জেলা প্রতিনিধি নড়াইল>>> হেমন্তে কাটা হবে ধান, আবার শূন্য গোলায় ডাকবে ফসলের বান’।কবি তার ‘এই নবান্নে’ কবিতায় এভাবেই বর্ণনা দিয়েছেন হেমন্ত ঋতুর।বাংলার মাঠে মাঠে বাতাসে দুলছে আমন ধানের সোনালি ধানের শীষ আর আনন্দে দুলছে কৃষকদের মন।কৃষকের মনে উঁকি দিচ্ছে এক ভিন্ন আমেজ।সোনালী রংয়ে ঘেরা রোপা আমনের মাঠ দেখে বারবার তাকায় কৃষক,সোনালী সাজে সেজেছে বাংলার মাঠ ও প্রকৃতি।কেউ কেউ ঘরে তুলছে সোনালি আমন ধান।তবুও নেই, নবান্ন উৎসব।হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য।নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় সোনালি ফসল ঘরে তুলতে শুরু করেছেন অনেক আমন চাষিরা।গ্রাম-বাংলায় থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালি জাতির হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ওই সব প্রাচীনতম নবান্ন উৎসব।এ নবান্ন উৎসবকে মনে করা হতো অসাম্প্রদায়িক এক উৎসব। আশ্বিনের শেষে ও কার্তিকের শুরুতে কৃষকের নতুন বার্তা নিয়ে আমন ধানের আগমন।কৃষকের উৎপাদিত সোনালি ধানের স্বর্ণালি দিন।উৎসব বাঙালি জাতিকে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করে অথচ বর্তমানে গ্রাম-বাংলার শিশুরা যেন স্বপ্নের মধ্যে নবান্নের উৎসবের ইতিকথা বাবা-মা কিংবা দাদা-দাদির মুখে মুখে শুনে বিশেষ করে বাঙালির ইতিহাস,ঐতিহ্য,সংস্কৃতি।কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস এলেই গ্রাম-বাংলায় বোঝা যেত যে নবান্ন আসছে।গ্রামবাংলায় বসত পালাগান,জারিগান,লোকনাট্য,কেচ্ছা-কাহিনী,ভাওয়াইয়া গান, লালনগীতি ও বাউল গানের আসর।নাচ আর গানে মুখরিত হতো গ্রাম বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল।বাংলাদেশে বর্তমান পালাগান,জারিগান আর বাউল গানের আসর বিলুপ্তের পথে। অপসংস্কৃতি,ফেসবুক,ইউটিউব ও ধর্মীয় প্রচারের নামে নারীদের ভোগপিপাসা অথবা পণ্যের সঙ্গে করা হচ্ছে তুলনা। সেরকম আর চোখে পড়ে না,নবান্ন উৎসবের সেই নতুন ধানের আলো চাল ও সেই চালের আটা দিয়ে পাটিসাপটা,পুলি,কুলি, ভাপা পিঠা,পায়েশসহ নানা ধরনের পিঠার আয়োজন।তবে বর্তমানে আমনের জায়গা দখল করেছে আউশ-বোরো ধান। বিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান বাজারে আসায় নতুন ধানের গন্ধ হারিয়ে যাচ্ছে এবং স্বল্প সময়ে ওইসব ধান উৎপন্ন হওয়ায় গ্রামবাংলার ঐত্যিবাহী নবান্ন উৎসব হারিয়ে যেতে বসেছে বলেও মনে করেন কৃষকেরা।উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলার ১২ ইউনিয়ন একটি পৌরসভায় হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার ২ শ ৩০ হেক্টর। এর মধ্যে চাষাবাদ হয়েছে ১১ হাজার ২৬০হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশি হয়েছে এবার।উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ৩৪ হাজার ৯৮৪ মেঃটন।উপজেলা আমাদা গ্রামের গ্রামের কৃষক হাসান মোল্যা,পান্নু শেখ,সোনা মিয়া সহ কয়েকজন কৃষক জানান,এবার ভরা বর্ষায় বৃষ্টি না থাকায় সেচ দিয়ে জমি চাষাবাদ করতে হয়েছে।যার খরচ বেশি হয়।আশা করছি ভাল ফলন হলে পুষিয়ে নিতে পারবো।হামারোল গ্রামের তিতু নামে এক কৃষক জানান,আগের মতো আর নবান্ন নেই।ছোটবেলায় আমন ধান কাটলে শুরু হয় পিঠা খাওয়ার ধুম।আমি ধান আবাদ করলেও সেই আমেজ নেই।কুচিয়াবাড়ি গ্রামের কৃষক মোক্তার শেখ বলেন,আমরা আমন ধান কাটা শুরু করেছি। ধান তো ভালোই হইছে,দাম তেমন একটা ভালো না।নবান্ন/পিঠের আমেজ আর নাইরে ভাই।সেই দিন আর এই দিন মেলা তফাৎ মিয়াভাই।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা(অতিরিক্ত দায়িত্ব) কৃষিবিদ মোঃ রোকনুজ্জামান বলেন,ইতোমধ্যে উপজেলায় রোপা আমন ধান কাটা শুরু করেছে।অনেকেই ধান ঘরে তুলেছেন।কৃষি অফিস থেকে আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছি।মাঠপর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সময়মত পরামর্শ দেওয়ায় আমন ক্ষেতে গত বছরের থেকে এবার রোগবালাই কম।আমরা আশা করছি, কৃষক তার ন্যায্যমূল্য পাবে।
মন্তব্য