মোঃ আরাফাত তালুকদার জেলা প্রতিনিধি পটুয়াখালী।>>>
শাশুড়ি ও স্বামী মিলে মিমকে পুড়িয়ে হত্যা করতে চান, এমন একটি ঘটনা সাজাতেই চাচাতো বোনের স্বামীর সহযোগিতায় নিজের হাত-পা বেঁধে ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটান হালিমা আক্তার মিম। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পরিকল্পনার ছন্দপতন ঘটে। মারাত্মক অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।মিমের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেন মিমের চাচাতো বোনের স্বামী আরিফ হোসেন সিকদার। মঙ্গলবার (১৩ জুন) সকালে পটুয়াখালী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে মিম হত্যাকাণ্ডের সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে এমন তথ্যই জানান।এর আগে রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে পুলিশ মো. আরিফ হোসেন সিকদারকে (৩০) আটক করে। সোমবার আরিফ হোসেন সিকদার পটুয়াখালী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।আরিফ দুমকি উপজেলার লেবুখালী ইউনিয়নের কার্তিকপাশা গ্রামের হামেদ সিকদারের ছেলে।পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিনের পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে নিজের শাশুড়ি ও স্বামীকে উচিতশিক্ষ দিতেই চাচতো বোনের স্বামীকে নিয়ে পরিকল্পনা করেন হালিমা আক্তার মিম। সে অনুযায়ী আগে থেকেই আরিফ হোসেন সিকদারের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। ঘটনার দিন সকালে আরিফ ঢাকা থেকে দুমকি আসেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘরের মধ্যে কেরোসিন দিয়ে মিমের হাত-পা বেঁধে দেওয়া হয়। মিম ঘরের এক কোণে মশারিতে আগুন দিয়ে আরিফকে ঘরের বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে চলে যেতে বলেন।মিমের পরিকল্পানা অনুযায়ী সবকিছু এগুচ্ছিল। তবে পরিকল্পনা ছিল আগুন গায়ে লাগার আগেই মিম ডাক-চিৎকার দিলে আশপাশের মানুষ তাকে উদ্ধার করবে। কিন্তু আশপাশের মানুষ আসতে দেরি করায় আগুনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে মিম অনেক বেশি অগ্নিদগ্ধ হন।অপরদিকে মিমের শিশু সন্তানটি যাতে নিরাপদ থাকে সে কারণে ঘরের সামনের খাটে ছয় মাসের সন্তানকে রাখা হয়। মিমকে যখন প্রতিবেশীরা উদ্ধার করে সেসময়ও মিম তার পরিকল্পা অনুযায়ী বলছিলেন একজন মহিলা বোরকা পরা এবং একজন পুরুষ তার শরীরে কেরোসিন দিয়ে আগুন দিয়েছে।মিমের পরিকল্পনা ছিল তার শাশুড়ি এবং স্বামী তাকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে চাচ্ছে এমন একটি বিষয় প্রমাণ করবেন। সে কারণেই ঘটনার পর তার শাশুড়ি একমাত্র শত্রু বলেও বক্তব্য দেন। ওই ঘটনার পরপরই মিমের শাশুড়িকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলা সাতানী গ্রামের বাসিন্দা প্রিন্স ও সুমি আক্তার দম্পতি উপজেলা সদরের শাহজাহান দারোগার বাসায় ভাড়া থাকতেন। গত ৮ জুন দুপুরে মুখোশধারী দুই দুর্বৃত্ত হঠাৎ ঘরে ঢুকে গৃহবধূ সুমির হাত-পা বেঁধে শরীরে আগুন ধরিয়ে ঘরের বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যায় বলে দাবি করেছিলেন হালিমা আক্তর মিম। এ সময় মিমের চিৎকার শুনে আশপাশের বাসিন্দারা এগিয়ে এসে মিমকে উদ্ধার করে। মিমকে প্রথমে বরিশাল এবং পরে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বিকেলে মিমের মৃত্যু হয়।
মন্তব্য