আব্দুল্লাহ আল সাতকানিয়া চট্টগ্রাম >>> বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের অধীনে চট্টগাম ও কক্সবাজার জেলায় ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের (চকসেউপ্র) ২টি সৌর চালিত ডাগওয়েল নির্মাণে কাজ না করেই ২২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা তুলে নিয়েছে অফিসার ঠিকাদার সিন্ডিকেট। মোটা অংকের কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে এই অপকর্ম চালিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এব্যপারে জানতে চাইলে বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী (আনোয়ারা ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত) আজমানুর রহমান (২৬/১০/২৫) বলেন, আনোয়ারা ও চন্দনাইশের মোট ৪টি ডাগওয়েলের নির্মাণ কাজ চলমান আছে। ৬০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যে কাজের বিল তোলার জন্য ছাড়পত্র দিয়েছেন এখন ২৫-২৬ এ তার কাজ করছেন কেন? জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিএডিসির বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের (চকসেউপ্র) কাজে ও কেনাকাটায় প্রচুর অনিয়ম হয়েছে। নামে বেনামে ঠিকাদারের নাম ব্যবহার করে নিজেরাই ব্যবসা করছেন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নুরুল ইসলাম। মালামাল না কিনেও বিল তুলে নেয়ার অভিযোগ আছে। মোটা অংকের সরকারি টাকা আত্মসাতের জন্য তার নিয়ন্ত্রণে বিএডিসিকে অনিয়মের স্বর্গরাজ্যে পরিনত করেছেন।
সূত্র জানায়, বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আওতায় চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও চন্দনাইশ উপজেলায় ২ টি ডাগওয়াল নির্মাণের কার্যাদেশ দেয় প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম। মেসার্স নজরুল এন্টারপ্রাইজ এর নামে ইস্যুকৃত ৩/৪/২০২৪ তারিখে স্বাক্ষরিত কার্যাদেশে বলা হয়েছে, আপনার উদ্ধৃত দর মোট ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৮২৪ টাকা দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। এমতাবস্থায়, দরপত্রে উল্লেখিত যাবতীয় শর্তাবলীসহ কার্যাদেশে বর্ণিত শর্তাবলী পালন স্বাপেক্ষে সরবরাহকৃত সিডিউল এবং স্পেসিপিকেশন অনুযায়ী সৌরচালিত ডাগওয়েল নির্মাণ কাজের নিমিত্তে কার্যাদেশ প্রদান করা হলো। কাজের অবস্থান এলাহাবাদ সৌরচালিত ডাগওয়েল নির্মাণ, মৌজা এলাহাবাদ, ইউনিয়ন কাঞ্চনাবাদ, উপজেলা চন্দনাইশ। আবার পরের দিন অর্থাৎ ৪/৪/২৪ তারিখে ঢাকা সিদ্দিক বাজারের শেখ আনাছ এন্টারপ্রাইজের নামে আরেকটি কার্যাদেশ ইস্যু করেন। যেটির কাজের অবস্থান আনোয়ারা উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের পূর্ব বটতলীতে। এটির দরও ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৮২৪ টাকা।
ঢাকা এবং চট্টগ্রামের ২ টি আলাদা ঠিকাদার আলাদা স্থানে ২ টি ডাগওয়েল নির্মাণের জন্য একই দর কিভাবে দিয়েছে তাও দরপত্র প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কাজের শর্তে বলা হয়েছে, সাইট হস্তান্তরের দিন হতে ৩০ (ত্রিশ) দিন সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন করতে হবে। নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করে সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীর মাধ্যমে কাজের সাইট ও লে-আউট গ্রহণ পূর্বক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি শুরু ও শেষ করতে হবে। সাইটে কাজের বিষয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদানের জন্য একটি সাইট রেজিষ্টার সংরক্ষণ করতে হবে। দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রকৌশলী’র নির্দেশনা ও সাথে সংযুক্ত ড্রইং-ডিজাইন মোতাবেক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে হবে। বরাদ্দকৃত কাজ পাওয়ার অব এটর্নি প্রদান করে বা অন্য কোন উপায়ে অন্য কোন ঠিকাদারের নিকট হস্তান্তর করা যাবে না। কাজ শুরুর আগে, কাজের চলমান অবস্থায় ও কাজের শেষে ভিডিও চিত্র ও স্থির চিত্র বিলের সাথে দাখিল করতে হবে। সাধারণ মোবাইলে ধারনকৃত ভিডিও চিত্র ও স্থির চিত্র গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থ বরাদ্দ ও প্রাপ্তি স্বাপেক্ষে বিল পরিশোধ করা হবে। বিল থেকে সরকারী বিধি মোতাবেক ভ্যাট, আয়কর ও জামানত ইত্যাদি কর্তনযোগ্য হবে।
কাজের শর্তগুলো খুব নিখুতভাবে থাকলেও কাজ না করেই ২টি কাজে ২২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা বিল তুলে নিয়েছে। এই জন্য ওই অর্থবছরের ৯ জুন ও ২৪ জুন ডাগওয়েল নির্মাণ কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে ছাড়পত্র দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। যেখানে স্বাক্ষর করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী ফাতেমা আক্তার জেনী, সহকারী প্রকৌশলী বেলাল হোসেন ও উপসহকারী প্রকৌশলী আজমানুর রহমান। অথচ তখনো কাজ শুরুই করেনি ঠিকাদার।
বিল পরিশোধের জন্য প্রকল্প পরিচালককে লেখা চিঠিতে নির্বাহী প্রকৌশলী ফাতেমা আক্তার জেনী লিখেছেন, মেসার্স নজরুল এন্টারপ্রাইজ চন্দনাইশ উপজেলার এলাহাবাদের ডাগওয়েলটি ড্রয়িং ও ডিজাইন অনুযায়ী শেষ করেছে। ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫১৬ টাকা বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। একইভাবে চিঠি লিখেছেন আনোয়ারার বটতলীর ডাগওয়াল নির্মাণের ক্ষেত্রে যেটি ড্রয়িং ও ডিজাইন অনুযায়ী শেখ আনাছ এন্টারপ্রাইজ নির্মাণ করেছেন বলে বলা হয়েছে। এটির বিলও ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫১৬ টাকা।
চলতি বছরের অক্টোবর মাসে এই সংক্রান্ত কাগজপত্র সকালের সময়ের হাতে আসে। এবিষয়ে খোজ নিতে আমাদের প্রতিনিধি চন্দনাইশে উল্লেখিত স্থানে খোজ নিয়ে কোন ডাগওয়েল নির্মাণের অস্তিত্ব খুজে পাননি। আর অনোয়ারায় যেটি পাওয়া গেছে তা এখানো নির্মাণ কাজ চলছে, যার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।
এব্যপারে বিএডিসির তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী ও বর্তমানে মিশু বিভাগের উপ প্রধান প্রকৌশলী ফাতেমা আক্তার জেনীর (পরিচিতি নং-০৩০২৬১) কাছে (গত সপ্তাহে) জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি দেখে জানাবেন বললেও পরে একাধিকবার কল দিয়েও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এব্যপারে জানতে চাইলে বিএডিসি চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান মো. মোশারফ ভুইয়া বলেন, ”আমি তখন দায়িত্বে ছিলাম না, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই।”
এবিষয়ে জানতে বিএডিসির তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী ও পিডি ইঞ্জিনিয়ার মো. নুরুল ইসলামের অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি, মোবাইলে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বিএডিসির অপর একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের শাসনামলে যেনোতেনো করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বিএডিসির প্রকৌশলীরা। কাজ না করে অনেক টাকা তুলে নিয়েছেন, ডাগওয়েলটিও তেমন। তবে সরকার পতনের পর হয়তো সেটা আর পারবে না ভেবে এখন কাজে হাত দিয়েছে।

