কলামিস্ট -আব্দুল্লাহ আল মারুফ >>> বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা দীর্ঘদিন ধরে জটিল, সময়সাপেক্ষ ও দুর্নীতিগ্রস্থ অবস্থায় রয়েছে।ভূমি সংক্রান্ত সেবা পেতে সাধারণ মানুষকে একাধিক অফিসে ঘুরতে হয়।এটি হয়রানির অন্যতম কারণ। এই সমস্যার মূলে রয়েছে “ভূমি রেজিস্ট্রেশন” এবং নামজারির মাধ্যমে “খতিয়ান সৃষ্টি” দুই মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা।যেমন- রেজিস্ট্রি অফিস (আইন মন্ত্রণালয়) এবং ভূমি অফিস (ভূমি মন্ত্রণালয়)।এই বিভক্ত গঠন প্রণালি দুর্নীতিকে উস্কে দেয়।এই সমস্যা থেকে উত্তরণে “একক ভূমি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা (Unified Land Management System)” সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।বর্তমান কাঠামোগত অসঙ্গতি ১. দলিল নিবন্ধন শেষে “খতিয়ান সৃষ্টি’ করতে পুনরায় “ভূমি অফিসে” আবেদন করতে হয়।এতে সময় ও অর্থের অপচয় হয়।২. তথ্যের অমিল ও জালিয়াতির সুযোগ রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল নিবন্ধন থাকলেও “ভূমি অফিসে” খতিয়ান হালনাগাদ না হলে প্রকৃত মালিকানা প্রমাণিত হয় না।এ ব্যবধান জাল দলিল ও জোর পূর্বক ভূমি দখলের সুযোগ তৈরি করে।৩. দুর্নীতি ও হয়রানি-একাধীক ধাপে ধাপে ঘুরতে হয় বলে ঘুষ ও মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য বাড়ে।উন্নত বিশ্বের দৃষ্টান্ত -নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, কানাডা- সব দেশেই ভূমি মালিকানা, দলিল রেজিস্ট্রেশন এবং কর সংগ্রহ একক ডাটাবেজ এক অফিসে সম্পন্ন হয়।Torrens System (অস্ট্রেলিয়া)-একবার দলিল রেজিস্ট্রি করলেই সেই তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরকার অনুমোদিত মালিকানায় পরিণত হয়। ব্লকচেইন প্রযুক্তি (জর্জিয়া, সুইডেন)- জমির মালিকানা নিরাপদ, অপরিবর্তনযোগ্য রেকর্ড তৈরি করে। “একক ভূমি ব্যবস্থাপনার” সুবিধা- ১. একই অফিসে দলিল রেজিস্ট্রি ও নামজারি ২. একক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে খতিয়ান, ম্যাপ ও দলিল ৩. ঘুষ ও জালিয়াতির সুযোগ হ্রাস ৪. দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য সেবা ৫. উন্নত ভূমি কর সংগ্রহ ও পরিকল্পনা- বাস্তবায়ন সহজ হয়। প্রস্তাবনা (১) একটি জাতীয় ‘Unified Land Office’ গঠন যেখানে রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, খাজনা ও খতিয়ান একসঙ্গে পরিচালিত হবে। ২. যৌথ মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কমিটি গঠন -ভূমি ও আইন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে যৌথ নীতিমালা তৈরি। ৩. ডিজিটাল ভূমি প্ল্যাটফর্ম (e-Land Bangladesh) যেখানে GIS ম্যাপ, খতিয়ান, দলিল ও কর হিসাব সব এক জায়গায় থাকবে। ৪. পাইলট প্রকল্প- একটি জেলা বা বিভাগে পরীক্ষামূলকভাবে “একক ভূমি ব্যবস্থাপনা” চালু করে তার সফলতা যাচাই করা যেতে পারে।”একক ভূমি ব্যবস্থাপনা” কেবল প্রশাসনিক সংস্কার নয়, এটি সুশাসন, দুর্নীতিমুক্তি এবং জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া।প্রযুক্তি,রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং প্রশাসনিক সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে এই পরিবর্তন সম্ভব এবং এখনই সময় বাস্তবায়নের।
মন্তব্য