
সোহেল রানা,তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধি >>> রাজশাহীর তানোর উপজেলার জীবন্ত ঐতিহ্যের অংশ বিলকুমারী নদী এখন ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই কমছে নদীর পানির স্তর, কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে নদীর তলদেশ পর্যন্ত। অথচ আশ্চর্যের বিষয়— পানির পরিমাণ কমে গেলেও নদীতে এখন মাছের প্রাচুর্য দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে, যা স্থানীয় বাজারে প্রাণ ফিরিয়ে এনেছে।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নদীর পানি কমে যাওয়ায় মাছগুলো নির্দিষ্ট গর্ত ও খাদে জড়ো হয়। ফলে রিংজালসহ ছোট জাল দিয়েই এখন সহজে মাছ ধরা সম্ভব হচ্ছে। এতে যেমন স্থানীয় জেলেদের মুখে হাসি ফুটেছে, তেমনি বাজারেও সরবরাহ বেড়ে দাম স্থিতিশীল রয়েছে। মেলান্দি গ্রামের মৎস্যজীবী জিয়াউর রহমান বলেন,কয়েকদিন আগেও নদীতে মাছের পরিমাণ খুবই কমে গিয়েছিল। কিন্তু এখন পানি কমে যাওয়ায় শিব নদী ও বিলকুমারীর সংযোগস্থলে প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে। এতে আমাদের আয়ও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। কুটিপাড়া গ্রামের আরেক মৎস্যজীবী আশরাফুল আলম জানান, বর্তমানে বাজারে ট্যাংরা, শিং, মাগুর, কই, বোয়াল, পুটি, রুইসহ নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে। দামও এখন সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আছে। আগের মতো আর অতিরিক্ত দাম দিতে হচ্ছে না। তানোর বাজারের মাছ ক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বাজারে মাছের সরবরাহ বেড়েছে। ফলে দামও স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। বর্ষার পরপর এমন সময়েই সাধারণত স্থানীয় নদী ও বিলের মাছ বাজারে বেশি আসে।তানোর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল হোসেন বলেন,নদীর পানি কমে যাওয়ায় মাছ এখন সহজে ধরা পড়ছে, যা জেলেদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে সুখবর। তবে দীর্ঘমেয়াদে নদী শুকিয়ে যাওয়া পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। আমরা নিয়মিত জেলেদের পরামর্শ দিচ্ছি যেন তারা অতিরিক্ত মাছ শিকার না করে, যাতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকে। পরিবেশবিদদের মতে, রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের এই বিলকুমারী নদী শুধু একটি জলাধার নয়, এটি স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়স্থল। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে এ নদীর পানি কমে যায়, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নেমে যাচ্ছে। এতে মাছ, জলজ প্রাণী ও আশপাশের কৃষিকাজে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।স্থানীয় পরিবেশকর্মী রফিকুল ইসলাম বলেন,বিলকুমারী নদী বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু সেচের জন্য অতিরিক্ত পানি উত্তোলন ও বৃষ্টির অভাবে নদীটি ধীরে ধীরে মৃতপ্রায় হয়ে পড়ছে।সচেতন মহলের দাবি, নদীর পানিপ্রবাহ টিকিয়ে রাখতে দ্রুত সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। তারা বলছেন, নদী পুনঃখনন, পানির প্রবাহ পুনঃস্থাপন ও মাছের আবাসস্থল সংরক্ষণের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প এখন সময়ের দাবি। তানোর ও আশপাশের মানুষের প্রত্যাশা— যথাযথ উদ্যোগ নিলে একসময় প্রাণ ফিরে পেতে পারে রাজশাহীর এই ঐতিহ্যবাহী বিলকুমারী নদী। না হলে অচিরেই হারিয়ে যেতে পারে বরেন্দ্র অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।