
আনিছুর রহমান নিজস্ব (প্রতিবেদক) চট্টগ্রাম >>> চট্টগ্রাম, শাসনামলের ঔপনিবেশিক স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন, প্রায় ১৩২ বছরের পুরোনো ‘হাতির বাংলো’, যা চট্টগ্রামের বুকে তার অতীত ইতিহাস আর বর্তমানের জরাজীর্ণ অবস্থা নিয়ে টিকে আছে। চট্টগ্রাম শহরের ফুসফুসখ্যাত সিআরবি (সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং) পাহাড়ের ওপর অবস্থিত এই ভবনটি দেখতে অবিকল হাতির আদলে তৈরি, যা দূর থেকে যে কারও মনে হতে পারে একটি বিশাল হাতি শুঁড় তুলে দাঁড়িয়ে আছে।ঐতিহাসিকভাবে, এই বাংলোটির নির্মাণকাল ১৮৯৩ সাল। এটি ব্রিটিশ প্রকৌশলী ব্রাউনজারের অধীনে চট্টগ্রাম থেকে ফেনী পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের সময় রেলওয়ে কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। লোককথা অনুসারে, একসময় এই স্থানে ব্রিটিশদের হাতি প্রশিক্ষণের একটি ঘাঁটি ছিল এবং হাতিদের আনাগোনা এতটাই বেশি ছিল যে স্থানীয়রা এটিকে ‘হাতির বাংলো’ নামে অভিহিত করতে শুরু করে।ভবনটির স্থাপত্যশৈলী ব্রিটিশ ও স্থানীয় শৈলীর এক অপূর্ব মিশ্রণ। এর লাল ইটের দেয়াল, বড় বড় বারান্দা এবং উঁচু ছাদ সেই সময়ের নান্দনিকতার পরিচয় বহন করে। বিশেষ করে, হাতির শুঁড়ের আদলে নির্মিত বারান্দা এবং হাতির চোখের মতো গোলাকার জানালাগুলো এই স্থাপনাকে দিয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা। দু’তলাবিশিষ্ট এই ডুপ্লেক্স ভবনে মোট পাঁচটি শয়নকক্ষ রয়েছে।বর্তমানে এই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি অবহেলা ও অযত্নে পড়ে আছে। কালের বিবর্তনে এর দরজা-জানালা ভেঙে পড়েছে, দেয়ালজুড়ে জমেছে শ্যাওলা এবং পলেস্তারা খসে পড়ছে। বাংলোটি এখন অনেকটা জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় রয়েছে, যা এর সৌন্দর্যকে ম্লান করে দিয়েছে।তবে, আশার কথা হলো, বাংলোটি বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের অধীনে রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই স্থাপনাটির সংস্কার করে এটিকে একটি জাদুঘর হিসেবে রূপান্তরের পরিকল্পনা করছেন। নান্দনিক এই স্থাপত্যকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হলে এটি কেবল একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রই হবে না, বরং চট্টগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক জীবন্ত সাক্ষী হিসেবেও টিকে থাকবে।