আনোয়ার হোসেন-কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী)প্রতিনিধিঃ
কৃষিনির্ভর বাংলায় জমি চাষাবাদে একজোড়া গরু-মহিষ লাঙ্গল জোয়াল মইয়ের সাথে কৃষকের সম্পর্ক সেই আদিকাল থেকে।আর কৃষির গোড়াপত্তন থেকে দেশের অন্য অঞ্চলের ন্যায় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে গ্রামীণ কৃষিজীবি মানুষের ফসল ফলানোর একমাত্র অবলম্বন ছিল গরু-মহিষ দিয়ে হালচাষ।গৃহপালিত প্রাণীর মধ্যে গরু থেকে মহিষ ছিল শক্তিশালী।যা মহিষের হালে অধিক জমি চাষ দেয়া যেত।ভারি বাহনে মহিষের গাড়ির জুড়ি ছিলনা।এজন্য গৃহস্থ পরিবারগুলো২/৪ জোড়া মহিষ পালত।অনেক নি¤œ আয়ের মানুষের জীবিকার উৎস ছিল।কিন্তু এ যুগের মানুষের অসীম চাহিদা আর অভাবময় জীবনে উন্নয়নের ছোঁয়া দিতে কৃষিতে আবির্ভূত হয়েছে অত্যাধুনিক কৃষিযন্ত্র।যন্ত্রিকতার কল্যাণে সময়ের সাথে পাল্লা দিতে না পারায় পরিবেশ বান্ধব কাঠের লাঙ্গলের জায়গায় এখন স্থান করে নিয়েছে কলের লাঙ্গল।এতে বাঙ্গালির হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যের স্মারক গরু-মহিষ দিয়ে হালচাষ প্রায় বিলুপ্তির পথে।কালেভদ্রে গরুর হাল চোখে পড়লেও মহিষ দিয়ে হাল চাষ বিরল।বর্তমান যন্ত্রনির্ভর যুগের কৃষকরাও ঝুঁকছেন দ্রুতগতির ট্রাক্টর,পাওয়ার টিলারে জমি চাষাবাদে।হয়তো এই সনাতনী পদ্ধতির হালচাষ কৃষকের জীবন থেকে উঠে আসবে গল্প,কবিতা,নাটক বা অন্য কোন সিয়িালে।আধুনিক সমাজে পৌঁছে যাবে শিল্পীর চিত্রকর্মে বইয়ের প্রচ্ছদে প্রচ্ছদে।স্থানীয় প্রবীণরা বলেন,এক সময় লাঙ্গল,জোয়াল,মই,বলদ,মহিষ ছাড়া চাষাবাদ কল্পনাও করা যেতনা।এখন গোচারণ ভূমির অভাব,গো-খাদ্যের বাজার চড়া,আগের মত হাট-বাজারে মহিষ বিক্রি হয়না,মহিষ বিলুপ্ত হওয়ায় বেড়েছে এর দামও,কৃষিতে যান্ত্রিকরণ,সব কিছু মিলে মহিষ আমাদের সমাজ সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।নতুন প্রজন্মের কাছে মহিষ যেন এক বিরল প্রাজাতির প্রাণী।কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেলেও জীবিকার তাগিদে বাংলার এ অতীত ঐতিহ্য লাঙ্গল ও মহিষের হাল ধরে রেখেছেন কিশোরগঞ্জ সদর ইউপির ইসমাইল মাঝাপাড়া গ্রামের আবুজার রহমান।দেখা যায় তিনি ইসমাইল যদুমনি গ্রামের কৃষক লেবু মিয়ার জমিতে মহিষ দিয়ে হালচাষ করছেন।এ সময় আবুজার রহমান বলেন,বাপ-দাদারাও অন্যের জমিতে মহিষ দিয়ে হালচাষ করে সংসার চালাত।যা ঐতিহ্য হিসেবে আজও ধরে রেখেছি।আগে হালের ব্যাপক চাহিদা ছিল।এখন আর নেই।এলাকায় হালের লাঙ্গল না থাকায় টুকিটাকি জমি চাষে আমার মহিষের হালের হাঁকডাক চারিদিকে।
সিরিয়াল অনুযায়ি চাষ করা হয়।প্রতিদিন ২হালে ১২শ টাকা আয় হয়।এ অর্থ দিয়ে মহিষের খাদ্য ও পরিবার চালাই।তিনি আরো জানান,স্থানীয় হাটে কোন মহিষ উঠেনা।দিনাজপুর জেলার বর্ডার এলাকার হাট থেকে প্রায় ৩লাখ টাকা দিয়ে ১জোড়া মহিষ কিনেন।কিশোরীগঞ্জ বহুমূখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি শিক্ষক জ্যোতি কৃষ্ণ রায় বলেন,লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষ পদ্ধতি পরিবেশ বান্ধব।
মহিষের গোবর থেকে নির্ভেজাল জৈবসার পাওয়া যায়।লাঙ্গলের ফলায় জমির গভীর পযর্ন্ত ওলট-পালট হয়ে নিচের পুষ্টিগুন ওপরে চলে আসে,বায়ু সহজে চলাচলের পরিমান বাড়িয়ে দেয়,মাটির আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে,কেঁচোসহ উপকারি কীটপতঙ্গ ধ্বংস হয়না,জমিতে ঘাস কম হয়,গোবর মাটিতে পড়ে জৈব সারে ফসল ভাল হত।তাই এই পদ্ধতি কৃষকের জন্য লাভজনক ও পরিবেশ সহায়ক ছিল।তবে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে হালচাষে সময় কম লাগে।এতে জনবল প্রয়োজন হয়না। এ পদ্ধতির হাল চাষে কৃষক ঝামেলা মুক্ত মনে করেন।স্বল্প সময়ে জমি চাষ করতে গিয়ে জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে।আগের মত খাবারে স্বাদ নেই।সময়ের আবর্তে মহিষের হাল,কাঠের লাঙ্গল,জোয়াল,বাঁশের মই কৃষি ও কৃষকের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন,যান্ত্রিক যুগের কৃষিতে ফসল আবাদে বাড়ছে কৃষি যন্ত্রের ব্যবহার।এতে সনাতনী কৃষি পরিণত হচ্ছে এক আধুনিক কৃষিতে।এখন জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে ধান কাটা-মাড়াই,ঝাড়া,শুকানো সবই হচ্ছে যন্ত্রের মাধ্যমে।কৃষকরাও সময় সাশ্রয়ী যন্ত্রের দিকে ঝুঁকছে।
মন্তব্য