এস আর,সোহেল রানা,তানোর রাজশাহী>>>>
প্রতিনিধি:রাজশাহীর তানোরে একদিকে রোপা আমনের বীজ বপন শুরু হয়েছে, অপর দিকে আলুর জমিতে পুরোদমে চলছে ধান কাটা মাড়ায়। ধানের বাম্পার ফলন হলেও দাম নিয়ে হতাশায় ভূগছেন কৃষকরা। প্রচন্ড খরতাপ থাকার পরও কোন কিছুই তোয়াক্কা না করে পুরোদমে চলছে ধান কাটা ও মাড়ায়ের কাজ। বিগত সময়ে আলুর জমির শুকনো ধান খড় কৃষকের ভাগ্যে জুটেনি। কিন্তু এবার ধান খড় শুকনো পাচ্ছেন কৃষকরা। এতে করে কৃষকদের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করছে। কারন এক বিঘায় নিম্মে হলেও ২০ মন ধান ফলন হচ্ছে। একমন ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। কিন্তু প্রতিদিন সিন্ডিকেটে কমছে একারনে এক প্রকার চিন্তিত কৃষকরা। বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে জমি থেকে শ্রমিকরা ধান বহম করে রাখছেন কামারগাঁ ইউপির পাড়িশো মোড়ে। সেখানে ছিলেন কৃষক দূর্গাপুর গ্রামের মমিন নামের একজন। তিনি জানান, আবহাওয়া অনুকুলে থাকার কারনে ধানে কোন প্রকার রোগবালাই ছিল না। আলু তোলার পর ১০ বিঘা জমিতে ৭৬ জাতের ধান লাগিয়েছিলাম। পুরোটাই কাটা হয়ে গেছে। জমি থেকে মোড়ে আনা হচ্ছে। সেখান থেকে ট্রলি বা মোটা চাকার চার্জার ভ্যানে বাড়ির খৈলানে নেওয়া হবে। তবে ধানের এতই ভালো অবস্থা বিঘায় ২০ মন ফলন পার হয়ে যাবে। নিজের জমি, বর্তমান বাজার ১০১০-১০২০ টাকা করে। এমন দাম থাকলে বিঘায় ৩-৪ হাজার টাকা লাভ হবে এবং শুকনো খড় পাওয়া যাচ্ছে। মোড়েই ময়েজ নামের আরেক কৃষকের ধান শ্রমিকরা গাড়ীতে তুলছিলেন, তিনি জানান নিজের ৪ বিঘা জমিতে আলু তুলে ধান লাগিয়েছিলাম। শুকনো ধান খড় তুলতে পেরেছি, ফলন ভালো হবে। মতিন নামের আরেক কৃষক জানান ৭ বিঘা জমির ধান কাটা শেষ, কিছু বহন করে আনা হয়েছে, আর জমিতে রয়েছে শুক্রবারে পুরোটাই উঠে আসবে। আমাদের এলাকায় যারাই মাড়ায় করেছেন বিঘায় ২০ মন বা তার উপর ফলন হয়েছে।ভারে করে ধান বহন করছেন চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ কানসাট এলাকার শ্রমিক আলম, নুরুল। তারা জানান আমরা ১২ জন শ্রমিক ধান কাটছি। বিঘায় চার মন ধানের চুক্তি। তবে প্রচুর গরমের কারনে দিনে চার বিঘা জমির ধান কাটতে পারছি, গরম না হলে আট বিঘা জমির ধান কাটা যেত।
এছাড়াও রোপা আমন রোপনের জন্য বীজ বহন শুরু হয়ে গেছে।গত বৃহস্পতিবার বীজ বপনের সময় বিহারইল মাঠে কথা হয় মাদারিপুর গ্রামের কৃষক সুফিয়ানের সাথে। তিনি জানান ১০ শতাংশের কিছু বেশি জমিতে স্বর্না জাতের ৪৫ কেজি বীজ বপন করছি। ৪৫ কেজি বীজ ভালো হলে ১০ বিঘা জমি রোপন করা যাবে। আমরা একটু আগাম বীজ বপন ও চাষ করে থাকি। তিনি আরো জানান বিঘায় ৪ কেজি বীজ লাগে। এক বিঘা জমিতে বীজ তৈরি থেকে উত্তোলন পর্যন্ত ৬-৭ হাজার টাকা খরচ হয়।ওহিদুল নামের আরেক কৃষক সাড়ে তিন মন বীজ বপন করেছেন।সুফিয়ান, আব্দুল সহ একাধিক কৃষকরা জানান, এক মন বীজের ধান কিনতে হচ্ছে ১৭০০-১৮০০ টাকা দিয়ে। অথচ একমন ধান বিক্রি হচ্ছে ১হাজার টাকায়। কৃষক যাবে কোথায়, কেজি প্রতি সারের দাম ৫ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। আবার পটাশ সার ১২০০-১৩০০ টাকা ছাড়া মিলছে না। সব দিক থেকে মরছে কৃষক। কিভাবে একজন প্রান্তিক কৃষক পথে বসবে সেটাই করা হচ্ছে।উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, আরো এক সপ্তাহ বোরো ধান কাটা চলবে। তারপর থেকে যেটা কাটা হবে সেটা আউশ হিসেবে ধরা হবে। রোপা আমনের লক্ষমাত্রা ২২ হাজার ৪০০ হেক্টর। সে মোতাবেক ১১২০ হেক্টর জমিতে বীজের লক্ষমাত্রা, সে অনুপাতে ৮০০ মে:টন বীজের প্রয়োজন। তবে খরতাপের কারনে অবশ্য শ্রমিকদের মারাত্মক কষ্ট হলেও কৃষকরা শুকনো ঝরঝরে ধান ঘরে তুলতে পারছেন। এবার বোরোতে বাম্পার ফলন হয়েছে, তবে ফড়িয়া সিন্ডিকেটের কারনে দাম কমছে, সে বিষয়ে বিপনন বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে হাট বাজার, আড়ত ও চাতালে অভিযান পরিচালনা করবেন।
মন্তব্য