আব্দুল্লাহ জামালপুর সদর প্রতিনিধি >>> যৌনপল্লীর সর্দারনী ডলিকে প্রধান আসামী করে জামালপুর সদর থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে।গতরাতে জামালপুর যৌনপল্লীর বন্দিদশা থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে আসে দুই মেয়ে। ভয়ে কাতর ১৫ ও ১৬ বছর (মামলাসূত্রে) বয়সী দুই মেয়েকে মোল্লা কাউন্টার থেকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে রাখা হয়। আজ মানবপাচার আইনের জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা হয়েছে।
আজ বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারলাম সর্দারনী ডলির বরিশাল, খুলনা, জামালপুর বাইপাস, ওয়াপদা এলাকায় বহুতল ভবন আছে। বেপারীপাড়ায় আছে তার টর্চার সেল। সেখানে শিশু ও কিশোরীদের পাচার করে নিয়ে এসে যৌন নির্যাতন চালায়। অভ্যস্থ হওয়ার পর তাদের যৌনপল্লীতে এনে নির্মম কায়দায় দেহ ব্যবসা শুরু করে। এসব মেয়েদের শুধু খাবার সরবরাহ করা হয়। প্রতিবাদ করলেই মেয়েদের ওপর চলে দানবীয় নির্যাতন। এ অমানবিক ঘটনা বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বলে আসছি মধ্যযুগীয় অপতৎপরতা বন্ধের জন্য।এ সভ্য জগতে বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম রাষ্ট্রে যৌনপল্লীর প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না। প্রায় আড়াই”শ বছর আগে বৃটিশ বনিকদের মনোররঞ্জনের জন্য ব্রহ্মপুত্র তীরে রানীগঞ্জ যৌনপল্লী গড়ে উঠে। একসময় বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল যৌনপল্লীটি। কালের পরিক্রমায় এর আকার ছোট হয়ে এসেছে।
এখন এ নিষিদ্ধ পল্লীতে আছে ১১টি বাড়ি। ১৭৫টির মতো ঘর। এখানে যৌন পেশার সাথে যুক্ত আছে ১২৫/১৩০ জন নারী। কর্ম অক্ষম বয়স্ক নারী আছে ৩০/৪০ জন। এদের মধ্যে ১৫/২০ জন আছে ছোট, মাঝারী ও বড় গোছের সর্দারনী। সর্দারনীদের ডিক্টেটরশিপে নিষ্পেসিত হয় সাধারণ যৌনকর্মীরা।বাড়ি মালিকরা আরো বেশী শোষকের ভূমিকা পালন করে থাকে। অস্বাভাবিক ঘর ভাড়া, বিদ্যুই বিল, পানির বিল নির্ধারণ করে থাকে। এসব বিল পরিশোধে হেরফের করলেই চলে অত্যাচারের স্টিমরোলার।যৌনপল্লীতে চলে চড়া সূদে দাদন ব্যবসা। সাধারণ যৌনকর্মীরা দাদন ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়ে যায়।যৌনকর্মীদের জীবন স্টাডি করতে গিয়ে দেখেছি এবং শোনেছি এসব মেয়ের নিদারুণ জীবন যন্ত্রণার কাহিনী। কেউ ইচ্ছে করে অন্ধকার জগতে পা বাড়ায় নাই। প্রেমের ফাঁদে পড়ে, চাকরির প্রলোভনের শিকার হয়ে এমন কি নাটকীয় বিয়ের ফাঁদে পড়ে যৌনপল্লীতে পন্যের মতো বিক্রি হয়েছে।যুগ যুগ ধরে এ প্রক্রিয়া চলে এসেছে।
এদের মৃত্যু হলে জানাযা হয় না। গোরস্থানে মাটি হয় না।
একবিংশ শতাব্দীতে এসে পৃথিবী যখন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ব্যবহার করে তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছে আর তখন আমরা প্রশ্চাতে গমনের প্রতিযোগিতায় নেমেছি। যৌনপল্লীর পাশাপাশি ভাসমান যৌনকর্মীদের প্রতিরোধেও প্রশাসন এবং নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। অসর্থিত সূত্রে জানা গেছে জামালপুরে ৪৬০ জন নারী বাসাভাড়া নিয়ে, হোটেলে ডাক পেয়ে যৌন পেশার সাথে যুক্ত আছে। এদের পিছনে রয়েছে অনেক রাঘব বোয়াল। এদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

