নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতকানিয়া >>>
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণ অভ্যুত্থানে
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও দক্ষিন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় থামেনি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের অবৈধ অস্ত্রধারী চিহ্নিত ক্যাডারদের তান্ডব। নিত্য অবৈধ অস্ত্রের মহড়া সহ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেস্টা চালিয়ে এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও তাদের গ্রেফতারে প্রশাসনের রহস্যজনক নীরব ভূমিকায় জনমনে দিনদিন অসন্তোষের দানা বেঁধে উঠছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পতিত স্বৈরাচারী সরকারের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও হত্যা মামলার আসামি হয়েও এলাকায় শক্ত অবস্থান নিয়ে তাদের তান্ডব অব্যাহত রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিনও জিয়াউর রহমান মিনহাজ গ্রুপের দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উপজেলার আমিলাইষ ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডে এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে বিগত ২৯ মে উপজেলার আমিলাইষ ইউনিয়নের দক্ষিণ আমিলাইষ শাহপারওয়াল বাড়ি এলাকায় ঘটে যায় নির্মম এক হত্যাকাণ্ড, যে হত্যাকাণ্ডটি নাড়া দিয়েছিল সুশীল সমাজসহ গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের অন্তরে। নিহত মো: মহিউদ্দিন (২৮) ছদাহা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর ছদাহা সরদার পাড়া এলাকার আলী আহমদের ছেলে। সে পেশায় পিকআপ চালক ছিল। তাকে পরিকল্পিত ভাবে ছদাহা থেকে ভাড়া করে এনে চোর সন্দেহ বলে শাহপারওয়াল এবতেদায়ী মাদ্রাসায় এলাকায় হত্যা করে মো: মিনহাজ উদ্দিন ও তার গ্যাংরা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২৯ মে রাত আনুমানিক ৯ টার সময় দক্ষিণ আমিলাইষ শাহপারওয়াল এবতেদায়ী মাদ্রাসা সংলগ্ন অবস্থিত মাঠে ছদাহা ইউনিয়নের এক পিকআপ চালককে পরিকল্পিতভাবে নির্মমভাবে রড়, বাটাম ও লোহা দিয়ে পিটিয়ে মেরেছে স্থানীয় কিশোর গ্যাং লিডার মো: মিনহাজ উদ্দিন ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা।
মামলার এজাহার মতে হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা, দক্ষিণ আমিলাইষ শাহপারওয়াল বাড়ি এলাকার মাহমুদুল হকের ছেলে কিশোর গ্যাং লিডার মো: মিনহাজ উদ্দিন, মো: ইউনুস প্রকাশ ইউনুস বদ্যের ছেলে কামরুল হাসান, সিরাজুল ইসলামের ছেলে হেলাল উদ্দিন, বদি আলমের ছেলে মো: জিহান, মো: বদিউর রহমানের ছেলে মো: বাবুল, আবুল হোসেনের ছেলে মো: সায়েম, নজির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ হাছান, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ফিরোজ আহমদের ছেলে জিয়াবুল হক, আবদুল মান্নান এর ছেলে তরফান, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ হোসেন এর ছেলে মো: গিয়াস উদ্দিন। এছাড়া ও অজ্ঞাত নামা চার পাঁচ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানিয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পতিত স্বৈরাচারী সরকারের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় মো: মিনহাজের গ্যাংয়ের মধ্যে রয়েছে আরো বেশ কিছু সন্ত্রাসী তারা হলেন, মো: ইউনুসের ছেলে মো: ইউছুপ, আবুল খায়ের এর ছেলে মো: মোরশেদুল আলম, আবুল হাসিমের ছেলে মো: মহিউদ্দিন, মৃত অলি আহমদের ছেলে মো: জাহেদ হোসেন, বদি আলম, আমানুল হকসহ একাধিক ব্যাক্তি।
উল্লেখ্য, হত্যাকাণ্ডের পরে পিকআপ চালক হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছিল আমিলাইষ ইউনিয়নের জনসাধারণ সেসময় আমিলাইষ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সহ স্থানীয় জনসাধারণ এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি জানিয়েছেন। এরপরই এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছিল ছদাহা ইউনিয়নের জনসাধারণ, এসময় সেখানে উপস্থিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক স্বচ্ছ রাজনীতিবীদ খ্যাত নুরুল আবছার চৌধুরীও এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত নিজ দলের সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবিতে স্বোচ্ছার হয়েছিলেন। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে আল্টিমেটাম দিয়েছিল সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরীও তিনি আসামিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত উপজেলা আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ে অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছিলেন। সাতকানিয়া কেরানীহাট মোটর চালকলীগের নেতাকর্মীরাও এক মানববন্ধনে হত্যাতকারীদের শাস্তি দাবি জানিয়েছিল।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের তিন মাস পার হলে নির্মম এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা প্রকাশ্যে এলাকায় শক্ত অবস্থান নিয়ে এখনো ঘুরাঘুরি করলেও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সুশীল সমাজ। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকারীদের নিকট বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র থাকায় এলাকায় তাদের আধিপত্য বিস্তার এখনও রয়ে গেছে।
প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে কথা হলে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত (কর্মকর্তা) মিজানুর রহমান বলেন, দেশের একটা পট পরিবর্তনের পর স্বভাবতই সারাদেশের সাথে সাতকানিয়া থানার কার্যক্রমেও একটু শ্লথগতি সৃষ্টি হয়েছিল, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সাতকানিয়া থানার কার্যক্রমেও দ্রুত স্বাভাবিকতা ফিরে আসছে। আমরা যেকোন ধরনের অপরাধ সহ সকল অপরাধীকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে বদ্ধ পরিকর।
ঘটনার বিষয় এবং অবৈধ অস্ত্র নিয়ে এলাকায় তাদের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জানতে চাইলে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: শিবলী নোমান জানান, সময়ের সাথে সাথে দেশের পুলিশি কার্যক্রমে দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। সাতকানিয়ার আমিলাইষের মহিউদ্দিন হত্যাকান্ডের বিষয়টি আমাদের আমলে আছে, মহিউদ্দিন সহ এলাকার সকল অপরাধীদের গ্রেফতার সহ আইন শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়নে দ্রুত অভিযান পরিচালনা সহ যৌথ বাহিনীর অভিযানে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে মাঠে নামবে।
হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া মো: মহিউদ্দিনের পরিবার ( নিহত মহিউদ্দিনের বোন ইয়াসমিন জানায়, আমার ভাইয়ের হত্যাকারীরা এখনো গ্রেফতার হয়নি, সরকার পরিবর্তন হলেও আগের সেই স্বৈরাচারী সরকারের চিহ্নিত খুনি ও সন্ত্রাসীরা অবৈধ অস্ত্রসহ এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি দ্রুত আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করছি।
সাতকানিয়া ছদাহা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোর্শেদুর রহমান বলেন, মহিউদ্দিনের হত্যাকারীরা এখনো গ্রেফতার হয়নি, তাদের গ্রেফতার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে আমি সর্বশেষ উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছি।
চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার বিষয়ে জানতে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করলে তিনি মহিউদ্দিন হত্যাকান্ডের বিষয়ে জ্ঞাত আছে জানিয়ে বলেন, দ্রুততম সময়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথবাহিনী মাঠে নামবে, তখন একই সাথে মহিউদ্দিন হত্যাকারী সহ সকল অপরাধীদের গ্রেফতারে পুলিশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
মন্তব্য