
আনোয়ার হোসেন,কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী)প্রতিনিধি >>> গ্রীষ্মকাল মানেই প্রখর রৌদ্রজ্জ্বল আর খরার মাতম। কিন্তু সেই খরার মাঝেও ফুলে ফলে অপরূপ শোভায় সুশোভিত করে গ্রামবাংলার প্রকৃতি সাজাতে গ্রীষ্মের খ্যাতিও কিন্তু কম নয়। তাই তো গ্রীষ্মের হাঁসফাঁস প্রকৃতিতে নাগরিক জীবনে এক পসলা স্বস্তির পরশ বুলাতে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে গ্রামীণ পথ-প্রান্তরে কৃষ্ণচূড়া, জারুল,কাঠবাদাম,ল্যান্টানাসহ নানা চদকদার ফুলের জলসা বসেছে। কী অপরূপ,কী মায়াবি এসব বাহারি ফুলের ছড়াছড়িতে গ্রামীণ প্রকৃতিকে মনোমুগ্ধ করে তুলেছে। মন হরণ করা এসব ফুলে সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে হালকা মিষ্টি গন্ধে সৌরভ ছড়াচ্ছে মাধবী লতা ফুল। অঞ্চলভেদে এ ফুলকে মাধবী, মাধবিকা, মণ্ডপ, কামী, পুষ্পেন্দ্র, অভীষ্টগন্ধক, কামুক নামে ডাকা হলেও এখানকার মানুষের কাছে মাধবী লতা নামে পরিচিত। লতানো পরজীবী এ উদ্ভদি জালের মত শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে লাল,সাদা,গোলাপি রঙের মিশেল করে থোকায় থোকায় ফুটে অনিন্দ্য রুপ সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে বসেছে। এ ফুলের কোমল পাপড়ি ও দৃষ্টিনন্দন বর্ণচ্ছটা গ্রীষ্মের প্রকৃতিকে করে তুলেছ মোহনীয়। নয়নাভিরাম মাধবী ফুলের নৈসর্গিক সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে পথচারীরা থমকে দাঁড়িয়ে মনের প্রশান্তি জুড়ানোর পাশাপাশি মিষ্টি গন্ধের সুভাষ নিচ্ছেন দীর্ঘশ্বাস টেনে। বিমোহিত হচ্ছেন ফুলপ্রেমীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষও। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের পুটিমারী শ্মশান বাজার নামক স্থানে পাগলার মাজারে একটি জিগা প্রজাতির গাছের আপাদ-মস্তক মাধবী লতা ফুল ফুটে স্বর্গীয় রুপ ধারণ করে সেখানকার প্রাণ-প্রকৃতিকে মাতোয়ারা করে তুলেছে। হরেক রঙের মিশেল করা এ ফুলের প্রস্ফুটন এতটাই মোহময় ও দৃষ্টিনন্দন যা চোখ ফেরানো দায়। একটু দৃষ্টি পড়লে যেন ছোবল হানে কাল নাগিনীর মত। রবির কিরণ যখন ফুলের উপর ছড়িয়ে পড়ে তখন ঝাড়বাতির মত ঝলমল আলো অন্যরকম দ্যুতি ছড়ায়। তখন বিমোহত না হয়ে পারা যায় না। পথচারী শিক্ষক আসাদুল ইসলাম বলেন, মাধবী লতার অসংখ্য ফুটন্ত ফুলের অনিন্দ্য সৌন্দর্য নজরকাড়ে সব বয়সী মানুষকে। এ ফুলের স্নিগ্ধ ও মায়াবী রূপ প্রকৃতিকে রাঙিয়ে এখানকার পরিবেশকে মনোরম ও দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে। আসা-যাওয়ার পথে সড়কের পাশে ফোটা এ মাধবী ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছি। আর ফুলগুলো যখন হালকা মিষ্টি গন্ধে সুভাষ ছড়ায় তখন দূষিত পরিবেশ ফিরে পায় নির্মলতার ছোঁয়া। উপজেলার থানা মোড়ের আয়ুর্বেদ চিকিৎসক বেলাল হোসেন বলেন, সৌন্দর্যের পাশাপাশি মাধবী লতার অনেক ভেষজ উপকারিতা রয়েছে। পুরনো বাত সারাতে এর পাতার রস ও হাঁপানি-শ্বাসকষ্টের জন্য পাতা ও ডালের রস উপকারী। মাধবী লতা গাছের শুকনো ছালের গুঁড়ো বিষাক্ত ঘা সারিয়ে তুলতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। কিন্তু আগের মত এখন আর মাধবী লতার দেখা মেলে না। বাসাবাড়িসহ প্রকৃতির সৌন্দর্য রক্ষায় সবাইকে মাধবী লতা রোপন করা দরকার। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, এ ফুলের ছোট্ট পাপড়ি’র সংখ্যা পাঁচটি, মাঝে পরাগ অবস্থিত। বর্ণিল এই ফুলগুলো থেকে মিষ্টি গন্ধ বের হয়। মাধবী লতা সাধারণত বসন্ত ও গ্রীষ্মে ফুল। গোড়া এবং শেকড় থেকে এই গাছের লতা গজায়। কাটিং করে বা লতা কেটে মাটিতে পুঁতলেও চারা হয়। বাসা-বাড়ি,বিনোদন কেন্দ্র,রিসোর্টের প্রবেশ দ্বার,ছাদ,ঘরের চালের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করাসহ কুঞ্জ তৈরিতে মাধুবী লতা ফুলের জুড়ি নেই।এমনকি কবিতা, গল্প, উপন্যাসের প্রেমিক, প্রেমিকা মাধবীলতা নিয়ে কাব্যরসে মনপুড়ে।