২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয় >> রাজশাহী
  • রাবি শিক্ষার্থীদের সাহায্যে চুরি হওয়া ভ্যান উদ্ধার
  • রাবি শিক্ষার্থীদের সাহায্যে চুরি হওয়া ভ্যান উদ্ধার

      বাংলাদেশ সংবাদ প্রতিদিন

    রাবি প্রতিবেদক;>>>
    রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ভ্যান চুরিরত অবস্থায় ধাওয়াকরে ধরার পর শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন রিকশাচালক। মঙ্গলবার (১৩ জুন) রাত সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে সেই চোরকে ধরে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন তিনি।
    পরবর্তীতে উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে বুধবার (১৪ জুন) সকাল ৮টায় নগরীর মতিহার থানা পুলিশের উপস্থিতিতে প্রকৃত মালিকের কাছে ভ্যানটি হস্তান্তর করেন রাবি শিক্ষার্থীরা।

    এ ঘটনায় ভ্যানচুরির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন মো. বাদশা। তার বাসা নগরীর ভদ্রা এলাকার জামালপুরে। অপরদিকে রিকশাচালকের নাম জামরুল ইসলাম, বাসা রাজশাহীর চারঘাট থানায়। তবে তিনি নগরীর মতিহার থানার সামনে থাকেন বলে জানা গেছে।
    জানতে চাইলে চোরকে ধরিয়ে দেওয়া রিকশাচালক জামরুল ইসলাম বলেন, “এই চোর একদিন গভীররাতে আমার রিকশায় বানেশ্বর থেকে একটা রেঞ্জার সাইকেল নিয়ে কাটাখালিতে যায়। তার সাইকেলে হাওয়া নেই এমন কথা বলে তিনি আমার রিকশায় উঠেছিলেন। কিন্তু রিকশা থেকে নামার পর দেখি তার সাইকেলে হাওয়া আছে। বিষয়টি বুঝে উঠার আগেই সে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আরেকদিন গভীররাতে তাকে দেওয়ানপাড়াতে একটি ভ্যান নিয়ে যেতে দেখি। এসময় থামতে বললে, সে সামনে যাবো বলে দ্রুতগতিতে পালিয়ে চলে যায়। আমার যাত্রী থাকায় তাকে সেদিন ধরতে পারিনি৷”

    রিকশাচালক আরও বলেন, “আজকে রাতে তিনটার পরে বিহাসের (বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটি) সামনের এক মেসে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে নামিয়ে দিয়ে ফেরার পথে মির্জাপুর স্কুলের সামনে দেখি একটা ফাঁকা ভ্যান নিয়ে সে আমাকে অতিক্রম করছে। এসময় আমি রিকশা ঘুরিয়ে ভ্যান কোত্থেকে আনছে সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করি। এসময় সেই আমাকে বলে ‘পুলিশের কাছে চল, তুই আমাকে ছিনতাই করছিস’। তখন তার কথামত তাকে পুলিশ ফাঁড়িতে যেতে বলি আমি। কিন্তু সে বুঝতে পেরে ভ্যানটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেট দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। তখন আমার রিকশায় বিনোদপুর গেটের এক আনসার সদস্যকে নিয়ে আমি তাকে ধাওয়া করি। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে থেকে কিছু শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় তাকে ধরতে পারি। মূলত শিক্ষার্থীদের জন্যই তাকে ধরা সম্ভব হয়েছে।”

    এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে থাকা রাবি শিক্ষার্থী মওদুদ হোসেন বলেন, “রাতে ক্ষুধা লাগায় আমরা কয়েকজন বন্ধু স্টেশন বাজারে নাস্তা করতে যাই। এসময় সোহরাওয়ার্দী হলের সামনের রাস্তা দিয়ে এক ভ্যানচালকের পিছু নিয়ে আরেক রিকশাচালককে খুব দ্রুত গতিতে যেতে দেখি। রিকশাচালক সামনের ভ্যানচালককে চোর বলায় আমরা তাকে থামাই। কিন্তু থামানোর পর ভ্যানচোরই উল্টো রিকশাচালকে ছিনতাইকারী বলতে থাকে। তারপর বিষয়টি নিয়ে কথা বার্তার এক পর্যায়ে বুঝতে পারি ভ্যান চালকটিই আসলে চোর।”
    তিনি বলেন, “বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা সেই অভিযুক্ত ভ্যানচোরের বাসায় ফোনদিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের ঘটনাস্থলে আসতে বলি। এর মাঝে ভ্যানটি আলাদা জায়গায় রাখি। তারপর, অভিযুক্ত ভ্যানচোরের পরিবারের সদস্যরা আসার পর কোনো কিছু বুঝতে না দিয়ে অন্য একটা রিকশা দেখিয়ে জানতে চাই, সেটা তাদের রিকশা কিনা। তখন অভিযুক্ত ভ্যানচোরের পরিবারের সদস্যরা অন্যের রিকশাটিকে দেখে নিজদের রিকশা বলে মিথ্যা দাবি করে। তারপরে আমরা আরও নিশ্চিত হয়ে যাই যে ভ্যানচালকটি প্রকৃতপক্ষে চোর। কারন সে তো রিকশা নিয়েই আসেনি। তারপর তার পরিবারের সদস্যদের বাসায় চলে যেতে বললে তারা চলে যায়।”

    তিনি আরও বলেন, “পরবর্তীতে চোরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শহীদ শামসুজ্জোহা হলের গেস্টরুমে নিয়ে আসি। সেখানে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে সে চুরির বিষয়টি স্বীকারকরে এবং ভ্যানটি কোথা থেকে চুরি করেছে সে বিষয়ে জানানোর পাশাপাশি এর আগে সে আরও চুরি করেছে বলে জানায়। পরবর্তীতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পরামর্শে চোরকে নগরীর মতিহার থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তরকরি এবং ভ্যানের প্রকৃত মালিক ইতোমধ্যে হলে উপস্থিত হওয়ায় উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে থানা পুলিশের উপস্থিতিতে আমরা ভ্যানটি তার কাছে হস্তান্তরকরি।”

    চুরির দায়ে অভিযুক্ত মো. বাদশা বলেন, “আমার বাসা ভদ্রা জামালপুরে। আমি গত দুই/তিন বছর যাবত চুরি করি। তবে ক্যাম্পাসে কখনও চুরি করিনা। ক্যাম্পাসের ছাত্রদের ভয় পাই। ক্যাম্পাসে একটা জামও পারতে আসিনা। এর আগে আরও সাইকেল চুরি করেছি। আজকের চুরির বিষয়টি সত্য। এটি চাপাল থেকে চুরি করেছি। এর আগে রাজাবাড়ি হাট থেকে সাইকেল চুরি করেছি। আমি পেটের দায়ে চুরিটা করেছি। কাজ করেও খেতে পারি। কিন্তু আমি নেশাখোর, নেশা করার জন্য টাকা প্রয়োজন, সেজন্য চুরি করি।”

    এদিকে চুরি হওয়া ভ্যান ফিরে পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ভ্যানের প্রকৃত মালিক রোকনউদ্দীন।
    রাজশাহীর চাপাল এলাকার এই ব্যক্তি বলেন, “সকাল থেকে অনেক খোঁজাখুজির পরও ভ্যানটি পাচ্ছিলাম না। ক্যাম্পাসের ছাত্র বাপেরা আমাকে বাঁচালো। এই ভ্যানটিই আমার আয় রোজগারের একমাত্র সম্বল। এটি হারিয়ে গেলে আমার সংসার চালাতে পারতাম না। শিক্ষার্থীরা তাদের হেফাজতে রেখেছে বলেই আমি ভ্যানটির সকল জিনিসপত্র সুন্দরভাবে বুঝে পেয়েছি। আমি অনেক খুঁশি। যারা আমার এই উপকার করল আল্লাহ তাদের মঙ্গল করুক।” এসময় তিনি পরম খুশিতে শিক্ষার্থীদের ভ্যানে চড়িয়ে কিছুক্ষণ ক্যাম্পাসে ঘুরেন।

    ইনসান আলী
    রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
    ০১৯৯৫১০৪৭৩৬

    মন্তব্য

    <img class=”alignnone size-full wp-image-29676″ src=”https://bdsangbadpratidin.com/wp-content/uploads/2024/05/IMG_20240503_224849-2.jpg” alt=”” width=”100%” height=”auto” />

    আরও পড়ুন

    You cannot copy content of this page