আনোয়ার হোসেন-কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী)প্রতিনিধি>>>এক সময় শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামঞ্চল পর্যন্ত সব শ্রেণি পেশার মানুষের আনন্দ-বিনোদনের জনপ্রিয় মাধ্যম ছিল অডিও প্লেয়ার ক্যাসেট।এর ভিতরে থাকত লম্বা সরু সেলুলয়েডের ফিতা।এ যন্ত্র দিয়ে গান রেকর্ড,গান বাজানো সবই করা যেত।একটি ফিতার দুই পাশে ১০/১২টি গান শোনা যেত।ছিল বিবিসি বাংলা রেডিও শোনার ব্যবস্থাও।মেয়ে জামাইকে নানা ব্রান্ডের ক্যাসেট উপটৌকন দেয়ার চল ছিল।যা প্রায় ঘরে,ঘরে,পড়শির দোকানে,চায়ের দোকানে,যানবাহনের চালকের আসনে,ফেরিওয়ালার বাইসাইকেলের ফ্রেমে,ভ্যানে ক্যাসেটের জয়জয়কার ছিল।শোনা যেত বাংলা,হিন্দি সিনেমার সংলাপ,গান,কালজয়ী গান,কবি গান,যাত্রাপালা,ব্যান্ডসংগীতসহ নানা জনপ্রিয় গান।পাশাপাশি ওয়াজ মাহফিল,কোরআনের সুরা,কেরাতের তরজমা,ইসলামি গান,গজল সংগীত ক্যাসেটে রেকর্ড করে শোনার অন্যতম মাধ্যম ছিল।অনেকে প্রিয়জনকে গানের এ্যালবাম(ফিতা)উপহার দিত।এতে ৮০থেকে ২হাজার দশক পর্যন্ত ছোট,বড় অডিও ক্যাসেট ও এ্যালবাম এর বাজার জমজমাট ছিল।কিন্তু সে দিন পাল্টে গেছে।এখন মেমোরিকার্ড ও মোবাইল ফোনের সাথে ঘরে ঘরে দেখার সুযোগ হয়েছে টেলিভিশন,ইন্টারনেট ও আকাশ সংস্কৃতির বিভিন্ন টিভি চ্যানেল।এতে বর্তমান প্রজন্ম আনন্দ-বিনোদনের নানা অনুসঙ্গ উপভোগ করার জন্য ঝুঁকছে সেই দিকে।এতে পুরোনো আমলের ক্যাসেট আর কেউ শোনেনা।ঠঁাই এখন যাদু ঘরে।অন্য কারো কাছে ক্যাসেটে গান শোনার জৌলুস হারিয়ে গেলেও ৪৪ বছর ধরে পুরোনো ক্যাসেটে গান শুনেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোহাম্মদ রাকিবুল হক।তিনি রংপুর জেলা শহরের লালকুঠির বাসিন্দা মৃত্যু গায়সুল হকের ছেলে।সরেজমিনে মেডিকেল মোড়ের জুয়েল ফার্মেসিতে দেখা যায়,অবসর সময়ে তিনি রোগীর ব্যবস্থাপত্রের চেম্বারে মনের মাধুরি মেশানো গান শুনছেন ক্যাসেটে।আধুনিক যুগে ক্যাসেট শোনা ও বিভিন্ন গানের ফিতা সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে এ ডাঃ বলেন,সবার হাতে হাতে মোবাইল চলে যাওয়ায় বিনোদনের মাধ্যম সহজ হয়েছে ঠিকই।কিন্তু আগের সুস্থ বিনোদনের স্থলে দিন মোবাইলে বাড়ছে অপসংস্কৃতির চর্চা।টিকটক,ব্ল্যাক মেইলিং,পর্ণো ছবি এবং ভিডিওর ছড়াছড়ি।অপর দিকে মেমোরি কার্ড ও মোবাইল ফোনে গানের স্বাদ নেই।তাই প্রকৃত গানের স্বাদ খঁুজে পেতে লং প্লেয়ারে গান শুনি।লং প্লেয়ারে একসঙ্গে অনেক গান শোনার মজাই আলাদা।এতে ক্যাসেট শোনার নেশা আজও বহাল আছে।এখন গানের ফিতা খুঁজে পাওয়া দুস্কর ব্যাপার।তবে রংপুর ও ঢাকার পুরনো ক্যাসেটের দোকান থেকে খেঁাজ করে সংগ্রহ করা হয়।প্রতি ফিতা ৬০থেকে ১শ টাকা কেনা হয়।তিনি আরো জানান,তার পিতার ক্যাসেটে গান শোনার প্রবল অনুরাগ থেকে ১৯৭৪ সালে জাপান থেকে একটি ক্যাসেট ক্রয় করে নিয়ে আসেন।পিতার হাত ধরে ছোট কাল থেকে ক্যাসেটে গান শোনার নেশায় জড়িয়ে পড়েন।২০বছর আগে ১২হাজার টাকায় ফিলিপস কোম্পানির একটি ক্যাসেট কিনেন।এখন যন্ত্রটির বয়স ৪৪বছর।সে কাল থেকে আজও অবধি চিকিৎসার ফঁাকে ফিতা পাল্টিয়ে বাংলা,হিন্দি,আধুনিক,পল্লীগীতি গান,নজরুল সংগীতসহ ওপার বাংলার জনপ্রিয় শিল্পীর গান শুনেন।আর ক্যাসেটটির যান্ত্রিক ত্রুটি হলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাকে।পুরো জেলা,উপজেলায় ক্যাসেটের দোকান না থাকায় তখন রংপুর-ঢাকার বড় মেকার কাছ থেকে অর্ডার দিয়ে নেন।যতই কষ্ট হোক পিতার স্মৃতিবিজড়িত ক্যাসেটে গান শুনে তিনি প্রশান্তির ছেঁায়া খঁুজে পান।যা বাচাই করা সচল হরেক গানের ৫শতাধিক এ্যালবাম সংগ্রহে আছে।মেডিকেল মোড়ের বাসিন্দা(মেডিকেল অবঃ ষ্টোর কিপার)আব্দুল জব্বার বলেন,আশ্চর্যের ব্যাপার সৌখিন প্রিয় ডাঃ আধুনিক যুগেও পুরোনো প্রযুক্তিতে গান শোনেন।তার বাসায় টেবিলে ভরা এ্যালবাম বা ফিতার সমাহার দেখলে মনে হয় এটা যেন পুরনো দিনের গানের ভ্থবন।তার ক্যাসেটে গান শুনে মনে হয় যেন সেই সময়ে চলে গেছি।খুঁজে পাওয়া যায় হারানো শৈশবকেও।এখন সচল তো দুরে থাক পুরোনো বাক্স খঁুজে মেলাভার।অনেকের ঘরে যন্ত্রটি দর্ীঘ দিন পরিত্যক্ত থাকার পর শিশু-কিশোররা কটকটি কিনে খাওয়াসহ বিক্রি করে দিয়েছেন ভাঙ্গারীর দোকানে।নতুন প্রজন্মকে চিনতে হলে যেতে হবে যাদু ঘরে।
মন্তব্য