুলতার হাল গৃহস্থির যান্ত্রিকতার কোলাহল, হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ আর কৃষকের পথভারে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠগুলো জমজমাট হয়ে উঠেছে। যেন এক গ্রামীণ মেলা বসেছে। যা মুগ্ধতা ছাড়িয়ে নজর কাড়ছে সবার। নিতাই পানিয়াল পুকুর সাতঘড়ি পাড়া গ্রামের ভোরের মুসল্লি আজিজুল হক বলেন,শরতের প্রখররোদ আর যারপনা পচা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। পরিশেষে টানা বৃষ্টি বাদলে এমন বৈরী আবহাওয়া ধুয়ে মুছে স্বস্তির বারতায় নবীন হেমন্তের প্রকৃতিকে ফকফকা করে তুলেছে। এতে করে হেমন্তের সকালে পুরো এলাকা কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে। রাতের শয্যায় প্রথম দিকে ফ্যান চালালেও শেষ রাতে পুরো শরীর জুড়ে আলতো শীতের শিহরণ তুলে ঘুম ভেঙে যায়, এসময় গায়ে হালকা কাঁথা কম্বল জড়াতে হয়। ভোর আকাশে পত্রপল্লব ও টিনের চালে মৃদু ছন্দে টুপুস -টাপাস করে শিশির বিন্দু পড়ছে । এতেই বোঝা যাচ্ছে এবার আগে ভাগেই দরজায় উঁকি দিচ্ছে শীত। এ হালকা শীত, দিন ও রাতের জীবনকে স্বস্তিময় করে তুলেছে। অপরদিকে প্রত্যুষে বের হওয়া বাহাগিলী উত্তর দুরাকুটি পশ্চিম পাড়া গ্রামের যুবক কাওছার হোসেন বলেন, বৈচিত্র্যময় ঋতু হেমন্তে দুর্বা ঘাসের ডগায় জমানো গোলাকার শিশির বিন্দুগুলো মুক্তার মালার মত দেখায়। যা প্রকৃতির দেওয়া এক অমূল্য অলঙ্কার। তার স্নিগ্ধতা,পবিত্রতা এবং এক অপার্থিব সৌন্দর্য মনে অন্য রকম অনুভূতি জাগায়। আর শিশির বিন্দুগুলোতে যখন সূর্যের আলো টিকরে পড়ে তখন শিশিরগুলো মুক্তার মালার মতো ঝকঝক করে। যেন চুপিসারে প্রিয়সীকে মাল্যদান (উপহার) দেয়ার জন্য পথপানে অধীর আগ্রহে চেয়ে আছে। শীতের আবহে প্রকৃতির এই ধরনের চিত্রকল্প মনে এক গভীর ও সুন্দর অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, হেমন্তকে সবচেয়ে চেনা যায় ভোরের শিশিরে। খুব ভোরের শীতল বাতাস, সবুজ পাতার গায়ে জমে থাকা শিশির বিন্দু এক অপার্থিব দৃশ্যমালা রচনা করে। এ সময়ে পাল্টে যায় প্রকৃতি ও মানুষ। শেষ বিকাল আর ভোরের প্রকৃতি কুয়াশার আবছা চাদরে ঢেকে যেতে শুরু করেছে। ঘাসের ডগায়, ধানের শীষে জমতে শুরু করেছে শিশির বিন্দু। বাতাসে হিম হিম ভাব অনুভূত হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এ গ্রামীণ জনপদে হালকা শীতের আমেজ দেখা দিয়েছে। এ আমজের অনুকুল আবহাওয়ায় শীতকালিন আগাম আলুসহ হরেক সবজি চাষে কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছে।
মন্তব্য