“এস. এম জহিরুল ইসলাম”>>> ড. মোঃ ফরহাদ হোসেন বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চরলক্ষীপুর গ্রামের নন্দীরজার এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মরহুম আবদুল কাদের মাওলানার সুযোগ্য সন্তান।তিনি সর্বশেষ কর্মরত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব হিসেবে।ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন একজন পরোপকারী মানুষ।এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সামাজিক কর্মকান্ডে তার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়।কথা খুবই কম বলতেন তিনি,শুনতেন বেশী।কর্ম জীবনে যেখানেই কর্মরত ছিলেন সুনাম দক্ষতা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।হঠাৎ তাকে নিয়ে আমরা দুঃসংবাদ পেলাম।৬ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে।মুলাদীর স্থানীয় একটি ইসলামী জলসায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে নিজ বাড়ীর উদ্দেশ্যে সড়ক পথে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে যান।বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মুলাদীর কাজিরচর এলাকায় মাহিদ্র দুর্ঘটনায় পরেন তিনি।মারাত্মক আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেলক্স নিয়ে যায।সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।নিভে গেল আমাদের একটি আলোকিত প্রাণ।ড. মোঃ ফরহাদ হোসেন আমার শশুরবাড়ীর দিক থেকে নিকটাত্মীয় হলেও আমার সাথে তেমন আগে পরিচয় ছিল না।তবে তার কথা শুনেছি অনেক।মুলাদী উপজেলা সমিতি ঢাকার সাংগঠনিক কর্মকান্ড করতে নিয়ে তার সাথে আমরা ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।সচিবালয়ে গেলেই সব সময় তার সাথে দেখা করি। সমিতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়।তার আপ্যায়নে আমি সব সময় মুগ্ধ হই।শত ব্যস্ততার মাঝেও আমাকে তিনি সময় দেন।মনে হলো আমাকে নিয়ে তার যেন কোন বিষয় কৌতুহল রয়েছে।একদিন তিনি বললেন,আপনার রুর্যাল জার্নালিস্ট ফাউন্ডেশন (আরজেএফ)’র সাংগঠনিক কার্যক্রম কেমন চলছে।আমি বললাম আলহামদুলিল্লাহ ভালই।তখন আমি জানতে চাইলাম আরজেএফ সম্পর্কে আপনার কি কোন ধারণা আছে?তিনি বললেন,আমি আরজেএফ’র একজন সাংগঠনিক ফলোয়ার।সংগঠনটি দেশের তৃণমূল সাংবাদিকদের কল্যাণে প্রতিনিধিত্ব করে যাহা খুবই প্রশংসনীয়।তিনি আরও বললেন, আরজেএফ’র প্রতিষ্ঠাকালীন ইতিহাস,১/১১ এর সময়ের এর সাহসী সাংগঠনিক ভূমিকা, রুর্যাল জার্নালিস্ট ফাউন্ডেশন (আরজেএফ) এর রেজিষ্ট্রাড কার্যালয় খদ্দরবাজার শপিং কমপ্লেক্স এর অফিসের কার্যক্রম সবই তার জানা।তিনি আরজেএফ’র নিয়মিত মাসিক প্রকাশনা আরজেএফ ভয়েস নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করলেন।বললেন একটি সংগঠনের প্রকাশনা একটি শক্তিশালী প্লাটফর্ম।সংগঠনকে শক্তিশালী করতে প্রকাশনা সব সময় সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। এরপর থেকে যখনই যেতাম তার সাথে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল আরজেএফ’র সাংগঠনিক কার্যক্রম ও আরজেএফ ভয়েস প্রকাশনা বিষয় নিয়ে।ড. ফরহাদ হোসেন ছিলেন মুলাদী উপজেলা সমিতি ঢাকার উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য।ড. ফরহাদ হোসেনকে হারিয়ে আমরা একজন মুলাদীর কৃতি সন্তানকে হারিয়েছি।আমার স্মৃতিচারণ ক্ষুদ্র হলেও তার সাথে আমার চলার পথের যে ক্ষনিকের স্মৃতি তা খুবই অর্থবহ।একটি মজার বিষয় বলি,ড. মোঃ ফরহাদ হোসেন যখন পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করলেন।চিঠি প্রাপ্তির সাথে সাথেই আমার হোয়াটঅ্যাপে চিঠিটি দিলেন এবং বললেন,আরজেএফ ভয়েস এর পরবর্তী সংখ্যায় খবরটি প্রকাশ করতে হবে।আমি বললাম আরও ২/১টি পত্রিকায় সংবাদটি প্রকাশ করি।তখন সে নিষেধ করে বলল,আরজেএফ ভয়েস এ প্রকাশ করলেই হবে।আমি আশ্চর্য যে,দুর থেকে একটি সংগঠন ও তার প্রকাশনার উপর এত নিখুত ভালোবাসা কি করে তার মধ্যে হলো।সড়ক দুর্ঘটনায় চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে ড. মোঃ ফরহাদ হোসেন।রেখে গেছেন ২টি কন্যা সন্তান।স্ত্রী পেশায় স্কুল শিক্ষিকা।তারা ছিলেন ৪ ভাই ৪ বোন।এলাকার একটি শিক্ষানুরাগী পরিবার হিসেবে সবার কাছে তার পরিবার সমাদৃত।ড. মোঃ ফরহাদ হোসেন ছিলেন ২১তম বিসিএস এর একজন মেধাবী কর্মকর্তা।তিনি ঢাকাস্থ মুলাদীর বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানে তার পৃষ্ঠপোষকতা লক্ষনীয়।মুলাদী উপজেলা সমিতি ঢাকার প্রতিটি কর্মসূচি সফল করতে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত সকলের সাথে দিন রাত পরিশ্রম করতেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতেন।তার অকালে চলে যাওয়ায় মুলাদীর প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে।এখনও আমরা কাঁদি নিরবে নিভৃতে।আল্লাহর কাছে আমাদের প্রত্যাশা ড. মোঃ ফরহাদ হোসেনকে তুমি বিনা হিসেবে বেহেস্ত নসিব কর।
মন্তব্য