চট্টগ্রাম আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ
নগরীর চেরাগীর মোড় ও আন্দরকিল্লা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে সাংবাদিক ও পুলিশসহ ৭ জন আহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ১৬ জনকে আটক করে। আটককৃতদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইমন, বাকলিয়া সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র আজমাঈন করিম নিহাল, গাছবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী জুলহাজ হোসেন এবং চট্টগ্রাম আইন কলেজের শিক্ষার্থী মো. নজরুল। তাৎক্ষণিকভাবে বাকিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। গতকাল সোমবার বিকাল ৩টায় নগরীর জামালখান প্রেস ক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশের চেষ্টা করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় তা ভেস্তে যায়। ব্যর্থ হয়ে তারা চেরাগী পাহাড় মোড় এলাকায় পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ–পুলিশ কমিশনার (এডিসি) কাজী মো. তারেক আজিজ আজাদীকে বলেন, নগরীর জামালখান ও চেরাগী মোড় থেকে কোতোয়ালী থানা পুলিশ ১৬ জনকে আটক করেছে। আমাদের এসি কোতোয়ালীসহ ৪ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হবে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক রোববার ভিডিও বার্তায় চলমান আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। জোর করে সেই বিবৃতি দেওয়ানো হয়েছে–এমন অভিযোগ তুলে গতকাল বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন আন্দোলনকারীদের একটি অংশ। এই কর্মসূচির বিষয়ে সকাল থেকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারও চালানো হয়। কর্মসূচি ঘোষণার পর সকাল থেকে নগরজুড়ে ছিল কড়া পুলিশি নিরাপত্তা। বিভিন্ন স্থানে বসানো হয় তল্লাশি চৌকি। দুপুরের পর থেকে জামালখান এলাকায় জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীদের বাসায় ফিরে যেতে অনুরোধ করতে থাকে পুলিশ। আর প্রেস ক্লাব চত্বরে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নেন। সেখান থেকে এক আন্দোলনকারীকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।
আন্দোলনকারীরা প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে না পেরে চেরাগী মোড়ে খণ্ড খণ্ডভাবে এসে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সমর্থনে নগরীর চেরাগী মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জামালখান ঘুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে কয়েক মিনিট অবস্থান করে পুনরায় চেরাগী পাহাড়ের দিকে চলে যায়। সেখানে রাস্তার পাশে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান করে। এ সময় পুলিশ দুজনকে আটক করে প্রিজন ভ্যানে তুলতে চাইলে বিক্ষোভকারীরা বাধা দেন। তারা প্রিজন ভ্যানের সামনে সড়কের উপর বসে পড়েন। তবে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাদের নিয়ে যায়। আন্দোলনকারীরা কদম মোবারম শাহী জামে মসজিদের সামনে বিকেল ৪টার পর সড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকেন। এভাবে ১৫ মিনিট বসে থাকার পর পুলিশ দুটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিক্ষোভকারীরা জানান, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপের পর বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এরপর পুলিশ লাঠিপেটা করে সবাইকে সরিয়ে দেয়। এ সময় সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণে কোতোয়ালী থানার এসআই মোশাররফ হোসেন চোখে আঘাত পান। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া একই সময় সিএমপির কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার অতনু চক্রবর্তীসহ একাধিক সদস্য আহত হয়েছেন। পরে ধাওয়া দিলে বিক্ষোভকারীরা জেএম সেন হল হয়ে কুসুমকুমারী স্কুলের সামনে দিয়ে গণি বেকারি এলাকার দিকে চলে যান।
বিকাল ৫টার দিকে আন্দরকিল্লায় একদল বিক্ষোভকারীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দুই সাংবাদিক আহত হন। তারা হলেন দৈনিক দেশ রূপান্তরের ফটো সাংবাদিক আকমল হোসেন ও নিউজ ২৪–এর ক্যামেরাপারসন মো. আবু জাবেদ।
মন্তব্য