
আবদুর রাজ্জাক।।আইনজীবি ছেলের দায়েরকৃত মামলায় মো. হাছান (৭০) নামের এক হতভাগ্য পিতাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের উখিয়ারঘোনা লামারপাড়া গ্রামে। তিনি মৃত হাকিম আলীর ছেলে।বিষয়টি জানাজানি হলে রামুসহ জেলাজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেটিজেনরা।জানা গেছে, ছেলে এডভোকেট আয়াত উল্লাহ হোমিনির দায়েরকৃত মামলায় বুধবার (২০ ডিসেম্বর) কক্সবাজারের অতিরিক্ত জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহমেদ এর আদালতে বাদীর পিতা মো. হাছানসহ ৩ জন স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন জানান। এসময় বিজ্ঞ বিচারক মামলার বাদীর পিতা মো. হাছান, মো. হাছানের চাচী শ্বাশুড়ি রাশেদা বেগম এবং রাশেদা বেগমের ছেলে নুরুল আবছারের জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।গ্রেফতার মো. হাছানের ২য় স্ত্রী রেহেনা বেগম জানিয়েছেন- তার নাবালক ৫ সন্তানের ভবিষ্যতের সুরক্ষায় তার স্বামী সন্তানদের নামে কিছু জমি হেবা করে দেন। এছাড়া পুরনো বাড়ি-ভিটেসহ আরও কিছু জমি প্রথম স্ত্রীর সন্তানদের নামে হেবা করে দেন। একারণে প্রথম স্ত্রী ও তাদের সন্তানরা ২য় স্ত্রীকে ৫ নাবালক সন্তানকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এতে নিরুপায় হয়ে তিনি (২য় স্ত্রী) তার সন্তানদের নামে হেবাকৃত জমিতে বসত বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করেন। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি বাড়ির নির্মাণকাজ শুরুর সময় তাদের উপর হামলা চালান প্রথম স্ত্রীর সন্তান এডভোকেট আয়াত উল্লাহ হোমিনি ও তার ভাই ওমর ফারুক, তৈয়ব উল্লাহ, হাবিব উল্লাহসহ অন্যান্য সহযোগিরা। ওই হামলায় গুরুতর আহত হন মো. হাছানের ২য় স্ত্রী রেহেনা আকতার, ছেলে আনাছ, মেয়ে কানিজ ফাতেমা ও শ্যালক মো. জসিম উদ্দিন।রেহেনা বেগম আরও জানান, এ ঘটনার পর তার স্বামী মো. হাছান রামু থানায় এডভোকেট আয়াত উল্লাহ হোমিনিসহ ৭ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি এখনো রামু থানায় তদন্তাধিন রয়েছেন। তবে এ ঘটনায় তাদের হয়রানি করার লক্ষ্যে এডভোকেট আয়াত উল্লাহ হোমিনি বিজ্ঞ আদালতে উল্টো মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদনের পর জামিন নিতে গেলে বিজ্ঞ আদালত তার স্বামী মো. হাছান, চাচি রাশেদা বেগম ও চাচাতো ভাই নুরুল আবছারকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।তিনি আরও জানান, তাকে এবং তার ছেলে-মেয়ে, ভাইকে নির্মমভাবে কুপিয়ে আহত করে এডভোকেট আয়াত উল্লাহ হোমিনি ও তার সহযোগিরা। এ নিয়ে তিনি থানায় মামলা করলেও এখনো কোন আসামিকে জেলে যেতে হয়নি। অথচ এ নিয়ে প্রতিপেক্ষর দায়ের করা মামলায় উল্টো তিনি (রেহেনা) এবং তার কলেজ পড়ুয়া দুই ছেলে-মেয়ে ও ভাইসহ ৭জনকে জেলে যেতে হয়েছে। এরমধ্যে ৭০ বছর বয়সী তার স্বামীও বাদ পড়লোনা।তিনি আরো বলেন, আইনজীবি হওয়ার সুবাদে এডভোকেট আয়াত উল্লাহ হোমিনি অপকৌশল ও প্রভাব বিস্তার করে ন্যায় বিচার ব্যাহত করে তাদের চরমভাবে হয়রানির করে আসছেন। এ বিষয়ে তিনি বিজ্ঞ আদালতের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।এব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার বাদি এডভোকেট আয়াত উল্লাহ হোমিনি জানান, রামুতে ঘটনা চলাকালে তিনি কক্সবাজার শহরে ছিলেন। হামলায় তার ভাই-বোন গুরুতর আহত হন। তাদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হয় এবং একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের দেয়া তথ্যমতেই তিনি ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। পরবতীতে সিআইডির মামলা তদন্তকারি কর্মকর্তা তদন্তেপ্রাপ্ত নতুন ৩ জনসহ ১২ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (সিএস) দায়ের করেন। আসামিরা জামিন নিতে আসলে বিজ্ঞ আদালত নথি পর্যালোচনা করে তার পিতাসহ ৩ জনকে জেলে পাঠিয়েছে।তিনি আরও জানান, মামলার এজাহারে তিনি পিতার নাম দেননি। কিন্তু পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা তদন্ত ও স্বাক্ষ্য-প্রমাণাদির ভিত্তিতে তার পিতাকে মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত করেন। এমনকি মামলায় জামিন প্রার্থনার সময় বিজ্ঞ বিচারক পিতাকে জামিন দেয়া যাবে কিনা বাদীর কাছে জানতে চাইলে তিনি আদালতকে বলেন জামিন দেয়া না দেয়া বিজ্ঞ আদালতের এখতিয়ার। এ নিয়ে তিনি আর কিছু বলেননি