মোঃ সোহেল রানা, বান্দরবান প্রতিনিধি >>> পার্বত্য জেলা বান্দরবানে টানা দু’দিনের ভারী বর্ষণ এখনো অব্যাহত রয়েছে। থেমে থেমে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিপাতে পাহাড়ি জনপদে দেখা দিয়েছে বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন জেলার সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত পরিবারগুলো।গত ২৯ মে দিবাগত রাত থেকে ৩০ মে সকাল ১১টা পর্যন্ত জেলায় ২২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বান্দরবান পৌর এলাকার বনরূপা, হাফেজঘোনা, মেম্বারপাড়া সহ বিভিন্ন নিচু এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে এবং সড়ক দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে স্থানীয়দের চলাচলে দুর্ভোগ নেমে এসেছে।এছাড়া টানা বৃষ্টির কারণে বান্দরবান-রুমা সড়কের মুরুং বাজার ও খুমী পাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে সড়কে মাটি পড়ে যাওয়ায় রুমার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলার অন্যান্য এলাকাতেও পাহাড় ধসের কারণে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।প্রশাসনের প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় বান্দরবান জেলা প্রশাসন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জেলার সাতটি উপজেলায় মোট ২২০টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যার মধ্যে—বান্দরবান সদর: ৪৬টি রুমা: ২৮টি রোয়াংছড়ি: ১৯টি থানচি: ১৫টি লামা: ৫৫টি আলীকদম: ১৫টি নাইক্ষ্যংছড়ি: ৪২টি জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি জানিয়েছেন, দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে জেলার প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। তারা সরেজমিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।সচেতনতা কার্যক্রম ও উদ্ধার প্রস্তুতি জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বান্দরবান পৌরসভা এবং ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকাগুলোতে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে।ফায়ার সার্ভিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় ও অতিবৃষ্টিজনিত দুর্যোগ মোকাবেলায় ৩০ মে সকাল ৮:৩০ থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ফায়ার স্টেশনগুলো প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজনে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে পরিস্থিতি ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ ও তথ্য আদান-প্রদানের জন্য বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং একজন সহকারী কমিশনারের তত্ত্বাবধানে এ কন্ট্রোল রুম পরিচালিত হচ্ছে।জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনাতন কুমার মন্ডল জানান, টানা ভারী বর্ষণের কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং পাহাড়ধসের ঝুঁকিও বেড়েছে।জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি সবাইকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন এবং দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করা হচ্ছে।[বিশেষ অনুরোধ]কোনো ব্যক্তি বা পরিবার যদি আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে না পারেন বা জরুরি সহায়তা প্রয়োজন হয়, তাহলে নিকটস্থ প্রশাসনিক কার্যালয়ে যোগাযোগ করুন অথবা জেলা কন্ট্রোল রুমে ফোন দিন।
মন্তব্য