আনোয়ার হোসেন,কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী)প্রতিনিধি >>> উৎসব ও বিনোদন প্রেমী বাঙালির লোক শিকড়ের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মনোহর খেলাধুলার মধ্যে অন্যতম চিত্রাকর্ষক ছিল লাঠি খেলা। যা একসময় গ্রামীণ বৈশাখী মেলাসহ নানা উৎসব পার্বণে-মহরমে লাঠি খেলার জমজমাট আসর বসত।কিন্তু কালের বিবর্তনে ও আধুনিক প্রযুক্তির নানা বিনোদনের ভিড়ে গ্রামীণ লোকজ সংস্কৃতির লাঠি খেলা বিলিনের পথে।তবে বাঙালির হাজার বছরের লালন করা গ্রামীণ এ লোকজ ঐতিহ্য বর্তমান প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরাসহ বর্ষবরণকে প্রাণবন্ত করতে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে বর্ণিল ও মনোহর লাঠি খেলার আয়োজন করা হয়।গেল সোমবার বাংলা নববর্ষ ১৪৩২উদযাপন উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন নানা দুষ্প্রাপ্য অতীত ঐতিহ্য তুলে ধরার মাঝে গ্রামীণ আনন্দ-বিনোদনের অন্যতম অনুসঙ্গ লাঠি খেলার জমকালো ও বর্ণিল উৎসবের আয়োজন করেন। এ আয়োজনকে ঘিরে এ দিন আনন্দে মেতে উঠেন নবীন-প্রবীণ,শিশু-কিশোরসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।পহেলা বৈশাখের সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ লাঠি খেলার প্রদর্শনী শুরু হয়।পরে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে কিশোরগঞ্জ বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঘন্টা ব্যাপি চলে লাঠিয়ালদের লাঠি খেলার নানা চিত্রাকর্ষক প্রদর্শনীর কসরত। যা লাঠিয়ালদের হাতের মুঠোর লাঠি মিটি মিটি ঘোরানোর সাঁই সাঁই আওয়াজ ও আঘাতের খট-খট শব্দ,সানাইয়ের করুন সুর, ঢাক-ঢোলের মুহু-মুহু বাজনার তাল। এ তালে তালে তারা লাঠি খেলার নানা অঙ্গভঙ্গি ও কসরত প্রদর্শন করেন। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য চলে প্রাণপণ চেষ্টা। অপরাপর পাল্টা আঘাত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন লাঠিয়ালরা। এমন মনোমুগ্ধর দৃশ্য আর টান টান উত্তেজনার মিশেলে প্রানবন্ত এ লাঠি খেলা উপভোগ করেন চার পাশে উপচে পড়া দর্শনার্থীরা।কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বাজে ডুমরিয়া গ্রামের দক্ষ লাঠিয়াল দল এ খেলা প্রদর্শন করেন। এ সময় খেলার সরদার শাহাব উদ্দিন( ৬৫) বলেন, শৈশব থেকে আমি লাঠি খেলার সাথে সম্পৃক্ত।আগে গ্রাম,পাড়া-মহল্লায় নানা উৎসব পার্বণে লাঠি খেলা দেখিয়ে ভাল আয়-রোজগার হত। এখন আর আগের মতো খেলা হয় না।এতে আয়-রোজগারও কমে গেছে। গ্রামীণ আনন্দ-বিনোদনের খেলাগুলোকে রক্ষা করা একান্ত দরকার। রুহুল আমীন নামে এক (শিক্ষক)দর্শনার্থী বলেন,আধুনিক যুগে এ ধরনের গ্রামীণ খেলাধুলা হারিয়ে যেতে বসেছে। এখনকার প্রজন্ম মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাই বর্তমান প্রজন্মকে মোবাইল আসক্তসহ নানা সামাজিক অবক্ষয় থেকে রক্ষায় প্রতিনিয়ত এ ধরনের খেলার আয়োজন করা দরকার।এতো দিন বই-পুস্তকে জেনেছি লাঠি খেলার কথা। আজ বাস্তবে দেখে ভিশন আনন্দ লাগছে। তিনি আরো বলেন,সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য মনা ইউএনও মৌসুমী হক স্যারের ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় আজ গ্রামবাংলায় বিরল ও হারিয়ে যাওয়া লাঠি খেলাসহ নানা ঐতিহ্য দেখার সুবর্ণ সুযোগ হয়েছে।যা ইতিপূর্বে অন্য কোন ইউএনও’র আমলে এরকম আয়োজন চোখে পড়েনি।সত্যিকার অর্থে তিনি প্রশংসার দাবিদার। স্থানীয় সচেতন মহল জানান,বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাটি টিকিয়ে রাখতে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা একান্ত প্রয়োজন। তা না হলে চিরতরে হারিয়ে যাবে লোকশিকড়ের ঐতিহ্যবাহী এই লাঠি খেলা।আয়োজক উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)মৌসুমী হক বলেন,গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাওয়া নানা ঐতিহ্য ও গ্রামীণ খেলা ফিরিয়ে আনতে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে আমাদের এ আয়োজন। ভবিষ্যতেও এ ধরনের গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন অব্যাহত থাকবে।
মন্তব্য