আনোয়ার হোসেন-কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী)প্রতিনিধিঃনীলফামারীর কিশোরগঞ্জে গ্রামীণ জনপদ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পুষ্টিগুনে ভরপুর ও টক মিষ্টি স্বাদে মজাদার ফল ডাউয়া।শুধু টক মিষ্টি স্বাদই নয়,রয়েছে মানব দেহের অবাক করা নানাবিধ রোগ নিরাময়ে ভেষজ ঔষুধী গুণ।এ ফলের ইংরেজি নামঃ Artocarpus lacucha (ডেউয়া, ডেলোমাদার,ডেউফল বা ঢেউফল)।এটি মোরাসিই পরিবারভুক্ত ক্রান্তীয় চিরসবুজ বৃক্ষ।এটি ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্র এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রচুর জন্মে।ডেউয়ার আদি জন্মস্থান বার্মা।বার্মায় এ ফলের নাম মাইয়াক লুয়াং।তবে অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন নাম করণ থাকলেও এ উপজেলার মানুষের কাছে ডাউয়া নামে পরিচিত।একসময় এ জনপদের বসতবাড়ীর আনাচে-কানাচে,পুকুর পাড়ে ঝোপঝাড়ে প্রচুর দেখা মিলতো।কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন,ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে নির্বিচারে ঝোপঝাড় ও ফলজ গাছ ধ্বংস করা হচ্ছে।এতে এ ফল বিলুপ্তির পথে।আনোরমারী ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বলেন,গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে অতি পরিচিত ফল ডাউয়া।আগে এই ফলের গাছ সর্বত্র দেখা মেললেও এখন অনেক কমে গেছে।যে শৈশব কেটেছে ডাউয়ার মত অনেক দেশীয় ফল খেয়ে।সে দেশীয় ফল হারিয়ে যাচ্ছে।দিন দিন আমদানিকৃত বাহারী সব নামিদামি বিদেশী ফল বাজার দখল করেছে।কেমিক্যাল মিশ্রিত এসব ফল খেয়ে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। পুষ্টির ঘাটতিও সৃষ্টি করছে।তাই পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণে বাজারমুখী না হয়ে দেশীয় ফলজ বৃক্ষ রোপণে সবাইকে এগিয়ে আসা দরকার।এতে এক দিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে,অন্যদিকে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে।উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার আজিজার রহমান বলেন,ডাউয়া গ্রামাঞ্চলে বেশি পরিচিত ফল হলেও শহরাঞ্চলে অপ্রধান ফল।ডাউয়া চিরসবুজ প্রজাতির বৃক্ষ। এ বৃক্ষ২০-২৫ ফুট উঁচু হয়।ডাইয়া ফল কাঁঠালের মতো একটি গুচ্ছ ফল।বাইরে দিক এবড়ো থেবড়ো।ভেতরে কাঁঠালের মতো কোয়া থাকে।কাঁচা ফল সবুজ, তবে পাকলে হলুদ বর্ণ ধারণ করে।গাছে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ফুল আসে এবং জুন মাসের দিকে ফল পাকতে শুরু করে।পাকা ডাউয়া ফলের স্বাদ টক-মিষ্টি।যা ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায়,এই ফল নিয়মিত খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করে।বমিভাব ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।ত্বক, নখ,দাঁত,মাড়িসহ হাড়ের ক্ষয় রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।আরো পটাশিয়াম থাকায়,রক্ত চলাচলে সহায়তা করে,রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।কাঁচা অবস্থায় প্রচুর টক স্বাদের হওয়ায় ভর্তা বা চাটনি করে খাওয়া যায়।ছোট-বড় সবার মুখের রুচি বাড়াতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।গ্রামের বাচ্চারা এই ফলটিকে খুব পছন্দ করে।গ্রামীন জনগোষ্ঠীর পুষ্টির চাহিদা পূরণে প্রচলিত,অপ্রচলিত দেশীয় বিভিন্ন ফলজ বৃক্ষ রোপণে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
মন্তব্য