জাহেদুল কবির নিজস্ব প্রতিবেদক>>> চট্টগ্রাম বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ।গত জুলাই–আগস্ট থেকে মূলত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।তবে সেপ্টেম্বরে এসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার আগের ৮ মাসকে ছাড়িয়ে যায়।সেপ্টেম্বরে ৯০৭ জন আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যু হয় ১১ জনের।চলতি অক্টোবরেও আক্রান্তের এই হার অব্যাহত রয়েছে।তবে এ মাসে এখন পর্যন্ত কারো মৃত্যু হয়নি।সব মিলিয়ে চলতি বছরের গতকাল পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৭৬০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের।আক্রান্তের মধ্যে ৯৭১ জন পুরুষ, ৪৭২ জন নারী এবং ৩১৭ জন শিশু রয়েছে।মোট আক্রান্তের হিসেবে প্রায় ২০ শতাংশই শিশু।অন্যদিকে ১৬ জন মৃত্যুর মধ্যে ১০ জনই নারী।এছাড়া ৪ জন পুরুষ ও ২ শিশু আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।অপরদিকে এবার আক্রান্তের হার বেড়েছে বিভিন্ন উপজেলায়ও।গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছে ৬৮৩ জন।এরমধ্যে লোহাগাড়ায় সর্বোচ্চ ১৭৬ জন।অপরদিকে গত সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের দিক থেকে চট্টগ্রাম নগরীর ২০টি এলাকার উপর জরিপ চালানো হয়েছে।সেই জরিপে দেখা গেছে–বাকলিয়া,কোতোয়ালী, বায়েজিদ,পাহাড়তলী এবং খুলশী এলাকায় সিংহভাগ আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়।অর্থাৎ এই ৫ এলাকা ছিল ডেঙ্গুর হটস্পট।সংশ্লিষ্টরা বলছেন,এডিস মশার বংশ বিস্তার থামানো গেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এমনিতেই কমে যাবে।বিশেষ করে আমাদের চারপাশে যেসব জায়গায় এডিস মশা জন্মায় সেসব জায়গায় যাতে এডিস মশা জন্মাতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।পরিষ্কার ও বদ্ধ পানি এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র।তাই বসতবাড়ির আশপাশে ডাবের খোসা,ফুলের টব,ছাদবাগান ও ফ্রিজের নিচের ট্রেতে তিন দিনের বেশি পানি যাতে জমে না থাকে,সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।বাসাবাড়ি,ছাদ আঙিনা নিজ নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার রাখতে হবে।এটি সবার দায়িত্ব।গতকাল চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ৭০ জন আক্রান্ত হয়েছে।এরমধ্যে ৪৯ জন পুরুষ, ১২ নারী ও ৯ শিশু আক্রান্ত হয়েছে।এছাড়া গত জানুয়ারিতে আক্রান্ত হয় ৬৯ জন,ফেব্রুয়ারিতে ২৫ জন,মার্চে ২৮ জন, এপ্রিলে ১৮ জন,মে মাসে ১৭ জন,জুনে ৪১ জন এবং জুলাইয়ে ১৯৮ জন,আগস্টে ২০২ জন,সেপ্টেম্বরে ৯০৭ জন এবং অক্টোবরে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২৫৫ জন। এছাড়া জানুয়ারিতে মারা গেছে ২ জন,মার্চে ১ জন,জুলাইয়ে ১ জন,আগস্টে ১ জন এবং সেপ্টেম্বরে ১১ জন।বিশেষজ্ঞরা বলছেন,ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই।অনেক রোগী ডেঙ্গু পরীক্ষার (এনএসওয়ান) রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ার সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে।ডেঙ্গু নিয়ে অনেকের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে।মনে রাখতে হবে,রক্তের প্ল্যাটিলেটের পরিমাণ কেবল ১০ হাজারের নিচে নেমে গেলে তখন রোগীর শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ শুরু হয়।সেই সময় জরুরি চিকিৎসা কিংবা নিবিড় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। অন্যদিকে প্ল্যাটিলেট কমা শুরু হয় জ্বর কমে যাওয়ার পর পর।আবার সাধারণ মানুষের মধ্যে প্ল্যাটিলেট নিয়ে আতঙ্ক লক্ষ্য করা যাচ্ছে,আসলে প্ল্যাটিলেট যখন বাড়া শুরু হয় তখন দ্রুতই বাড়ে।প্ল্যাটিলেট কমা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।তবে একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে নিয়মিত ফলোআপ করতে হবে।জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন,ডেঙ্গুর প্রস্তুতি হিসেবে আমরা হাসপাতালে ৫৪ শয্যার বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করেছি।এছাড়া রোগীর চাপ যদি আরো বাড়ে,সেক্ষেত্রে আমরা আমাদের তিনটি মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু কর্নারের ব্যবস্থা রেখেছি।তবে আমরা আশা করছি,বৃষ্টির পরিমাণ কমলে এই অক্টোবরের শেষের দিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমবে।উল্লেখ্য,গত বছর নগর ও বিভিন্ন উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট ভর্তি হয়েছিল ১৪ হাজার ৮৭ জন।এরমধ্যে মারা যায় ১০৭ জন।এছাড়া ২০২২ সালে মোট আক্রান্ত ৫ হাজার ৪৪৫ জনের মধ্যে মারা যায় ৪১ জনের, ২০২১ সালে আক্রান্ত হয় ২৭১ জন এবং মারা যায় ৫ রোগী।
মন্তব্য