আবদুর রাজ্জাক, জেলা প্রতিনিধি,কক্সবাজার।।কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী উপজেলা রামুর গর্জনিয়া বাজার সংশ্লিষ্ট পশুর হাটে এখন চোরাচালানের গরু মহিষে সয়লাব হয়ে আছে। সপ্তাহের দুই বাজার সহ প্রতি মাসে কমপক্ষে ৮/১০ হাজার চোরাচালানের গরু এই বাজার থেকে বিক্রি হয়। সাবেক এমপি কমলের নেতৃত্বে এই বাজারে রয়েছে শক্তিশালী চোরাচালান সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিনের পুরোনো চোরাচালান সিন্ডিকেটটি এখনও বহাল থাকায় বাজারে সিংহভাগই চোরাই পথে আসা গরু মহিষের বেচাবিক্রি হয়ে থাকে। নিজেদের খামারী পরিচয় দিলেও এরা মূলত গরু চোরাচালান চক্রের একেকজন সদস্য। চক্রটি এখনও নির্বিঘ্নে গরু চোরাচালানের মাধ্যমে সপ্তাহের দুই বাজার থেকে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা করে পাঠিয়ে দেন সাবেক এমপি কমলের কাছে।জানা যায়- পলাতক আওয়ামীলীগ নেতা কক্সবাজার ৩ আসনের সাবেক এমপি কমল ৫ আগস্টের পর থেকে পালিয়ে গেলেও উক্ত চোরাচালান সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছে তারই বিশ্বস্ত প্রতিনিধি নজরুল ও কচ্চপিয়ার চেয়ারম্যান নোমান। তারা মায়ানমার থেকে প্রতি সপ্তাহে হাজার হাজার গরু মহিষ এই বাজারে প্রবেশ করান। অন্যদিকে বাজার ইজারাদার ও কে এম এগ্রোর মালিক রহিম উদ্দিন প্রকাশ সিঙ্গার রহিম এসব গরু মহিষের রশিদ প্রদান করে সিন্ডিকেটকে জোরালো ভাবে সহায়তা দিয়ে আসছেন।এছাড়াও মানা হচ্ছে না বাজার ইজারা নীতিমালা। বাজারে টানানো হয়নি কোনো রেইট চার্ট। বিভিন্ন সময় সরেজমিন গিয়ে এটি লক্ষ্য করা গেছে।সোনাইছড়ি, চাকঢালা, মৌলভী কাটা, হাজীর পাড়া, জামছড়ি, কেঁয়াজুর বিল এবং নাইক্ষ্যংছড়ি লেকের লাইটের গোড়া হয়ে রামুর গর্জনিয়া বাজারে আসে চোরাচালানের এসব গরু মহিষ। এখান থেকে ইজারাদার কর্তৃপক্ষ রশিদ প্রদানের মাধ্যমে সারাদেশে চোরাচালানের এসব গরু মহিষ প্রবেশের বৈধতা দিয়ে দেন।অনুসন্ধানে আরও জানা যায়- চোরাই গরু-মহিষের কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত রয়েছে খামারী পরিচয়ী কচ্চপিয়া হাজীপাড়ার নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী, গর্জনিয়া হাইস্কুল পাড়ার আমান উল্লাহ, জাফর আলম, হাজীর পাড়ার আবু ঈসা, বড়জামছড়ির আব্দুল্লাহ, ছুরুত আলী, শামসুল আলম, আব্দুল খালেক ও আব্দুস সালাম সহ আরও বেশ কয়েকজন। এদের মধ্যে নজরুল, আলী এবং আমান উল্লাহর ব্যাপারে বড় ধরণের মাদক পাচার ও বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ এবং গরু-মহিষের অবৈধ চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।জানা যায়- এই অবৈধ গরু পাচারকে ঘিরে গত কয়েক মাসে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। বিজিবির সঙ্গে চোরা কারবারিদের গোলাগুলিতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। কিন্তু চোরাচালান বন্ধ করতে পারছে না সরকারি সংস্থাগুলো।বাজারের ইজারাদার ইউপি সদস্য শাকিল প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেন- এই বাজারে প্রায় সব গরু মহিষই মায়ানমারের। এগুলো চোরাচালানের মাধ্যমেই এসেছে। আর এখানে যেভাবে চোরাচালানের পশু সস্তায় পাওয়া যায় ফলে খামারীরা গরু উৎপাদন করার কোনো যৌক্তিকতাই থাকে না।নাম প্রকাশ না করে একাধিক স্থানীয় নাগরিক জানান- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তিরা এসব গরু চোরাচালান সিন্ডিকেটের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকেন। ফলে খামারীরা এখন পথে বসেছে এবং ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বাধ্য হয়ে গরু মহিষ চোরাচালানের ব্যবসায় ঝুঁকেছে কেউ কেউ। তবে ইউপি চেয়ারম্যান আবু নোমানের ভাতিজা নজরুল এই অঞ্চলের শীর্ষ চোরাকারবারী এবং মাদক ব্যবসায়ী। তার নেতৃত্বেই এই সীমান্তে অবৈধ চোরাচালান বাণিজ্য নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।এব্যাপারে কচ্ছপিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান আবু নোমান জানান- চোরাচালানের গরু বাজারে ঢুকছে এটা সত্য। কিন্ত প্রশাসন যদি সীমান্তে চোরাচালান না ঠেকায় তাহলে এর দায় কে নিবে। স্থানীয় সাবেক এমপি কমলও বিষয়টি জানতেন বলে দাবী করেন এই ইউপি চেয়ারম্যান।গর্জনিয়া বাজার ইজারাদার ও কেএম এগ্রোর মালিক রহিম উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি পশু চোরাকারবারীদের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন- আমার এখানে কোনো চোরাকারবারী নেই। যারা আছে সবাই খামারী। এছাড়াও সীমান্তবর্তী এলাকা হিসেবে কেউ যদি চোরাচালানের পশু খামারের বলে বিক্রি করতে আসে এতে আমার কিছুই করার নাই। এসব দেখার জন্য আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী আছে। তারা দেখবে।এব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন জানান- বিষয়টি নজরে এসেছে। খোঁজ নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য