রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ<<>>
রংপুরের তারাগঞ্জে পরিবারের কাছে পাওনা টাকা আদায় করতে না পেরে কবর খুঁড়ে এক নারীর মরদেহ তোলার চেষ্টা করেছেন পাওনাদার আরেক নারী। কবর খোঁড়ার সময় আশপাশের লোকজন দেখে ফেলার পর ওই নারী ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে উত্তেজিত লোকজনদের শান্ত করে পাওনাদার ওই নারীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের খিয়ারডাঙ্গা গ্রামের আদাহইন্না গ্রামের আব্দুল গফুরের স্ত্রী সাহেদা বেগম গত ৭ জুন মারা যান। তার পরিবারের লোকজন মৃত নারীর কাছে কেউ কোনো পাওনাদার আছেন কি না খোঁজ করলেও কেউ সেদিন সাড়া দেননি। পরে স্থানীয় খিয়ারডাঙ্গা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।সাহেদার কাছে বিভিন্ন সময় ধার বাবদ এক লাখ ২০ হাজার টাকা পাওনা আছে এমন দাবি তুলে একই গ্রামের জোনাব আলীর স্ত্রী আছেনা বেগম কবর দেওয়ার পরেরদিন সাহেদার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে পাওনা টাকার বিষয়ে কথা বলেন।সোমবার (১২ জুন) আবারও আছেনা বেগম পাওনা টাকা চাইতে সাহেদার পরিবারের সদস্যদের কাছে যান। এসময় সাহেদার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আছেনার বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আছেনা সেখান থেকে রাগ করে বের হয়ে বাড়িতে গিয়ে তার স্বামী জোনাব আলীকে সঙ্গে নিয়ে সকাল ১০টার দিকে কবরস্থানে গিয়ে সাহেদার কবর খুঁড়তে থাকেন।আশপাশের লোকজন তাকে কবর খুঁড়তে দেখে বাঁধা দেন। একপর্যায়ে আছেনা তার স্বামীকে নিয়ে বাড়িতে চলে যান। খবর পেয়ে সাহেদার পরিবারের লোকজন কবরস্থানে গিয়ে কবর খোঁড়া দেখে তারাগঞ্জ থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শেষে কবরটি ঢেকে দেওয়ার অনুমতি দিলে ধর্মীয় নিয়ম মেনে কবরে মাটি চাপা দেওয়া হয়।নিহত সাহেদার মেয়ে সাবিনা বেগম বলেন, আছেনা মায়ের কাছে টাকা পাবেন দাবি করে সকালে আমাদের বাড়ি আসেন। কখনো ৩০ হাজার, কখনো ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পান বলে দাবি করেন। আমাদের থাকার জায়গা ছাড়া কোনো সহায়-সম্বল নেই। আছেনা যে টাকা দাবি করছেন তা দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই। আছেনা টাকা পাবেন এমন কথা মা কখনো আমাদের বলেননি। তাই আছেনাকে বলি, টাকা পেলে মাফ করে দিতে। কিন্তু তিনি নারাজ হওয়ায় রাগ করে বলি, যার কাছে টাকা পান তার কাছ থেকে নেন। এরপর আছেনা ও তার স্বামী মায়ের কবর খুঁড়তে যান।এ বিষয়ে আছেনা বেগম বলেন, আমি সাহেদার সঙ্গে অনেক আগে থেকেই টাকা লেনদেন করি। কয়েক মাস আগে সাহেদার বাড়িতে একটা মামলা হওয়ার পর আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেয়। কথা ছিল টাকা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত ছয় মাস পরপর ছয় মণ করে ধান দেবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত টাকাও পরিশোধ করেনি কোনো ধানও দেয়নি।তিনি বলেন, এরপর আমার নামে আছেনা এনজিও থেকে ৭০ হাজার টাকা লোন নেয়। প্রতি সপ্তাহে সেই টাকার কিস্তি দিতে হয়। প্রথম দুটি কিস্তি পরিশোধ করলেও পরে আর কোনো কিস্তি দেয়নি তারা। আজও (সোমবার) কিস্তি ছিল। এই কিস্তির জন্য আমার স্বামী আমাকে মারধর করছে প্রায়ই। আজও আমার স্বামী আমাকে মেরেছে। মার খেয়ে ওদের বাড়িতে টাকা চাইতে যাই। কিন্তু ওরাও যখন আমাকে বের করে দেয় তখন আমি রাগ করেই এ ঘটনা ঘটিয়েছি।তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পাওনাদার দাবি করা নারীকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
মন্তব্য