পেকুয়া প্রতিনিধি>>> অজানা শংকা ও চরম ঝুঁকি নিয়েও সাদাস্বর্ণ উৎপাদনের উদ্দেশ্যে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা,উজানটিয়া,রাজাখালী ও পেকুয়া সদরের লবণ চাষীরা। চলিত বছরের লক্ষমাত্রা অর্জনে তাদের এ আগাম প্রস্তুতি। লবণ উৎপাদন করে এ অঞ্চলের অর্থনীতিকে সচল রাখে বিধায় লবণচাষীদেরকে সাদা স্বর্ণের কারিগর এবং লবণকে সাদা স্বর্ণ উপাধি দিয়েছে সচেতন মহলেরা।উপজেলার ৪ ইউনিয়নে প্রায় ১৭ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন হয়। চাষীরা লক্ষমাত্রা অর্জনে কাজ করলেও শংকা ও ঝুৃঁকি তাদের পিছু ছাড়ছে না।মাঠপর্যায়ে দালাল চক্রের দৌরাত্ম এবং মিল মালিকদের মূল্য কারসাজিতে ঋনের বোঝা চেপেছে মাতার উপর।এ চরম ঝু্ঁকির মধ্যেও আর এক শংকায় শংকিত মগনামার লবণ চাষীরা।বৃহস্প্রতিবার (২৮নভেম্বর) সরেজমিনে মগনামাসহ অন্যান্য ইউনিয়নের লবণচাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়,রক্তঝরা শ্রমের বিনিময়ে উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য পায় না তারা।দালালের দৌরাত্মে এবং মিল মালিকদের সিন্ডিকেট কারসাজিতে লাভের পরিবর্তে লোকসান ঘাড়ের উপর চেপে বসে।দালালেরা লবণ পরিমাপের সময় ৪০ কেজিতে মণের পরিবর্তে নেন ৬০/৬৫ কেজি। দালালের সাথে পাল্লা দিয়ে মিল মালিকেরা পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই দাম কমিয়ে দেন মণ প্রতি ৮০/৯০ টাকা।লবণ চাষীরা জানান, আমন ও বোরো চাষে কৃষকেরা সরকার থেকে নানাবিধ সুবিধা পেলেও তারা হয় বৈষম্যের শিকার।কৃষকেরা যেমন খাদ্য উৎপাদন করে তেমনি আমরাও খাদ্যের সম্পূরক খাদ্য উৎপাদন করি।কিন্তু আমাদের উৎপাদনের কাজে সরকারের কোন দফতর সহায়তা কিংবা তদারকিও করে না।বিগত সরকার কক্সবাজারে লবণ বোর্ড করার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো বাস্তবায়নের কোন পদক্ষেপ দেখছিনা।চাষীরা দাবী করেন দ্রুত লবণ বোর্ড স্থাপনসহ লবণ চাষের মৌষুম শুরুর সাথে সাথে সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ব্যাংক থেকে ঋন।
মগনামার লবণ চাষী মনছুর আলম জানান,বিগত বছরে দালাল ও মিল মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতায় ঋনের বোঝা কোন রকমে টেনে আসলেও এ বছরে চরম ঝুঁকি নিয়ে চাষে নেমেছি। কক্সবাজার জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন পেকুয়া মগনামা সোনালী বাজার ৬৪ বি পোল্ডার স্লুইস গেইটি গত ৪/৫ বছর যাবত ঝরাজীর্ণ হওয়ার পরও সংষ্কার না হওয়ায় পূর্ণিমার জোয়ারের পানির স্রোতে ধ্বসে পড়েছে। ফলে যেকোন সময় ভেঙ্গে পড়ে পানিতে তলিয়ে যাবে লবণ মাঠসহ বসতবাড়ি।তিলে তিলে উৎপাদিত লবণ পানিতে তলিয়ে যাবে।বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকার কারণে বউ বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হবে।স্থানীয় অর্থনীতিতে পড়বে নেতিবাচক প্রভাব।পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তাদের বারবার তাগাদা দেয়ার পরও তারা কোন প্রকার পদক্ষেপ নিচ্ছে না।আমরা আপনাদের মাধ্যমে স্লুইস গেইটটি সংষ্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও লবণ ব্যবসায়ী এম, কামাল উদ্দিন জানান,কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করি এ লবণ উৎপাদনে।মগনামার সিংহভাগ লবণ মাঠ জমিদারদের। জমিদারদের কাছে অন্ততঃ এক বছর আগে অগ্রিম টাকা দিয়ে ইজারা নিতে হয়।অগ্রিম টাকা দিয়ে জমি নেয়ার পর চাষের প্রস্তুতি মূহুর্তে স্লুইস গেইটি ধ্বসে পড়েছে। কয়েক বছর যাবত পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ঝু্কির কথা জানানোর পরও তারা কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় চরম ঝু্কিতে পতিত হয়েছি। আল্লাহ না করুক এটা ভেঙ্গে গেলে বউ বাচ্চা নিয়ে ভিক্ষা করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই।সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ দ্রুত সময়ে স্লুুইস গেইট নির্মাণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার।পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঈনুল হোসেন চৌধুরী জানান,মগনামার ৬৪ বি পোল্ডার স্লুইস গেইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় ধ্বসে পড়েছে।এটি সংষ্কার করার বিকল্প কোন উপায় নেই বলে জানান কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী।নতুনভাবে স্লুুইস গেইট করার ব্যাপারে ডিসি মহোদয়কে অবহিত করেছি।কক্সবাজার জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’র নির্বাহী প্রকৌশলী অরূপ দত্ত জানান,পেকুয়া উপজেলা মগনামার ৬৪ বি পোল্ডার স্লুইস গেইটটি ধ্বসে পড়ার খবর পেয়ে মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করলে মন্ত্রণালয় হতে পাঠানো প্রতিনিধিকে সাথে করে সরেজমিনে পরিদর্শনে যাই।গিয়ে দেখি এটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় ধ্বসে পড়েছে।আপাততঃ সংষ্কার করার কোন উপায় নেই।দ্রুত সময়ে নতুনভাবে নির্মাণের প্রচেষ্টা চালানো হবে।