এনামুল হক রাশেদী,চট্টগ্রাম >>> চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানা এলাকায় নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবনে চাঁদাবাজির অভিযোগে মো. দিদার (৩৬) নামে এক যুবককে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সোয়া ১০টার দিকে পাঁচলাইশ থানাধীন নাজিরপাড়া রেললাইন সংলগ্ন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত পাঁচ বছর ধরে আহাম্মদ ছফা নামে এক ব্যক্তি হামজারবাগ এলাকায় ‘হোসাইন টাওয়ার’ নামের একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের দারোয়ান হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে দিদার, ইউনুছ ও সাজ্জাদসহ পাঁচ-ছয়জনের একটি সন্ত্রাসী চক্র ওই ভবন থেকে নিয়মিত চাঁদা দাবি করে আসছিল।চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গত ১৪ ডিসেম্বর সকালে তারা ভবনে গিয়ে প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার ফারুকসহ শ্রমিকদের মারধর করে। একপর্যায়ে ইঞ্জিনিয়ার ফারুককে মারধর করে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ও ব্যবহৃত আইফোন ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় দারোয়ান আহাম্মদ ছফা বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।ঘটনাটি নিশ্চিত করে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান বলেন, “অভিযান চালিয়ে দিদার নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার দেওয়া তথ্যমতে নাজিরপাড়া এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনের নিচতলার একটি কক্ষের ঝোপে লুকিয়ে রাখা ব্যাগ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ২১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনে পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
এদিকে, চাঁদা আদায়ের উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছোড়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে হামজারবাগ মুরাদপুর-অক্সিজেন সড়কে নির্মাণাধীন ওই ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রায় ১ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, নির্মাণকাজ চলাকালে ‘হুডি’ পরা এক যুবক ফটকের সামনে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে থাকে। পরে জ্যাকেট পরা আরেক যুবক ভেতরে ঢুকে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি ছোড়েন। এ সময় শ্রমিকরা আতঙ্কে দৌড়ে পালিয়ে যান। পরে দুই অস্ত্রধারী যুবক সড়ক পার হয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে কথা বলতে চাইলে আতঙ্কের কারণে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি। স্থানীয় কয়েকজন দোকানি জানান, অস্ত্রধারীরা চলে যাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ধারণা করা হচ্ছে, কেউ ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে অবহিত করেন।এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, “চাঁদাবাজির ঘটনায় অস্ত্রসহ একজন বড় আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও অভিযানে নামা হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই আরও সুখবর পাওয়া যাবে।”স্থানীয়রা জানান, ভবনটির মালিক আবদুল জব্বার ও তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তাদের দুই মেয়ের জামাই মো. মিজান ও জসীম সেখ সেখানে ভবন নির্মাণ শুরু করেন। সন্ত্রাসী চক্রটি তাদের কাছে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।এলাকাবাসীর অভিযোগ, এর আগেও বায়েজিদ চালিতাতলী, হাজীপাড়া ও কুলগাঁও এলাকায় নির্মাণকাজ চলাকালে চাঁদা না পেলে গুলি ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। দিনে-দুপুরে মূল সড়কে প্রকাশ্যে গুলি ছোড়ার ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।এ বিষয়ে জমির মালিকপক্ষের কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি। ফোনে যোগাযোগ করা হলে এক নারী নিজেকে মালিকের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষ। কোনো ঝামেলায় জড়াতে চাই না। কাজ বন্ধ থাকার কারণ আর্থিক সংকট।”উল্লেখ্য, গত রোববার রাতে বায়েজিদ কুলগাঁও এলাকায় চাঁদা না পেয়ে সাবেক এক ছাত্রদল নেতার বাড়িতে ১৫-২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। এর আগেও বায়েজিদ উত্তরা হাউজিং সোসাইটিতে ১৫ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে প্রকাশ্যে গুলি ও শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠে।চট্টগ্রামে ক্রমবর্ধমান চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।











মন্তব্য