শফিক আর রহমান বিশেষ প্রতিনিধি কক্সবাজার>>>জন্মঃ মাওলানা আব্দুল আওয়াল সিকদার পিতাঃ ইকবাল সিকদার, মাতাঃ বেগম বাহার।১৯৪৭ সালে খুরুশকূল রাস্তার পাড়ার এক বোনিয়াদি সিকদার পরিবারে তার জন্ম।সাত বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে মাওলানা আব্দুল আওয়াল পঞ্চম।প্রথম চার জন মেয়ে সন্তান হওয়ায় আব্দুল আওয়াল জন্ম গ্রহণ করাতে তার পিতা -মাতা অনেক খুশি হয়েছিলেন।তাকে ইসলামের খেদমতে নিয়োজিত করার জন্য মানত করে আরবী নিয়ে উচ্চ শিক্ষিত করেছিলেন।শিক্ষাজীবনঃ নিজ এলাকায় মক্তব ও প্রাথমিক বিদ্যালয় অধ্যয়ন শেষে তাকে কক্সবাজার হাসেমিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেওয়া হয়।কক্সবাজার হাসেমিয়াতে অষ্টম শ্রেণী উত্তীর্ণ হয়ে জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঈদগাওঁআলমাছিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় ভর্তি হয়।তিনি আলমাছিয়া থেকে ১৯৬৬ সালে দ্বিতীয় বিভাগে দাখিল ১৯৬৮ সালে দ্বিতীয় বিভাগে আলিম ১৯৭০ সালে দ্বিতীয় বিভাগে ফাজিল পরীক্ষায় পাশ করেন।১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম দারুলউলুম মাদ্রাসা থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে তিনি কামিল পরীক্ষায় পাশ করেন।তিনি ছাত্র জীবনের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন।আলমাছিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়নের সময় তার ছাত্র নেতৃত্বের প্রভাবে বৃহত্তর ঈদগাহ সহ আশপাশের এলাকায় তিনি ব্যাপক পরিচিতি ও প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিলেন।চট্টগ্রাম দারুল উলুমে কামিল ক্লাসে অধ্যয়নকালে তিনি ছাত্র প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।কর্মজীবনঃ কামিল অধ্যয়ন শেষে ব্যবসায়িক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য চেষ্টা করেন।শুটকি মাছ, লবণ, ধানের ব্যবসা,কক্সবাজার শহরে লাইব্রেরী কাম ষ্টেশনারী ব্যবসা এবং ঠিকাদারী করার পরও অত্যধিক খরুচে ও সরলতার কারণে তিনি উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করতে পারেননি।পরে ১৯৮৪ সালে খুরুশকূল পেচার ঘোনায় নিজ জায়গার উপর মুনিরিয়া বাহরুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন উক্ত প্রতিষ্ঠানের সুপার পদে নিযুক্ত হন। ২০১৪ সালে সরকারী বিধি মোতাবেক তিনি শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে এই মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।রাজনৈতিক জীবনঃ তিনি ছাত্র জীবনে মাদ্রাসা ভিত্তিক ছাত্র সংগঠন জমিয়তে তালাবায়ে আরবিয়া ও ছাত্র সংঘের জেলা পর্যায়ের নেতা ছিলেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, আই.ডি এল, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন ইত্যাদি সংগঠনেও নেতৃত্ব প্রদান করেন।সমাজ সেবা, ইসলাম প্রচার ও শিক্ষা বিস্তারঃইসলামী ও আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও সাধারণ বিভাগ সমন্বয়ে ১৯৮৪ সালে মুনিরিয়া বাহরুল উলুম দাখিল মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। মাদ্রাসাটি ১৯৮৭ সালে এমপিও ভূক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হয়। মাওলানা আব্দুল আওয়ালের একক প্রচেষ্টায় ২০১৯ শিক্ষাবর্ষ হতে মুনিরিয়া মাদ্রাসায় নূরানী বিভাগ শাখা ও ২০২০ শিক্ষাবর্ষ হতে হিফজ ও মুজাব্বিদ বিভাগ শাখার সূচনা হয়। প্রতিষ্ঠানটি খুরুশকূলে শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। খুরুশকূল দরগা পাড়ায় স্থায়ী কেন্দ্রীয় ঈদগা ময়দান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মাওলানা আবুল আউয়ালের প্রধান ভূমিকা লোকেমূখে অত্যন্ত প্রশংসনীয়। রাস্তার পাড়ায় নিজ বাড়ীর সামানে এককভাবে তিনি ইবাদত খানা প্রতিষ্ঠা করেছেন। খুরুশকূলে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুদ্ধি, সাহস ও পরামর্শ দিয়ে তিনি সহযোগীতা করেছেন।ইতিবাচক সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে খুরুশকূলের মসজিদে মসজিদে জুমার দিনে বিশেষ আলোচনার প্রচলনের জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কার ও প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। সাধীনতা উত্তর আধুনিক মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠিত মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি ছিলেন মাওলানা আব্দুল আওয়াল। তৎকালীন রাষ্ট্র প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান অতিথি করে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে অনুষ্ঠিত মাদ্রাসার সমাবেশে চট্টগ্রামের শিক্ষক পরিষদের নেতা হিসেবে যোগদান করেছিলেন। পরবর্তীতে মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়ন বিষয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎও করেছিলেন। মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়ন বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে প্রধানমন্ত্রী শাহা আজিজের সাথেও বার কয়েক সাক্ষাৎ করেছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজের এমপিও বন্ধ হয়ে গেলে মাওলানা আব্দুল আওয়ালের নেতৃত্বে বঞ্চিত শিক্ষক পরিষদ নামে একটি শিক্ষক পরিষদ গঠন করেন। মাওলানা আব্দুল আওয়ালের সভাপতিত্বে বঞ্চিত শিক্ষক পরিষদের নেতৃবৃন্দ তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী আনিসুল ইসলামের সাথে সাক্ষাৎ করে এমপিও ভূক্তি বন্ধ থাকায় শিক্ষার ক্ষতির দিক তুলে ধরলে সে সময় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নতুন করে এমপিও ভুক্তির সুযোগ পায়। নব্বই দশকের শুরুতে বিএনপি ক্ষমতায় আসীন হলে মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নের জন্য শিক্ষক নেতাদের অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবে হাওয়া ভবণে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাথে মাওলানা আব্দুল আওয়াল সাক্ষাৎ করেছিলেন। মাদ্রাসা শিক্ষার যাবতীয় সমাধান ও উন্নয়নের সুগম তুলে ধরে শিক্ষক নেতৃবৃন্দের পক্ষ হয়ে মাওলানা আব্দুল আওয়াল সিকদার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে সেই সাক্ষাতে স্মারক লিপি পাঠ করে শুনিয়েছিলেন। সাক্ষাৎ পরবর্তী বেগম খালেদা জিয়া মাদ্রাসার উন্নয়নের ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।চারিত্রিক গুণাবলীঃ তিনি অত্যন্ত সাহসী, বাকপটু সম্পন্ন ও অন্যায়ের বিরোদ্ধে নতিস্বীকার না করাই তার চরিত্রের অন্যতম গুণাবলী। উচ্চপদস্থ সরকারী আমলা ও রাজনৈতিক নেতাদের বিরোদ্ধে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে ব্যক্তিগতভাবে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। বিপদে কখনো তাকে বিচলিত হতে দেখা যায়নি। তিনি বিনয়ের সাথে আচরণকারীদের খুবই পছন্দ করেন। ইসলামী চেতনায় ও দেশ প্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলার জন্য মানুষকে সচেতন করা তার চরিত্রের আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।পারিবারিক জীবনঃ ঈদগাও আলমাছিয়া মাদ্রাসার সাবেক হেট মাওলানা আব্দুল জব্বারের কন্যার সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের বিবাহিত জীবনে চার ছেলে ও এক মেয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। বড়
মন্তব্য