
সোহেল রানা,তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধি >>> রাজশাহীর তানোর উপজেলা ও আশপাশের এলাকায় হিমাগারে সংরক্ষিত আলু নিয়ে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। মৌসুমী আলু বিক্রির পর ভালো দামের আশায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরের মতো এবারও ব্যাপক পরিমাণে আলু হিমাগারে মজুদ করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে বাজারে আলুর চাহিদা না থাকায় দাম দিন দিন নিম্নমুখী হওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।স্থানীয় কৃষকরা জানান, গত মৌসুমে আলুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং সরকারিভাবে নির্ধারিত মূল্য ও প্রশাসনিক তদারকির কারণে তারা আশানুরূপ লাভ করতে পারেননি। এবার দাম কমে যাওয়া সত্ত্বেও সরকারি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না, যা কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়িয়ে তুলেছে।কৃষক ও হিমাগার মালিকদের সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বিঘায় আলু চাষে গড়ে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এতে বিঘাপ্রতি গড় উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৭০ থেকে ৮০ মণ। বর্তমানে হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর দাম প্রতি কেজি ১০ থেকে ১১ টাকা, অথচ প্রতি কেজিতে কৃষকের উৎপাদন খরচই দাঁড়িয়েছে গড়ে ১৭ টাকা। এর সঙ্গে সংরক্ষণ খরচ, হিমাগারের ভাড়া, সুদ ও পরিবহন ব্যয় যোগ করলে সংরক্ষিত আলুর প্রকৃত খরচ দাঁড়ায় কেজি প্রতি প্রায় ২৫ টাকা। ফলে প্রতিকেজি আলুতে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনছেন।তানোর উপজেলার হিমাগার মালিকদের একাধিকজন জানান, বাজারে আলুর ক্রেতা নেই বললেই চলে। সংরক্ষিত আলুর দাম না বাড়লে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এর ফলে আগামী বছর আলু চাষে কৃষকরা অনাগ্রহী হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন তারা।স্থানীয় কৃষক মোঃ নাসির ও ব্যবসায়ী মো:মিলন অভিযোগ করে বলেন, সরকারের বাজার ব্যবস্থাপনা দুর্বল হওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে। যদি দেশীয় বাজারে ও রপ্তানির জন্য সরকারি উদ্যোগ নেয়া হতো তবে এ বিপদ এতটা তীব্র হতো না। তারা আক্ষেপ করে বলেন, “স্টোরজাত আলুর বর্তমান দুরবস্থা দেখার যেন কেউ নেই। সরকারের উচিত ছিল বাজার স্থিতিশীল রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া।”কৃষক-ব্যবসায়ীদের দাবি, আলুর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারকে এখনই হিমাগারভিত্তিক জরিপ চালিয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। নইলে তানোরসহ রাজশাহীর বৃহৎ আলু উৎপাদন এলাকা কৃষকরা লোকসানের কারণে আগামী মৌসুমে আলু চাষে বিমুখ হয়ে পড়তে পারেন, যা সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।