আবদুর রাজ্জাক, কক্সবাজার।। ক’দিন আগে পালং নার্সিং ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু সংবাদটি শুরুতেই রহস্যজনক মনে হয়েছিল।
আস্তে আস্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু হয়েছে।
আজ ২০ জুন সন্ধ্যায় Progyananda Bhikkhu নিজের টাইমলাইনে এ সংক্রান্ত একটি পোষ্ট করেছেন। তা হুবহু তুলে ধরা হলো:-
মেয়েটির সাথে চরম অন্যায় করা হয়েছে।
প্রায় প্রতিদিন কখনো সরাসরি ফোনে, কখনো মেসেজ করে কনক কুরুচিপূর্ণ ভাষায় সুমি’কে গালিগালাজ করত। ঘটনার দিন রাতে সুমি’কে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে অশ্রাব্য ভাষায় (প্রকাশ করার মতো না) গালিগালাজ করেই যাচ্ছে কনক। সবথেকে হৃদয় বিদারক ঘটনাটি তারপর ঘটতে চলেছে।
আত্মহত্যা করার আগে সুমি এবং কনক বড়ুয়ার মধ্যে হওয়া কথোপকথন।
সময় : রাত ১০টা ৩০ মিনিটে শুরু
——————————————-
কনক : আমি বাড়িতে এলে তোকে আগামী ২৭ তারিখ ডিভোর্স দেব। তোর দাদা, মা, বাবাকে কোর্টবাজার আসতে বলবি
সুমি : আমার জন্য আমার পরিবার গিয়ে ছোট হবে কেন? যদি এমন কিছু হয় তাহলে বড় কিছু হয়ে যাবে।
কনক : আমি চাই তুমি আত্মহত্যা কর। মরে যাও।
সুমি : ঠিক তো?
কনক : সত্যি
সুমি : ঠিক আছে। তুমি সকালের জন্য রেডি থেকো। ভগবানের দিব্যি করে বলছি।
কনক : শুভ কামনা
সুমি: কাউকে কিছু করতে হবে না। যা হবে আজকে হবে। তোমাকে বিয়ে করে ভুল যখন করেছি ভুলের মাশুলও দিয়ে দেব। বিদায়।
কনক : তোর বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই
সুমি : তোমার মতো লোক যেন আমার পরজন্মে না জুটে
কনক : হ্যাঁ, তুই এখন ফাঁসি খা, এখন
সুমি : ঠিক আছে, অপেক্ষা কর
কনক : ভিডিও কল দিস, খাওয়ার আগে। নিজের চোখে যেন দেখতে পাই।
সময় : রাত ১১টা ৫৯ মিনিট
—————————–
সুমি গলায় ফাঁস নেয়ার জন্য সবকিছু প্রস্তুত করে কনক কে ভিডিও কল দিল। মেসেজে দেখা যায় সুমি গলায় ফাঁস নেয়ার আগ পর্যন্ত কনকের সাথে ভিড়িও কলে কথা বলেছিল। কনক তাকে বারণ করবে তো দূরের কথা উল্টো তাকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়েই যাচ্ছিল। একপর্যায়ে সুমি ঠিকই আত্মহত্যা করে বসে। তিলে তিলে একটু একটু করে নিজেকে গড়ে তোলা একটি তরতাজা প্রাণ ঝরে গেল।
সুমি বড়ুয়ার সাথে কনক বড়ুয়ার বিয়ে হয় ২০২৩ সালের ১৬ জুন। উভয় পরিবারের সিদ্ধান্ত এবং সম্মতিক্রমে তারা নোটারী (হলফনামা) করে বিয়ে করে। সুমি বড়ুয়া রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের বাইপাস সংলগ্ন পশ্চিম মেরংলোয়া গ্রামের খোকন বড়ুয়ার (বাচ্চু) কন্যা। কনক বড়ুয়া উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের শৈলরঢেবা গ্রামের মৃত ভূবন বড়ুয়ার পুত্র।সুমি বড়ুয়া উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে নার্সিং এ ডিপ্লোমা করছিল।কনক বড়ুয়া পুলিশের কনস্টেবল পদে কর্মরত এবং বর্তমান চট্রগ্রামের হালিশহর পুলিশ লাইনে আছেন।
সুমির পরিবার বলছে, বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই কনক বড়ুয়া সুমি কে নির্যাতন করা শুরু করে। একপর্যায়ে মানসিক নির্যাতন চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। সুমির পরিবারের দাবী, প্রথমে সুমিকে ৮০ হাজার টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপ দেয় কনক। সুমির পরিবার কোন ভাবে ধার-দেনা করে দুই দফায় (৫০,০০০+৩০,০০০) ওই টাকা গুলো ব্যবস্থা করে কনক বড়ুয়া কে দেন। কিছু দিন যেতে না যেতেই কনক আবারো ৫০ হাজার টাকা দাবী করতে থাকেন। কনক যখন তখন ফোন করা মাত্রই সুমি ফোন রিসিভ করতে একটু এদিক সেদিক হলেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা শুরু করত বলে সুমি বড়ুয়ার পরিবার অভিযোগ করেছেন।
সর্বশেষ ডিভোর্স দেয়ার জন্য চাপাচাপি করতে থাকে। সুমি তাকে বার বার বুঝিয়ে বলে যে, তাতে আমার ভবিষ্যত জীবনের কি হবে? আমার মান-সম্মানের কি হবে? আমার পরিবারের কি হবে? তাছাড়া আমার জীবন টা তো নষ্ট হয়ে গেছে। সুমির আকুতিতে কনকের মন এতটুকু গলেনি।
হয়তো কেউ কেউ বলবেন সুমি আত্মহত্যা করতে গেল কেন? মানছি সুমির সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল। তাই বলে কি কনকের অপরাধ গৌণ হয়ে যাবে? তাই বলে কি কনকের অপরাধ ঢাকা পড়ে যাবে?
কপি পেস্ট
মন্তব্য