মিজানুর রহমান বিশেষ প্রতিনিধি ফরিদপুর :
সবর্শ্ব খুয়ায়ে সন্তান পাঠায় ইতালিতে শেষ পর্যন্ত লাশটি ও পায় না স্বজনরা। ফরিদপুর অঞ্চলের লোকেরা তাদের সন্তান ভাই অথবা আপন জনকে লিবিয়ায় হয়ে ইতালিতে পাঠানোর লোভ যেমন সামলাতে পারছেন না, তেমনি আদম ব্যবসায়ী দালাল চক্রও বিদেশে পাঠানোর নামে তাদের মুনফা লুটতেও কৃপনতা করছেনা। সুশীল সমাজের লোকেরা বলছেন, লিবিয়া হয়ে ইতালি গিয়ে সোনার হরিণ ধরার নামে নতুন খাতায় নাম লেখানো লোকগুলো জানে সবলোক ইতালি পৌঁছাতে পারে না। অবৈধ পথে গিয়ে কেউ জেল খাটে। কেউ কেউ লিবিয়ার জলদস্যু এবং মাফিয়া দের হাতে ধরা খেয়ে কেউ জীবন খোয়ায় আবার কাউকে মাফিয়াদের মুক্তি পন গুনতে হয়। তারপরও থামছে না এই মরন ফাঁদের মরন যাত্রা। দীর্ঘদিন যাবৎ এই অঞ্চলে ৪০/৫০ গ্রুপ আদম ব্যবসায়ী দালাল চক্র এই ব্যবসা করে আসছেন। এরা অবৈধ পথে ইউরোপ নেওয়ার লোভ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা লুটে নিয়ে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। পাশাপাশি এই সকল অপরাধীদের সাহস এবং সহযোগিতা করছেন স্হানীয় কতিপয় রাজনীতিবিদ এবং প্রভাবশালী মাতুব্বর চক্র।মাঝে মাঝে থানা পুলিশের একটু জামেলা হলে গ্রামের কোয়াক মাতুব্বর এবং আদম দালালরা কতিপয় থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে মাসিক চুক্তি করে নির্ভয়ে ব্যবসা চালিয়ে যায়। জানাযায়, ফরিদপুর সদরের চর এলাকা,কানাইপুর, তাম্বুল খানা, মুন্সিবাজার, গজারিয়া, সাধিপুর, চরভদ্রাসন উপজেলার চরভদ্রাসন ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল,
সদরপুরের মনি কোঠা, আকটেরচর, আটরশি,বাইশ রশি, নয় রশি, দশহাজার গ্রাম,, ভাঙ্গা উপজেলার পুকুরিয়া, কালামৃধা,চান্দ্রা ইউনিয়নের চান্দ্রাবাজার, পুলিয়া,সূর্যনগর, দওপাড়া, মধুখালি উপজেলায় মেগচামি,সুগার মিল এলাকা, বেলশ্বর,,আড়পারা এলাকা,রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ, পাচুরিয়া, ধনচে, গোয়ালন্দ উপজেলার গোয়ালন্দ মোড়, বসন্তপুর,খানখানাপুর,এলাকার স্বজনরা মানুষ গুলো এবং টাকা ফেরত না পাওয়া পরিবারগুলো যে যার ব্যাথা বেদনায় এবং শোকে বহুজন এখনও কাতর।সন্তানহারা শোকে পাথর হওয়া বাবা – মা ভাই-বোন সবাই এখন সকলেই বকছে আবল- তাবল। যাকে দেখে তাকেই জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন।জানাযায়, শরীয়তপুর কাঁচিকাটা চড়ের কৈতুরি বেগম এখনও কাঁদেন তার একমাত্র সন্তানকে মালয়শিয়ায়ার জেল থেকে আনতে না পেরে। স্হানীয় দালাল আমীর উদ্দিনের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে ইতালি পাঠানোর আশায় বাড়ীর ভিটা বিক্রি করে ৪ লাখ এবং একটি দুধের গাই বিক্রি করা এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকসহ মোট সারে পাঁচ লাখ টাকা দেন তিনি। কিন্ত কোন আশাই পুরন হলো না তার। ৫/৬ মাস হয়ে গেলো সন্তানের ও খবর নিতে পারছেন না। দালালের সাথেও যোগাযোগ করতে পারছে না। গত ৪/৫ দিন আগে জানতে পারেন, তার ছেলে মালয়েশিয়ায় একটি জেলে আটক আছে। কি করে ছেলে কে ফিরিয়ে আনবে উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। কোন একটা মাধ্যম ঢাকার একজন বড় অফিসার ধরছেন তিনি নাকি তাকে কথা দিছে দেশে ফিরিয়ে এনে তার প্রতিষ্ঠান চাকুরি দিবেন। ভুক্তভোগী তাহের ফকির বলেন আগে ছেলে কবির মিয়া (২৫) ফিরে পাই তারপর দালালের নামে মামলা করব। অপরদিকে,সালথা মাঝার দিয়া বাজারে দোকানদার মোঃ বাদল মিয়া স্হানীয় দালাল ছালামের মাধ্যমে তার ছেলেকে লিবিয়া হয়ে ইতালি নিবেন এমন আশায় ৪/৫ লাখ টাকাও দেন তিনি । তিনি এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ড পর্যন্ত গিয়ে আর যেতে পারেনি। সব শেষ জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করে খালি হাতে ফিরে আসল বাড়ীতে। অপরদিকে, লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে ট্রলার ডুবিতে সলিলসমাধি হয় নগরকান্দার কাইচালের ফরুকের ছেলে রব মাতুব্বরের। বিগত এক বছর আগে মারা গেলেও সন্তানের শোকে মা- বাবা এখন ও পাগলের মত চিৎকার করে উঠছে। ফারুক মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি গণমাধ্যম কে বলেন, ভাইজানরা আমরা সব কিছু হারাইছি। জমাজমি বিক্রি করে ৮/৯ লাখ দিছি এটা কোন কষ্ট না। মানুষ বাঁচলে টাকা আছে। কিন্ত সন্তানটা জেলে থাকলেও একদিন ফেরত আসতো।এমন জায়গায় গেছে আর ফিরবে না কোনদিন। গণমাধ্যমের সাথে কথা হয়, স্হায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং থানার ওসির সাথে তারা উভয়েই আন্তরিক হয়ে বললেন,আমরা বিদেশ পাঠানো দালাল আদম ব্যবসায়ীদের বিষয় অনেক কথাই শুনি। ঘটনার সত্যতাও পাওয়া যায়। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ না করলে আইন অচল হয়ে যায়। এদিকে ফরিদপুর সদরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের ৯ রশি এলাকার দশহাজার গ্রামের ২০/২৫ জন আদম ব্যবসায়ী পুরো এলাকা জিম্মি করে ফেলছে। তারা লিবিয়া থেকে ইতালিতে নেওয়ার নাম করে ২০/২৫ লাখ করে টাকা নিয়ে এলাকার নিরিহ মানুষকে পথের ফকির বানিয়ে তুলছেন। ফরিদপুর সদর থানার ফল ও মাছ ব্যবসায়ী মোঃ ইসমাইল৷ মিয়া ১০ লাখ দিয়ে লিবিয়া হতে ইতালি পাঠান।মাফিয়াদের হাতে আটক হলে মুক্তিপন দিয়ে সন্তান ফেরত আনতে ফের আরও ৪ লাখ টাকা নিল দালাল।। স্হানীয় লোকজন জানান নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের কৃষ্টনগর গ্নামের মানবপাচারকারী প্রধান দালাল মুরাদ এর খপ্পরে পরে সাগরে প্রাণ হারিয়ে নিখোঁজ রয়েছে ৩০ জনের বেশি। লিবিয়া বসেই ইতালিতে মানুষ পাঠান মুরাদ।মুরাদের সহযোগী হিসাবে কাজ করতেন একই এলাকার পলাশ নামে এক দালাল।দালাল চক্র ক্ষমতাশালী হওয়ায় ভুক্তভোগীরা ন্যায় বিচার পাইতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান।
মন্তব্য