আনোয়ার হোসেন-কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ>>>
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে রিমঝিম বর্ষায় মনোহর সোভা ও সৌরভ ছড়াচ্ছে চালতা ফুল।সবুজের মূর্ছনায় পাপড়ির শুভ্রতা,হলুদ পরাগ,তারকাবৃত্তির গর্ভদন্ড সব মিলে চালতা ফুলের মোহনীয় রুপ প্রকৃতিজুড়ে ঝিলিক তুলেছে। এতে মুগ্ধ হয়ে পড়েছে সৌন্দর্য পিপাসুরাও।কদমের পড়ে বর্ষাকে চেনা যায় চালতা ফুলে।তবে অবহেলায় বেড়ে ওঠা গাছের রোমাঞ্চকর ফুলের দিকে ক’জনই বা তাকায়?প্রকৃতির আলাদা গড়ন আর কারুকাজ খচিত এ ফুলের খোঁজ নিয়ে দেখেন,আপনি তো দুরে থাক,পাষান মানুষেরও হৃদয়-মন হরণ করে নেয়!ক্ষণিকের জন্য হলেও বুঁধ হয়ে যাবেন।ভোতা অনুভূতি গুলো চাঙ্গা হয়ে উঠবে নিমিষেই।তাইতো এ ফুলে মুগ্ধ হয়ে প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ সেই দিন এই মাঠ কবিতায় লিখেছেন,আমি চ’লে যাব ব’লে/চালতা ফুল কি আর ভিজিবে না শিশিরের জলে…। না,কবি বেঁচে নেই আর।তবে শিশিরের জলে ভিজে চালতা ফুলের গন্ধের ঢেউ আজও প্রবাহিত যা অনন্তকালব্যাপী।একই রকম মুগ্ধতা নিয়ে বিষ্ণু দে লিখেছিলেন,আকাশ নীলের তারাখচা পথে বৃষ্টি পড়ে/চালতা ফুলে ফলের বাগান মদির করে…। না, শুধু কবিদের নয়।সৌন্দর্য পিপাসুদের এ ফুল যুগ যুগ ধরে বিমোহিত করে রেখেছে।এ মুগ্ধতা করা চালতা ফুল একটা সময় গ্রামীণ জনপদে হরহামেশাই চোখে পড়ত।এখন কমতে শুরু করেছে।এরই মাঝে রোববার বাহাগিলী ইউপির উত্তর দুরাকুটি হাড়িবেচা পাড়ার গ্রামীণ সড়কের ধারে দাড়িয়ে থাকা গাছে চালতা ফুলের উদাস করা অনিন্দ্য রূপ ধরা পড়ে ক্যামেরায়।এসময় দেখা যায়,ফুলের যেমন অনিন্দ্য রূপ,তেমনি পাতার কারুকাজ বিস্ময়কর।খাঁজ কাটা আউটলাইন।উঁচু শিরা।করাতের দাঁদের মতো দেখতে। প্রকৃতি যেন তার আপন খেয়ালে কাঁচি দিয়ে কেটে নান্দনিক নক্সা একেঁছেন।এমন দূশ্য তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে বার বার।তখন মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না।সবুজ ডিম্বাকৃতির মত ফল ধিরে ধিরে প্রস্ফুটিত হয়।বাইরে সবুজ পাঁচটি মাংসল পাপড়ি দ্বারা বেষ্টিত।এর নিচে সাদা ধবধবে পাঁচটি পাপড়ি পেখম খুলে গোলাকার আকৃতি ধারন করে।এর ভিতর অংশ জুড়ে চাকতির মতো গোলাকার কাঁচা হলুদে ভরা অসংখ্য পুংকেশর।এ পুংরুষকেশরের উপরে তারকাকৃতির মতো সাজানো। ফুল খুবই ক্ষণস্থায়ী।ভোর বেলায় ফুল ফোটে সন্ধ্যায় ফুলের পাপড়ি ঝরে পড়ে।ফুল থেকে ফল হয়।এ ফুলের সৌন্দর্যের কথা লিখনিতে যেমন শেষ করা যায়না।তেমনি বহুবিধ ঔষধী ও পুষ্টিগুনে ভরপুর।বাংলার রমণীদের কাছে চালতার আচার-চাটনিসহ নিরামিষভোজী বিভিন্নপাতে এর কদর সর্বাগ্রে।ফল,পাতা,মূলে মিলছে মানবদেহের বহুরোগ নিরাময় ক্যালসিয়াম,ফসফরাস, আয়রন,ভিটামিন এ,বি,সিতে পরিপূর্ণ।ভিটামিন সি-এর পর্যাপ্ততার জন্য এটি টক স্বাদযুক্ত।পাকা চালতা টকমিষ্টি।চালতা স্কার্ভি ও কিডনি,লিভারের রোগ প্রতিরোধ করে।এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান জরায়ু ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করে এবং বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করে।রক্ত আমাশয়ে গাছের কচি টাটকা পাতা বেটে তার রস এক কাপ ঠাণ্ডা পানিতে মিশিয়ে দিনে দুবার খেলে উপশম হয়।মচকে গিয়ে ব্যথা পেলে সেখানে চালতা গাছের মূল ও পাতা পিষে প্রলেপ দিলে ব্যথা কমে যায়।জানা যায়,চালতার বৈজ্ঞানিক নাম উরষষবহরধ রহফরপধ।ফল এশীয় হাতিদের অতি প্রিয়।তাই এর ইংরেজি নাম ঊষবঢ়যধহঃ ধঢ়ঢ়ষব।বাংলাদেশ, নেপাল,আসাম,সিংহল ও মালয়ে চালতা জন্মায়।চালতা মাঝারি আকারের চিরহরিৎ জাতীয় বৃক্ষ।গাছ ১৫-২০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় হয়। চালতা গাছ লাভজনক না হলেও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় ও শোভা বর্ধনে আমরা প্রত্যেকে একটি করে বাড়ির আঙিনায় গাছ লাখাই।পুষ্টিগুণ বুঝে বছরে একবার বিভিন্ন রিসিপির মাধ্যমে চালতা ফল খাই।পার্শপ্রতিক্রিয়া চিকিৎসা থেকে দুরে থাকি।ভেষজ চালতায় চির রোগমুক্ত জীবন গড়ি।
মন্তব্য