আনোয়ার হোসেন,কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী)প্রতিনিধি >>> হিন্দু ধর্মালম্বীদের অন্নপূর্ণা পূজা উপলক্ষে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে প্রাচীন বাংলার লোকজ ঐতিহ্যের টটুয়ার বান্নি মেলায় বাহারি পণ্যের পসরা বসেছে। স্থানীয়সহ দুরদুরান্তের সকল ধর্মের হাজার হাজার দর্শনার্থী-ভক্তের পদচারণা ও মেলবন্ধনে জমজমাট হয়ে উঠেছে বান্নি মেলা প্রাঙ্গণ। শুধু ঐতিহ্যের মেলা নয়,কোটি টাকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। এ মেলা উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের মেলাবর গ্রামের টটুয়ার দাংগায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩দিন ব্যাপী গ্রামীণ এ মেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রঙ বাহারি ও মুখরোচক ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর ছোট-বড় ৫শতাধিক স্টল বসেছে। শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে মেলাবর টটুয়ার দাংগার সরকারি খাস জমিতে অবস্থিত অন্নপূর্ণা মন্দিরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে থরে থরে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে আসা বিক্রেতারা। আর দুরদুরান্তর থেকে আগত নানা শ্রেণি পেশার ক্রেতার উপচেপড়া ভিড়ে বিকিনিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। ভাল বিক্রি বাট্টাতে খুশি বিক্রেতারা। এ মেলার বিশেষ স্থান দখল করে আছে কাঠ ও কামারের তৈরি নজরকারা বাহারি সব ব্যবহারিক জিনিসপত্র।পাশাপাশি মাটির পুতুল,মাটির ব্যাংক গাড়ি,কাঠের গাড়ি সিংহ, বাঘ,ঘোড়া,হাতি,হরিণ,খরখোশ,মাছ,টাকা রাখার ব্যাংক ও প্লাস্টিকের বিভিন্ন মনোহর খেলনা সামগ্রী সহ অসংখ্য মালামাল ও হস্ত-কুটির শিল্পসহ রমনীদের হরেক প্রশাধনীর দোকান বসেছে। আরো বসেছে ভাতের হোটেল,আচার-চাটনি, মোয়া- মুড়কি,বাদাম-তিলের খাজা,খই,সন্দেশ,লাল-সাদা চিনি-গুড়ের জিলাপি,রসোগোল্লা,বাতাসা,হাওয়াই মিঠাই, বেলুন,বাঁশের বাঁশি,ডাক-ডোল, মুখরোচক পানের মসলা গুয়ামড়ি,নকশা করা হাত ও তাল পাতার পাখা,শাঁখা-সিদুর,মাছ,ফলমূল,সবজিসহ আরো কত্ত কীর দোকান। শিশু-কিশোরদের আনন্দ-বিনোদনের জন্য মেলার আরেক প্রধান আকর্ষণ নাগরদোলা,পুতুল নাচ,চাকচড়ক,মোটর সাইকেল খেলা। মেলার আর এক আদি ঐতিহ্য তরকারীর মসলা রসুন। যা সকল শ্রেণির মানুষ মেলায় সুলভ মুল্যে রসুন কিনে সারা বছরের পারিবারিক মসলার চাহিদা মেটায়। এতে ধুম পড়েছ রসুন কেনায়। সাধ্যমত সবাই কিনছেন রসুন। কেউ ফিরছেনা খালি হাতে। দর্শনার্থী গীতা রাণী বলেন ছোট বেলা থেকে এ মেলায় আসি। এ থেকে প্রতি বছর এ দিনটির জন্য অধির অপেক্ষায় থাকি। গ্রামীণ এ মেলাতে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে দর্শন হয়। কুশল বিনিময় হয়। বিশেষ করে মেলাতে হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ ঐতিহ্যের নানা জিনিসপত্রের দেখা মেলে ও খাবার পাওয়া যায়। বড্ড ভালো লাগে। মাটির খেলনা বিক্রেতা আব্দুর রহীম বলেন, মাটির পুতুল, ব্যাংক গাড়ি, সিংহ,বাঘ,ঘোড়া,হাতি,হরিণ,খরখোশ,মাছ,টাকা রাখার ব্যাংকসহ হরেক রকম মাটির খেলনা বিক্রি করতে মেলায় এসেছি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো এসেছি। বাপ-দাদারাও এ মেলায় আসতেন। ইউএনও মৌসুমী হক ও বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলা রহমান বলেন,হিন্দু ধর্মালম্বীদের অন্নপূর্ণা পূজা উপলক্ষে শ্রীশ্রী অন্নপূর্ণা মন্দির কমিটির উদ্যোগে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ৪০০বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ এ মেলাকে ঘিরে ওই এলাকায় এখন উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। মেলাতে আগত ব্যবসায়ী ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য থানা পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থাসহ নিজে উপস্থিত থেকে তদারকি করা হচ্ছে। ওই মন্দির কমিটির সভাপতি বিরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, পঞ্জিকা অনুযায়ী ২১,২২ ও ২৩ চৈত্র অন্নপূর্ণা পূজা ও মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে মন্দিরে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটেছে।৩দিনের এ পূজায় বউ বাজারসহ নানা পূজা অর্চনা করা হয়। বিশেষ করে গ্রামীণ এ মেলায় সব ধর্মের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। ফুটে উঠেছে আবহমান বাংলার গ্রামীণ প্রতিচ্ছবি।
মন্তব্য